ট্রেনের সেবা পেয়ে খুশি উত্তরাঞ্চলের মানুষ
দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদীবাড়ী রেলপথে চলবে যাত্রীবাহী মিতালী এক্সপ্রেস। ১৯৬৫সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তুলে ফেলা হয় গুরুত্বপূর্ণ এই রেলপথটি।
পরে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারের আগ্রহ আর সম্প্রীতিতে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় রেলপথটি। রেলপথটি উদ্বোধনের পর পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করলেও করোনাভাইরাস আর ইমিগ্রেশন জটিলতায় চলেনি যাত্রীবাহী ট্রেন।
সকল ধকল কাটিয়ে ১ জুন বুধবার চালু হতে যাচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেন। ট্রেনটি চালু হলেই ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সরাসরি যাত্রা করা যাবে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। দীর্ঘ ৫৮ বছর পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথটিতে যাত্রীবাহী ট্রেন সচল হওয়ায় আনন্দিত স্থানীয়রা।
তবে দ্রুত ইমিগ্রেশন জটিলতা দূর করে উত্তর অঞ্চলের মানুষের সুবিধার্থে চিলাহাটি স্টেশন থেকে যাত্রী উঠানামার দাবি স্থানীয়দের।
৫৫ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর পণ্যবাহী ট্রেন ও ২০২১ সালের ২৭মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এরপর থেকে মালবাহী ট্রেন চলাচল করলেও করোনা ভাইরাস ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় থমকে যায় যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল।
জানা যায়, বুধবার রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ভারতে গিয়ে আবারও উদ্বোধন করবেন যাত্রীবাহী ট্রেন। দুদেশের সিদ্ধান্তক্রমে সপ্তাহে দুদিন চলবে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন। ভারত থেকে ছাড়বে রবি ও বুধবার আর বাংলাদেশ থেকে সোম ও বৃহস্পতিবার।
রেলওয়ে সূত্র জানা গেছে, মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য নতুন করে ভাড়ার নির্ধারণ করেছে দুই দেশের রেলওয়ে বিভাগ। চার হাজার ৯০৫টাকা এসি বার্থ, তিন হাজার ৮০৫টাকা এসি সিট আর দুই হাজার ৭০৫ টাকা এসি চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রেনের উপার্জিত আয় দুদেশের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভাগভাগি করে নেবে। বাংলাদেশের রেলওয়ে বিভাগ আয়ের ৮০ শতাংশ আর ২০ শতাংশ পাবে ভারতীয় রেলওয়ে বিভাগ।
পহেলা জুন দুপুর ১২.১০মিনিটে নিউজলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন। চিলাহাটিতে এসে ট্রেনটি ৩০মিনিট যাত্রা বিরতি পর ঢাকা ক্যান্টনম্যান্টে পৌঁছবে রাত ১০.৩০মিনিটে। পরের দিন সোমবার মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা সেনানিবাস ষ্টেশন থেকে রাত ৯.৫০মি: ছেড়ে যাবে ভারতের নিউজলপাইগুড়ি। সেখানে পৌঁছবে সকাল ৭.৫মিনিটে। ট্রেনটি দিনের বেলায় ৪৫৬ আসন ও রাতে ৪০৮ আসন নিয়ে চলাচল করবে। ঢাকা থেকে ভারতের নিউজলপাইগুড়ির দূরত্ব ৫৯৫ কি.মি। এর মধ্যে ভারতের অংশে ৬৯ কি.মি.।
এই ট্রেনে থাকছে ১০টি তাপানুকুল কোচ। এর মধ্যে চারটি করে আটটি এসি ফাস্টক্লাস ও এসি চেয়ার কোচ। বাকি দুইটি জেনারেটর ও ব্রেকআপ ভ্যান থাকবে। পাঁচ বছর পর্যন্ত অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য মূল ভাড়ার ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং পাঁচ বছরের কমবয়সী যাত্রীর ক্ষেত্রে ২০ কেজি ওজনের মালামাল বহন করতে পারবেন। ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে বাংলাদেশ অংশে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং ভারতের কলকাতার ফেয়ারলী প্যালেস ও নিউজলপাইগুড়ি ষ্টেশনে।
চিলাহাটি ডাক বাংলো সড়ক এলাকার মোহাব্বদ হোসেন বাবু জানান, নীলফামারীর চিলাহাটি রেলষ্টেশনে ইমিগ্রেশন সিষ্টেম না থাকায় এই এলাকার মানুষ ভারতে যেতে পারবে না। তাদের ভারতে যেতে হলে ঢাকা থেকে ইমিগ্রেশন করে আসতে হবে। এতে আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হবে। আমাদের দাবি এখানে যতো দ্রুত ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থা চালু করার।
কামার পাড়া গ্রামেরর মৃত. জাকারিয়া বুসনিয়ার ছেলে রাসেল বসুনিয়া জানান, আমরা শারীরিক চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করি ভারতে। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হলে চিলাহাটি দিয়ে ভারত চলাচলে আমাদের অনেক সুবিধা হবে। কিন্তু এখানে দুইটি বগি দেওয়া হয়েছে। ওই দুটি বগিতে চলাচল করবে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। এতো কম সংখ্যক আসন দেয়াতে আমাদের আসন পেতে ভোগান্তি পোহাতে হবে। তাই মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
ডোমার উপজেলা কলেজ পাড়া গ্রামের জেনারুল ইসলামের মেয়ে জান্নাত আক্তার জ্যামি বলেন, মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হলে ভারতের দর্শনীয় স্থানগুলোতে অল্প সময়ের মধ্যে স্বল্প খরচে আমরা যাইতে পারবো। দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে সম্পর্ক আরো গভীর হবে এবং ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটবে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৫৮বছর প্রধানমন্ত্রী একটা মহতী উদ্যোগ নিয়েছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের। তবে উত্তর অঞ্চল থেকে প্রায় ৪’শ থেকে ৫’শ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ঢাকায় টিকেট করতে হবে। এটা আসলে উত্তর অঞ্চলের মানুষের জন্য কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। আমরা চাই চিলাহাটি স্টেশনে ইমিগ্রেশন জটিলতা দূর করে এখান থেকেই যাত্রী বহনের ব্যবস্থা করা হউক।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, রেল সূত্রে জানতে পেরেছি যে, পহেলা জুন সকালে নীলফামারীর চিলাহাটি দিয়ে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকায় প্রবেশ করবে। করোনাভাইরাসের কারণে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলাচল বন্ধ ছিলো। ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস জটিলতা থাকার কারণে চিলাহাটি স্থলবন্দরে ভিসা এবং টিকিটের কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। আপাতত ঢাকা থেকে ভিসা এবং টিকিটের কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হচ্ছে। আমরা রেল মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি যাতে উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য ভিসা এবং টিকিট চিলাহাটি স্থালবন্দরে ব্যবস্থা করা হয়। আশা করছি অতি দ্রুত এর সুফল পাব।
(ঢাকাটাইমস/৩১মে/এসএ)