টেস্ট ক্রিকেট দেখার সংস্কৃতি তৈরি করুন সাকিব

অঘোর মন্ডল
 | প্রকাশিত : ২৮ জুন ২০২২, ২৩:০৮

বাংলাদেশে টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি! কথাটা সত্য। অকাট্যসত্য। একই সঙ্গে ভুল! কারণ, বাংলাদেশে তো ক্রিকেট সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি। তার আবার টেস্ট, ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টি সংস্কৃতি! ক্রিকেট খেলার রকমফের বদলেছে এটা ঠিক। টেস্ট ক্রিকেটের সাবেকি জগত হারিয়ে গেছে। এক সময় যে মূল্যবোধ নিয়ে ভদ্রলোকরা পাঁচ দিনের টেস্ট খেলতেন এবং দশর্করা দেখতেন তা এখন অতীত। খেলার রকম যেমন বদলেছে তেমন বদলেছে দেখার ধরনও। ‍‍`বাংলাদেশে টেস্ট দেখেন ক‍‍`জন!

মাঠে কবে টেস্ট দেখতে ত্রিশ হাজার দর্শক হয়েছে?’ এই প্রশ্নটা তুলেছেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিজে। মাঠে দর্শকের উপস্থিতি একটা দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির মাপকাঠি হয় না! হতে পারে না। নিউজিল্যান্ডের দুই দ্বীপের জনসংখ্যা সাকিবের নিজের জেলা মাগুরার জনসংখ্যার সমান হবে। কিন্তু সেই নিউজিল্যান্ডের টেস্ট সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। ত্রিশ হাজার ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামও তাদের নেই। অথচ তারা টেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।

আসলে সাকিবের উপলব্ধির সারসত্যটা কী! বাংলাদেশের মানুষ টেস্ট দেখে না। টেস্ট বোঝেন না! এরকম কিছু কী? নাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্ট বাজেভাবে হারার পর ঐ কথাগুলোকে লজ্জা ঢাকার ‍‍`হেলমেট‍‍` হিসেবে ব্যবহার করলেন! একটা দেশ ১৩৪টা টেস্ট খেললো। যেখানে সব শেষ টেস্টে হারের সেঞ্চুরি উদযাপণ করলো তারা। রাত জেগে এদেশের মানুষ সেটাও দেখেছেন। তাও আবার তাদের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির বাইশ বছর পূর্তির একদিন পরই!

টেস্ট কেন, সব ফরম্যাটের ক্রিকেটই এখন বিভিন্ন চ্যানেল খেলার প্রতিটি মুহূর্ত তুলে ধরে। শুধু কি মাঠ, তারা মাঠের বাইরের কথাবার্তা নিয়েও হাজির হয়। ক্রিকেট বোদ্ধাদের পাশাপাশি লাস্যময়ী তরুণীরাও টিভির পর্দায় ভেসে বেড়ান। সব মিলিয়ে অন্য রকম ইন্দ্রিয়তৃপ্তিদায়ী প্যাকেজ এখন ক্রিকেট। এর পাশাপাশি আছে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। যেখানে থাকছে প্রতিমুহুর্তে খেলা এবং স্কোর সব কিছুর নিখুঁত বর্ণনা। এবং সেগুলো খুব মুচমুচে। তাই বাংলাদেশের মানুষ টেস্ট দেখেন না, বাংলাদেশ অধিনায়কের এই দাবি খারিজ হয়ে যায় যুক্তির নিরিখে।

তবে হ্যাঁ, মাঠে দর্শক কম আসে এ তথ্যটা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার দর্শকরা টেস্ট দেখতে আসেন। কারণ, সেখানে অন্যরকম এক রোমাঞ্চও থাকে। তারা মাঠে যান ভালো ক্রিকেট দেখার জন্য। নিজেদের দল জিতবে এমন একটা আশা নিয়ে। হারলেও তারা লড়াই করবে। ক্রিকেট শুধু একটা খেলা নয়। দুই অর্থেই শিল্প। যেখানে শিল্পের নান্দিকরূপও দেখা যায়। আবার ক্রিকেট নামক শিল্পের বাজার দরটাও চড়া করপোরেট জগত আর বিপণন কর্তাদের দক্ষতার কারণে। আর ক্রিকেট নামক শিল্পকে বাঁচানোর দায়িত্ব ক্রিকেট কর্তাদের। তবে মাঠে দর্শক টানার দায়িত্বটা ক্রিকেটারদের খেলার শৈল্পিকরূপ তুলে ধরে। আমাদের ক্রিকেটাররা কী নিজেদের কাজটা করতে পারছেন!

সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক। যিনি নিজে টেস্ট খেলতে খুব বেশি আগ্রহী এমন দাবি তিনি নিজেও করতে পারবেন না। অতীতে টেস্ট থেকে ছুটি চেয়েছেন একাধিকবার। টেস্ট কিংবা ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের চেয়ে যার কাছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ-আইপিএল অনেক বেশি আর্কষণীয়! সেটা হতে পারে অর্থের কারণে। তবে একজন সাকিব আল হাসান তো বাংলাদেশের কোটি উঠতি ক্রিকেটারের কাছে‍‍` আইকন‍‍`। তিনি যে বার্তাটা দিলেন, সেটা বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য ভাল কিছু নয়। বরং টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি তাদের আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে। সাকিব নিজেও জানেন, ক্রিকেট সার্কিটে একটা কথা দারুণভাবে প্রচিলত, ‘বলের আগে যেতে পারলে তবেই তুমি বাউন্ডারিটা বাঁচাবে।‍‍` অর্থাৎ, সময়কে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয়। উদাহরণ তৈরি করতে হয়। টেস্ট ক্রিকেটে ক‍‍`টা উদাহরণ তৈরি করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। টেস্ট জয়ের আগে ড্র করুন। তা হলে এদেশের মানুষ সেটাকেও জয়ের মর্যাদা দেবে। তারা গর্ব করেই বলবেন, আমরাতো টেস্ট হারিনি। কিন্তু এই কথাটা বলার সুযোগ এদেশের ক্রিকেটানুরাগীরা ক‍‍`বার পেয়েছেন!

সাকিব, আপনারা অনেকই দেড় দশক ধরে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। কিন্তু আপনারা আমাদের ক‍‍`বার বলার সুযোগ দিয়েছেন, ‘আমরা হারিনি‍‍`। মাঝে মধ্য দর্শকরা যা পেয়েছেন সেখানে আবার ‍‍`বৃষ্টি‍‍` নামে এক পারফর্মারের দারুণ পারফরম্যান্স থেকে গেছে! হারকে ঘৃণা করার সংস্কৃতিটা ক্রিকেটারদের ভেতর তৈরি হলে, আমাদের টেস্ট সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হবে। ওয়ানডে, টি- টোয়েন্টিতে ভালো খেলেও আপনি হারতে পারেন। তবে টেস্ট ক্রিকেটে আপনি ভালো খেলে না জিততে পারলেও হার এড়ানোর সুযোগ থাকে।

টেস্ট ক্রিকেট বদলেছে। ধ্রুপদীর ধারণাও বদলেছে। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডের মিশেলে টেস্ট খেলছে বেশির ভাগ দল। কিন্তু আমরাতো সেটাও পারছি না। মন শক্ত করে, পেশাদারী ও শতভাগ জেতার মনোভাব নিয়ে যেদিন বাংলাদেশ টেস্টে খেলবে, নিশ্চিত সেদিন মানুষ আপনাদের ক্রিকেট দেখতে মাঠে হাজির হবে।

লেখাটি ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মন্ডলের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :