ড্রাগন চাষে ভাগ্য খুলেছে আলামিনের

মো. শাহানুর আলম, ঝিনাইদহ
 | প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০২২, ১৪:৩০

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ড্রাগন চাষ করে ভাগ্য খুলেছে ২৫ বছরের শিক্ষিত যুবক আলামিনের। মাত্র দুবছরেই তিনি হয়েছেন লাখ লাখ টাকার মালিক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নিজের জমি ও কিছু বর্গা জমিতে ড্রাগন চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন এই যুবক।

উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের খলিশাকুন্ডু গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে মো. আলামিন হোসেন ড্রাগন ফল বিক্রি করে প্রতি চালানে আয় করেন প্রায় নয় লক্ষাধিক টাকা। তার এই সফলতা দেখে অনেকে আগ্রহী হয়েছেন ড্রাগন চাষে।

মো. আলামিন হোসেন ২০১৬ সালে এম,এ পাস করে চাকরির জন্য বেশ কিছুদিন ঘোরাঘোরি করে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন অনলাইন ও ইউটিউব দেখে ড্রাগন চাষে আগ্রহী হন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিজের জমিতে ড্রাগনের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আলামিন। তার জমিতে প্রায় ৭ ফুট উচ্চতার পিলারের পাশে তিনি এই ড্রাগন গাছ রোপন করেছেন। আর এই পিলারের উপর লোহার রডের সঙ্গে সাইকেলের পুরাতন টায়ার দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আবার ফলও আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে এই ড্রাগনের চাষপদ্ধতি জেনে নিচ্ছেন। সেই সাথে তিনি ৫০০ টাকা দামে চারার কাটিং সরবরাহ করেন আগ্রহীদের মাঝে।

ড্রাগন ফল চাষে সফল আলামিন হোসেন বলেন, চাকরির পেছনে না ছুটে, আমি অনলাইন মিডিয়ায় এবং ইউটিউবে কৃষি ভিত্তিক চ্যানেল দেখে বাবার সহযোগীতায় বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের জন্য ২০২০ সালে এগারো শতাংশ জমিতে এই ড্রাগন ফলের চারা রোপন শুরু করি। সঠিকভাবে পরিচর্যা করার কারণে খুব কম সময়ের মধ্যেই ড্রাগনের ফল আসতে শুরু করে। বর্তমানে আমার ১ একরের বেশি জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ রয়েছে। তারমধ্যে থায় রেড, ভিয়েতনাম রেড, আমেরিকা বিউটি, হোয়াইট, হলুদ এবং পিং রোজ উল্লেখযোগ্য।

জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি এই দুইসময়ের মধ্যেই চারা রোপন করতে হয়। আগে এইসব জমিতে পান চাষ করা হতো কিন্তু পান চাষে লাভ না হওয়ায় বরজ ভেংগে দিয়ে এই দ্বীর্ঘমেয়াদী ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছি। আমার এই ড্রাগন ফলের বাগান থেকে প্রতি চালানে প্রায় নয় লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। বছরে ৪ থেকে ৫টি চালানে বিক্রি করা হয় বলে তিনি জানান।

এদিকে একই গ্রামের মনোয়ার হোসেন জানান, আমার তো মনে হয় এই চাষটা বেশ ভালই। পানের চাষ করে লচ খাচ্ছি। তেমন কোনও অর্থের যোগান পেলে এখনই এই ড্রাগন ফলের চাষ করতাম। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে ড্রাগন ফলের বাগান করবো।

হরিণাকুন্ডু কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রথখোলা, ভেড়াখালী, নারায়নকান্দী, খলিশাকুন্ডু বড়ভাদড়া, পায়রাডাঙ্গা এবং শিতলী গ্রামে এই ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। উপজেলায় মোট ২.৮ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফল চাষের আওতায় আছে। ভবিষ্যতে এই আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে হচ্ছে।

ড্রাগন ফলের চাষ একটি লাভ ফসল ১ একর জমিতে সব মিলে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা আর ভাল জাতের ফল এবং ফলন ভাল হলে দ্বিতীয় বছর থেকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রয় করা যায় বলে কৃষকরা জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান জানান, বারী ড্রাগন ১, কিংক রোজ, রেড ভেলভেট জাতের ড্রাগনের চাষ হচ্ছে এই চাষ বেশ লাভবান, শিক্ষিত যুবকরা এই চাষে এগিয়ে আসছে। ড্রাগন গাছে একটানা ৫ থেকে ৬ মাস ফল পাওয়া যায়। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই ফল চোখকে সুস্থ্য রাখে, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগসহ নানাধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় হরিণাকুণ্ডু উপজেলার মাটি পর্যাপ্ত ড্রাগন চাষের উপযোগী।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার সবচেয়ে বড় ড্রাগন ফলের বাগান হচ্ছে কাপাশহাটীয়া ইউনিয়নের চারাতলা বাজারের পাশে। আমরা অসচ্ছল ড্রাগন চাষিদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি বলেও তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/৫জুলাই/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :