কমলাপুরে যাত্রীর চাপে দিশেহারা কর্তৃপক্ষ, শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তি
ঈদযাত্রায় রাজধানী ছেড়ে যাওয়া মানুষদের উল্লেখযোগ্য অংশ যায় ট্রেনে। রেলপথে ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন শুক্রবার ভোর থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীদের চাপে দিশেহারা অবস্থা কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে শিডিউল বিপর্যয়ে সকাল থেকে ছয়টি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
কমলাপুর রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার কথা সকাল ছয়টায়। অথচ ট্রেনটি স্টেশন প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায় দেরিতে। অবশেষে সেটি সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরি করে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্টেশন ছাড়ে।
নীলফামারির চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা। এই ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে আসে সকাল সাড়ে ৯টায়। পৌনে ১০টার দিকে ট্রেনটি স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যায়।
একই অবস্থা খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের। এই ট্রেনের সকাল ৮টা ১৫ মিনিটের স্টেশন ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল। এই ট্রেনও দেরিতে ছাড়বে বলে জানিয়েছে কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টায় ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময়।
রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছাড়ার কথা সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। ট্রেনটি ৩০ মিনিট দেরি করে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে স্টেশন ছেড়েছে। সকাল পৌনে ৯টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে কর্ণফুলি কমিউটার ছাড়ার কথা। ট্রেনটি ৩০ মিনিট দেরি করে সোয়া ৯টার দিকে স্টেশন ছেড়ে যায়।
শুক্রবার (০৮ জুলাই) মধ্যরাত থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে ট্রেনের অপেক্ষায় প্লাটফর্মে বসে আছেন যাত্রীরা। কেউ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এসেছেন। কেউ বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে। যে যার মতো করে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে বসে থাকতে দেখা গেছে। কখন আসবে নিজ গন্তব্যের ট্রেন সেই অপেক্ষা সবার।
সরেজমিনে কমলাপুর গিয়ে দেখা গেছে, রেলস্টেশনে মানুষের ঢল। ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনের দিকে ছুটে যাচ্ছেন যাত্রীরা। গত দিনগুলোর চেয়ে শুক্রবার ট্রেনের ছাদে ও ভিতরে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। অনেকে জানালা দিয়ে ট্রেনের ভিতরে ঢুকেছেন। ট্রেনের ছাদ বা ভিতরে দাঁড়িয়ে বা বসে যেভাবেই যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হোক না কেন ঘরমুখো যাত্রীদের গুণতে হয়েছে টাকা। যাত্রীদেরকে ট্রেনের ছাদে, জানালা দিয়ে, ইঞ্জিনের ওপরে তুলে দিয়ে ট্রলিম্যানও টাকা নিচ্ছে।
এদিকে টিকিট সঙ্গে থাকার পরও নিজের আসনে বসে যেতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন অনেক যাত্রী। ট্রেনযাত্রী সুমন মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি যাবো পঞ্চগড়। দুঃখের বিষয় হলো হাতে ট্রেনের টিকিট থাকা অবস্থায়ও নিজের সিটে বসতে পারছি না। কীভাবে ট্রেনের ভিতরে যাবো সেটাই ভাবতেছি। আমার ভয়ও হচ্ছে, ঈদ করতে গিয়ে যদি নিজের প্রাণ হারাই! ‘
আবু হানিফ নামে আরেকজন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাসে যানজট থাকবে মনে করেছিলাম। এজন্য একটু আরামের জন্য ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম জামালপুর যাবো বলে। কিন্তু এতো দেখি ভয়ঙ্কর অবস্থা শুরু হয়েছে। এত ভিড় রেলস্টেশনে। মারামারি করতে হচ্ছে ট্রেনে উঠতে। একদিকে মানুষের ধাক্কাধাক্কি, এর মধ্যে গরমে জান বের হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। কমলাপুর রেলস্টেশনের কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো ভালো সুযোগ-সুবিধা পেলাম না কোনো দিন।‘
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি যাত্রীরা যেন একটু শান্তিতে নিজ গন্তব্যে ফিরতে পারে। কমলাপুর রেলস্টেশনে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ২৪ ঘণ্টা রয়েছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। আমাদের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে যাত্রীরা যেন ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিনের উপরে না ওঠে, তাই বার বার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ কোনো ধরনের নিয়ম মানছে না।‘
(ঢাকাটাইমস/০৮ জুলাই/পিআর/কেএম)