মনু নদীতে ‘হাত বাওয়া’ মহোৎসব
মনু রেল ব্রিজ এলাকা। সোমবার সকাল না হতেই এখানে শত শত মানুষের ভিড়। নদীর দুই পাড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। কেউ এসেছেন জাল নিয়ে মাছ ধরতে। কেউবা আবার দেখতে । আছে শত শত ডিঙি নৌকা আর জেলে। যে যেভাবে পারে যোগ দিয়েছে হাত বাওয়া বা হাট বাওয়া নামক মাছ ধরার এই মহোৎসবে ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মনু নদীর উৎপত্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া রাজনগর ও সদর উপজেলা হয়ে অন্তত ৮০ কিলোমিটার পথ বেয়ে শেরপুরে যেয়ে নদীটি পড়েছে কুশিয়ারা নদীতে। আর এই নদীতেই চলছে শতাব্দির প্রাচীন 'হাত বাওয়া' উৎসব।
স্থানীয়রা জানান, অতীতে এই হাত বাওয়া বা হাট বাওয়া উৎসবে এখন লোক অনেক কম হয়। কারণ হিসেবে তারা জানান মৌলভীবাজারের মাতারকাপন এলাকায় ব্যারেজ হওয়াতে শুষ্ক মৌসুমে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে কারণে এখন আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না।
কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের সংবাদকর্মী সাইফুল আলম ঢাকা টাইমসকে জানান, মনু রেল ব্রিজ এলাকা থেকে সোমবার এই হাট বাওয়া শুরু হয়েছে। ৩ দিনে তা তেলিবিল চাতলাপুর সীমান্ত পর্যন্ত গিয়ে তা শেষ হবে।
তিনি জানান, অনেক লোক একসাথে মাছ ধরতে নামছে তাই প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে ।
কুলাউড়া উপজেলার নদী তীরবর্তী মনু রেলওয়ে স্টেশন এলাকার লোকজন জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এখানে এই 'হাট'বা 'হাত' বাওয়া উৎসব হয়ে থাকে।কয়েক ইউনিয়নের শত শত লোক এতে যগ দেন। মাছও মিলে প্রচুর।
কিন্তু মাছ ধরার এই উৎসবের নাম 'হাট' বা 'হাত' বাওয়া কেনো নির্দিষ্ট করে কেউ তা বলতে পারছে না। নদী তীরবর্তী একাধিক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করে পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন তথ্য।
মনু নদী তীরবর্তী হাজীপুর ইউনিয়নের রণচাপ গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক অমরেশ রায় এ বিষয়ে দৈনিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, এক সময় নদীতে প্রচুর মাছ ছিলো। তখন নদী ইজারা নেওয়া হতো। ইজারাদার বাংলা অগ্রহায়ণ বা পৌষ মাসে ধান কাটার পর এলাকাভিত্তিক টিকিট কেটে স্থানীয় জনগণকে মাছ ধরার সুযোগ করে দিতেন । এতে যোগ দিতেন হাজার হাজার লোক। আর এক সাথে অনেক লোক মাছ ধরার কারণে এর নাম হাট বা হাত বাওয়া হয়েছে ।
আবার সাপ্তাহিক হাট বারে এই উৎসব হওয়াত হাট বাওয়া নামকরণ হয়েছে বলে অনেকের মতো।
নদী তীরবর্তী পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিপিবি নেতা কমরেড আব্দুল লতিফ 'দৈনিক ঢাকা টাইমস'কে বলেন, মনু নদীতে কবে থেকে এই হাত বা হাট বাওয়া চলছে তা জানা যায়নি । ছোটবেলা থেকে তিনি তা দেখে আসছেন বলে জানান ।
(ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/এআর)