ইউক্রেনে ব্যর্থতা, ‘কুখ্যাত’ সুরোভিকিনকে সরিয়ে দিলেন পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪:৫৬

তিন মাস আগে গত অক্টোবরে ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়োগ পাওয়া ‘কুখ্যাত’ রুশ কমান্ডার ‘জেনারেল আর্মাগেডন’ নামে খ্যাত সের্গেই সুরোভিকিন। ইউক্রেন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বিপর্যয় এবং ইউক্রেনের অগ্রগতি হওয়ার অভিযোগে জেনারেলকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে।

জেনারেল সুরোভিকিনকে সিরিয়ায় রাশিয়ার অভিযান এবং বিশেষ করে আলেপ্পো শহরে ভারী বোমাবর্ষণসহ পূর্ববর্তী যুদ্ধগুলিতে তার নৃশংস কৌশলের জন্য ‘জেনারেল আর্মাগেডন’ নামে অভিহিত করা হয়।

বিবিসি জানায়, সুরোভিকিনকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে তার জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে। তিনি এখন যুদ্ধক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবেন। এতদিন তিনি ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে নৃশংস হামলার তদারকি করেছেন।

জেনারেল সুরোকিভিন পূর্বে তাজিকিস্তান, চেচনিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের সঙ্গে লড়েছেন। রুশ বাহিনীতে ‘অত্যন্ত নির্দয়’ একজন যোদ্ধা ও সামরিক নেতা হিসেবে পরিচিত ৫৫ বছর বয়সী এই জেনারেল।

১৯৬৬ সালে সাইবেরিয়ার শহর নভোসিবিরিস্কে জেনারেল সুরোভিকিনের জন্ম। তিনি ২০১৭ সালে সিরিয়ার যুদ্ধে তার নেতৃত্বে রুশ বিমানবাহিনী বিশেষ সাফল্য অর্জন করে। যুদ্ধের পর তাকে ‘রাশিয়ার বীর’ খেতাব দেওয়া হয় এবং পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদন মতে, তিনি রুশ সামরিক বাহিনীতে অত্যন্ত ‘নির্দয়’ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ সামরিক জীবনে ২ বার জেল খেটেছেন তিনি। তার নেতৃত্বাধীন সেনারা রুশ রাজধানী মস্কোতে ৩ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করার পর তিনি ৬ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময় আবারও কারাবরণ করেন সুরোভিকিন। তবে তাকে পরবর্তীতে বিনা বিচারে মুক্তি দেওয়া হয়। ৪ বছর পর তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র পাচারের অভিযোগ আসে। বিচারে সাজা পেলেও তা খারিজ হয়ে যায়।

অপরদিকে জেনারেল গেরাসিমভ ২০১২ সাল থেকে এই পদে রয়েছেন। সোভিয়েত-পরবর্তী যুগের রাশিয়ান চিফ অব জেনারেল স্টাফদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

সুরোকিভিনকে অক্টোবরে অপারেশনের নেতৃত্বে নিযুক্ত করার কিছুদিন বাদেই ইউক্রেনের শক্তি অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য তিনি প্রচারণা শুরু করে, লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয় নাগরিককে তীব্র শীতে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যুৎ এবং পানিহীন অবস্থায় রেখেছিলেন। তিনি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন থেকে রাশিয়ার প্রত্যাহারও তদারকি করেছিলেন যেটিকে ইউক্রেনীয়দের জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলেছে, জেনারেল সুরোভিকিনকে প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ছিল ‘সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন শাখার মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সংগঠিত করা এবং রাশিয়ান বাহিনীর পরিচালনার মান ও কার্যকারিতা উন্নত করা’।

কিন্তু এই পদক্ষেপকে কেউ কেউ দেখেছেন যে তিনি হয়তো খুব বেশি ক্ষমতা অর্জন করেছেন।

সামরিক বিশ্লেষক রব লি টুইটারে লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের একীভূত কমান্ডার হিসাবে, সুরোভিকিন খুব শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন এবং সম্ভবত (রাশিয়ান প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই) শোইগু এবং গেরাসিমভ পুতিনের সঙ্গে কথা বলার সময় বাইপাস করছিলেন।’

সম্প্রতি ইউক্রেনের খনির শহর খ্যাত সোলেদারের দখল নিয়ে দেশ দুইটির পাল্টাপাল্টি দাবি উঠেছে। শহরটিতে গভীর লবণের খনিও রয়েছে, যা ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র থেকে সুরক্ষিত সৈন্যদের স্থাপন এবং সরঞ্জাম সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপ এই অঞ্চলে তাণ্ডব চালানোর জন্য পুরো কৃতিত্ব নিয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে গ্রুপের নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেছিলেন, তার বাহিনী সোলেদারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যাইহোক, বুধবার রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে যা তার দাবির বিরোধিতা করছে বা শুধু ওয়াগনার গ্রুপের সৈন্যরা জড়িত ছিল।

প্রিগোজিন বুধবার সন্ধ্যায় দাবির পুনরাবৃত্তি করেন। টেলিগ্রামে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তিনি গর্ব করে বলেছেন, তার ভাড়াটে সৈন্যরা প্রায় ৫০০ ইউক্রেনপন্থী সৈন্যকে হত্যা করেছে। পুরো শহর ইউক্রেনীয় সৈন্যদের লাশে ছেয়ে গেছে।

ইউক্রেনও সম্প্রতি রাশিয়ান লাশের গাদা সম্পর্কে একই ধরনের মন্তব্য করেছে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি সোলেদারের পতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বুধবার রাতের ভাষণে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং এর প্রচারকারীরা ভান করার চেষ্টা করছে যে তারা সোলেদারে সাফল্য অর্জন করেছে। তবে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।

জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার জন্য একদিনের জন্যও থেমে না গিয়ে সবকিছুই করি। আমাদের সম্ভাবনা বাড়ছে।’

(ঢাকাটাইমস/১২জানুয়ারি/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :