ভারতও ভিড়তে দেয়নি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সেই রুশ জাহাজ
ভারতের বন্দরেও ভিড়তে পারেনি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত সেই রুশ জাহাজ। পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে ১৪ দিন অপেক্ষার পর অবশেষে
পণ্য খালাস না করেই ভারতের জলসীমা ত্যাগ করেছে জাহাজটি।
জাহাজটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল নিয়ে এসেছিল।
গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে ভিড়তে না দেয়া রুশ জাহাজ রূপপুরের সরঞ্জাম নিয়ে ভারতের হলদিয়া বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে মর্মে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা।
গত ৪ জানুয়ারি প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা রাশিয়ার জাহাজে করে আনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল খালাস হবে ভারতের হলদিয়া বন্দরে। পরে সেখান থেকে সেই পণ্য সড়কপথে বাংলাদেশে পাঠাবে এজেন্ট। মূলত নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে বাংলাদেশ সরকার নাম ও রং বদলে ফেলা রুশ জাহাজটিকে মোংলা বন্দরে ভিড়তে দেয়নি। রুশ জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানছে না (এটা আগের অবস্থান), তাই ভারতের হলদিয়া বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ঘুরপথে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট মেরিন ট্র্যাফিকের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পতাকাবাহী ওই জাহাজ ৩রা জানুয়ারি সকালে বঙ্গোপসাগরের লোয়ার অকল্যান্ড চ্যানেলে অবস্থান করছিল। এর আগে কয়েক দিন ধরে জাহাজটিকে বঙ্গোপসাগরের গভীরে ভাসতে দেখা গেছে। হলদিয়া পোর্ট ট্রাস্টের একটি সূত্র (সে সময়) বিবিসিকে জানায়, চ্যানেলে কুয়াশার অবস্থা কেমন থাকে তার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজটি বন্দরে ভিড়তে পারবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্বৃত করে বিবিসি জানায়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনো রুশ জাহাজ ভারতের বন্দরে ভিড়লে তাতে সরকারের আপত্তি থাকবে না।
শেষ পর্যন্ত দিল্লির অনুমতি না পাওয়ায় ফিরে যেতে হয়েছে জাহাজটিকে, যদিও হলদিয়ায় ভিড়তে দেবে এমন সিগন্যাল ছিল। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সফরের পর দিল্লি হয়তো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে।
নিষেশাজ্ঞার আওতায় ওই জাহাজকে গ্রহণে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়ের প্রতি রাশিয়ার অনুরোধ ছিল। তা না হলে ঢাকার সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক নষ্টের হুমকি ছিল।
এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জানিয়েছিলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে তাদের অবস্থান আগ যা ছিল, এখনো তাই আছে। তিনি বলেন, ‘রুশ জাহাজটি যদি ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়ে থাকে বা ভিড়তে আসে, তাহলে তা–ই।’
রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটি ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা থাকলেও এর আগেই ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পারে যে জাহাজটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ‘স্পার্টা ৩’। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এক পত্রে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়।
মার্কিন দূতাবাসের ওই পত্রে বলা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ওই জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানো, জ্বালানি সরবরাহ, জাহাজের নাবিকদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় যুক্ত হলে ওই দেশের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া বা বড় আর্থিক দণ্ডের মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
এই পত্র পেয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানালে ওই মন্ত্রণালয় জাহাজটিকে বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে পূর্বের অনুমতি বাতিল করে। এ বিষয়ে রাশিয়া বাংলাদেশেল সঙ্গে কূটনৈতিক পত্র দেয়, যাতে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। জাহাজটিকে ভিড়তে দিতে বাংলাদেশের ওপর প্রচণ্ড চাপও সৃষ্টি করে মস্কো। কিন্তু ঢাকা তাতেও রাজি হয়নি বরং জাহাজটিকে ফিরে যেতে বাধ্য করে।
(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/এফএ)