ঢাকায় ভয়ানক বায়ু দূষণ, উৎস চিহ্নিত হলেও সমাধান নেই

মিজান মালিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:২০ | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:৫৯

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন একাধিক দায়িত্বশীল সংস্থা থেকে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে উদ্বেগজনক রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য চরম অস্বস্তির-হতাশার। বিশে^ দূষিত শহরের তালিকায় কখনো তৃতীয়, কখনো দ্বিতীয় আবার কখনো প্রথমে চলে আসছে ঢাকার নাম। এসব রিপোর্ট গণমাধ্যম হয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরে যাচ্ছে। কিন্তু সে আলোকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ‘যার ইচ্ছে যে রিপোর্ট করুক। আমরা আমাদের মতোই চলব। মুখ বধির হলে যা হয়।’ বাস্তবতা হলো, মুখ বন্ধ রাখলেও সমস্যা দিনে দিনে পাহাড়সম হচ্ছে। কোনো কিছুই দূর হচ্ছে না। কখনো কখনো আবার পরিবেশ দূষণের উৎস চিহ্নিত হলেও সমাধানের জন্য কেউ কোনা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় গতকালও শীর্ষে উঠে এসেছে ঢাকার নাম। গত শুক্রবারও ছিল একই তালিকায়। গতকাল সকাল ১০টার পর মানের সূচক অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের মান ছিল ২৮৫ একিউআই। ফলে দিল্লি ও ইরাকের বাগদাদকে পেছনে ফেলে শীর্ষে ওঠে এসেছে ঢাকা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ু দূষণের শিকার হয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারায়। মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী বাধা পালমোনারি রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে মৃত্যুহার দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। ঢাকার পরিবেশ নিয়ে সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশিত হয় গতকাল সকাল ১০টায়। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের সূচক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ২২৬ স্কোর নিয়ে এই তালিকায় প্রবেশ করে ঢাকা। এরপর তা বাড়তে বাড়তে ২৮৫-এ পৌঁছায়।

বাতাসের মানের হিসাব অনুযায়ী ২৪৬ একিউআই স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইরাকের বাগদাদ। ২২২ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ভারতের কলকাতা। চতুর্থ স্থানে থাকা ভারতের দিল্লির স্কোর ২১৮।

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় গত শুক্রবারও শীর্ষে ছিল রাজধানী ঢাকা। এদিন সকাল ৮টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) রেকর্ড করা হয় ৩১৭।

তথ্যমতে, একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ এর মধ্যে থাকলে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়। পরিবেশ দূষণ ঢাকার মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ধরেছে। নগরবাসীর জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। এ যেন নিয়তি। এ থেকে বের হওয়ার কোনো পথ এখন পর্যন্ত গোছানোভাবে করা হয়নি। নামমাত্র পরিবেশ অধিদপ্তর থাকলেও তারাও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে নিজেদের সক্ষমতা দেখাতে পারছে না।

ঢাকায় যারা বসবাস করেন তাদের অনেকেই এজমা, স্ট্রোক ও শ্বাসকষ্টসহ নানারকম রোগে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন। বায়ু দূষণের বেশি শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশু। ঘর থেকে বের হওয়ার পর অনেকেই অসুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন। অসুস্থতা থেকে নিস্তার পেতে চিকিৎসকের পেছনে খরচ করতে হচ্ছে অর্থ। অপরদিকে বায়ু দূষণের ফলে মানুষের আয়ু কমে যাচ্ছে। প্রভাব পড়ছে জিডিপির ওপর। বিশ^ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, বায়ু দূষণের ফলে বাংলাদেশের জিডিপি কমছে ৪.৪ ভাগ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বায়ু দূষণের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যানসার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ফলে এই মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায় যা দূষিত বায়ুর ফলেই ঘটে থাকে। বায়ু দূষণে প্রতিবছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংক এক রিপোর্টে বলেছে, শুধু ইটভাটাই নয়, যানজট, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজ ঢাকা শহরে বায়ু দূষণ বাড়িয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যেরভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক বলছে, দিনে ২টি সিগারেট খেলে মানবদেহের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিদিন সেই পরিমাণ ক্ষতির শিকার হন নগরবাসী। বিশেষ করে নবজাতক থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ষাটোর্ধ্বরা রয়েছেন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে।

এই যে বিপর্যয় এ থেকে উত্তরণের জন্য সরকার কী করছে- এমন প্রশ্নে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী গতকাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা ঢাকার পরিবেশ দূষণের উৎস চিহ্নিত করেছি। ইনডোর এবং আউটডোরে কী পরিমাণ দূষণ ছড়ায় তা নির্ণয় করা গেছে। তবে আমাদের সমস্যা হলো আইনের। বায়ু দূষণ ঠেকানো বড় চ্যালেঞ্জ হলো নানান ধরনের আইন আছে, বিধি আছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারছি না। পরিবেশ অধিদপ্তরকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা তারা কার্যকর করতে পারে না। ইটভাটার সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত। তাদের সহযোগিতা যতটুকু দরকার তা পাইনি।

তিনি বলেন, আমাদের জিডিপি কমে যাচ্ছে। আয়ু কমে যাচ্ছে। এখন আমরা পরিবেশের একটা ইভালুয়েশন করছি। আমাদের প্রকৃতিক সম্পদের অবস্থা কি, আমরা কেনো বিদেশি রিপোর্টের ওপর নির্ভরশীল এটাও এখন আলোচনা হচ্ছে। সাবের হোসেন চৌধুরী ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি কারণ উল্লেখ করে বলেন, ইটভাটা, উন্নয়নমুখী কাজ ও জ্বালানির ব্যবহার আমাদের শঙ্কিত করছে। এসব কারণে ঢাকার বায়ুর অবস্থা আসলেই খুব খারাপ। শব্দ দূষণ এবং বায়ু দূষণ- এ দুটো নিয়েই আমাদের কাজ করা উচিত।

পরিবেশবিদ ড. রেজওয়ানা হাসান গতকাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা আইনের ম্যান্ডেটের অধীনে কাজ করি না। বায়ু দূষণ রোধকল্পে আইন করা হলো, বিধি করা হলো কিন্তু সে অনুযায়ী দুই বছরেও কাজ শুরু হয়নি। আমাদের যার যেটা কাজ সেটা করছি না। আদালতের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।

তিনি বলেন, সরকার স্ট্রাকচারাল কাজে উদ্যোগী। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি আমলে নেয়া হচ্ছে না। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়হীনতা সংকট আরো বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

এদিকে, ঢাকায় মেট্্েরারেলসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কারণে বায়ু ও শব্দ দূষণের মাত্রা অত্যন্ত মারাত্মকরকম বলে অভিমত দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। মেঘা প্রকল্পের এতো বড় কাজ চলাকালীন পরিবেশের দিকটা কী কোনোভাবেই নজরে রাখা হয় না? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একটি তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তা হচ্ছে দূষণ রোধে খাত বা বাজেট ধরা ধাকলেও সেটি চলে যায় প্রভাবশালীদের পকেটে। এমনকি মেট্রোরেলের ঠিকাদারদের দিকেও ইঙ্গিত দিয়েছে একটি দায়িত্বশীল সূত্র। তারা বলছে, দূষণ রোধে সরকারের দেয়া বাজেটের সঠিক ব্যবহার না করে তা হজম করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

হাসিনা-থাভিসিন দ্বিপাক্ষীক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা স্বেচ্ছাচারিতামূলক: টিআইবি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

একযোগে আট বিভাগে সম্পন্ন হলো ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা

৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙছে তাপপ্রবাহ

তাপপ্রবাহে রেলের কর্মীদের জন্য ৫ নির্দেশনা

মানবসম্পদ উন্নয়নে উচ্চ শিক্ষার বিকল্প নেই: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

তাপমাত্রার মতোই বেড়েছে সবজি ও মাছ-মাংসের দাম

১৬ জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ, দুই জেলায় অতি তীব্র

বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :