রমজানের দুমাস আগেই অস্থির বাজার

পুলক রাজ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৫ | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৩

রমজান মাস এলেই দেশের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। তবে এর আগেই হু হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। রমজানের প্রায় দুই মাস বাকি থাকলেও এখন থেকেই প্রতিটি পণ্যের মূল্য আকাশছোঁয়া।

গত ১০ মাসে দফায় দফায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে খেজুর, চিনি, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, বেসন, মুড়ি, ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দামও বেড়েছে। এতে প্রায় প্রতিটি পণ্যই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

সরজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কালমি মরিয়ম খেজুর প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের রমজান মাসে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১০ মাসে ৩০০ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজিতে ।

এছাড়া, মাবরুম খেজুর ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০০ টাকা, আজোয়া খেজুর ১৫০ টাকা বেড়ে ৮৫০ টাকা, সৌদি মরিয়ম খেজুর ২০০ টাকা বেড়ে ৯০০ টাকা, মেডজুল খেজুর ২০০ বেড়ে ১২০০ টাকা, বরই খেজুর ২০০ টাকা বেড়ে ৪০০ টাকা, বারারি ৬০০ থেকে বেড়ে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, দেশি মুড়ি খোলা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ১০ মাস আগে প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ছিল। প্যাকেট আল্ট্রা জেষ্টা মুড়ি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ১০ মাস আগে ১০০ টাকা কেজি ছিল। এসব মুড়ি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে।

মুদির দোকানে চিনির কেজি ৬০ টাকা থেকে দ্বিগুন বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোলা প্রতিকেজি ৩০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকা, বুটের বেসন ৯০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকা, এঙ্কর বেসন ৭০ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, দেশি আদা প্রতিকেজি ১০০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা, আমদানি করা আদা ১২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা, চায়না রসুন বেড়ে ২০০ টাকা, আমদানি করা মসুর ডাল (বড় দানা) প্রতিকেজি ২৫ টাকা বেড়ে ১০৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল (ছোট দানা) প্রতিকেজি ২০-৩০ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, অ্যাঙ্কর ডাল প্রতিকেজি ১০/১৫ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ২ কেজি ওজনের আটার প্যাকেট ১৩৫ টাকা, ২ কেজি ওজনের ময়দা ১৫০ টাকা, ভোজ্যতেল প্রতি লিটার ১৮৫ টাকা, প্রতিকেজি জিরা ৮০০ টাকা, লবঙ্গ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, চালের বাজারে কোনো স্বস্তির খবর নেই বললেই চলে। বাজারে পোলাওয়ের চাল ছাড়া অন্যান্য চালের মধ্যে স্বর্ণার কেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। ব্রি-আটাশ ৫২ থেকে ৫৭ টাকা, মিনিকেট ৭২ টাকা ও নাজিরশাইলের দাম ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। আর পোলাও এর চালের দাম ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. সালাউদ্দীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রমজান মাস এলেই শুরু হয় বাজার দর নিয়ে অস্থিরতা। তবে রমজান মাসের ২ মাস বাকি থাকলেও প্রতিটি পণ্যের মূল্য গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে।আগস্ট মাসের ৫ তারিখ রাতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে প্রতিটি পণ্যের মূল্য অতিরিক্ত বেড়েছে। ফলে আমার মতো সাধারণ মানুষ সংসার চালাতে মহা বিপদে আছি।’ তানিয়া আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, রমজানের দুই মাস আগেই যদি বাজারের এই অবস্থা হয়। রমজান আসলে কী হবে! কোনো মাসে খেজুর তেমন না লাগলেও রমজানে খেজুর লাগবেই। যে খেজুর গত বছর ৫০০ টাকা কেজি কিনেছি, সেই খেজুর আজ ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

তানিয়া আক্তার আরও বলেন, ‘চাল, ডাল, চিনি, আটা, ময়দা, খেজুর, মুড়ি, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। রমজান মাস শুরু হলে আবার বাড়বে! আমরা কই যাব?’

হাতিরপুল এলাকার দেশ-বিদেশ ফ্রুট স্টোরের মালিক খেজুর ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত ঝগড়া করতে হয় ক্রেতাদের সঙ্গে। দাম কেন এতো বাড়ল- এই উত্তর দিতে দিতে এখন আর ভালো লাগে না। রমজানে খেজুরের চাহিদা বেড়ে যায়। এখন আরও চিন্তা বাড়ছে খেজুরের দাম যদি এখনই এতো বেশি হয়, রমজান শুরু হলে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ রইল খেজুরসহ প্রতিটি পণ্যের দাম কমানো হোক।’

হাতিরপুল এলাকার মুড়ি বিক্রেতা মো. আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বরিশালের মুড়ি গত রমজানে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। কিন্তু এবছর রমজান আসার দুই মাস আগেই প্রতিকেজি ৬০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা যথাযথভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি দেশের বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম কমিয়ে আনার। আমরাও চাই মানুষ বাজারে গিয়ে স্বস্তি নিয়ে বাজার করুক। বড় বড় ব্যবসায়ীদের প্রতি আমার অনুরোধ রইল, আপনারা আর কোনো ধরনের কারসাজি করবেন না। আপনারা কারসাজি করে ভুল করছেন। এই ভুলের জন্য জনগণ সরকারকে দোষারোপ করছে। সময় থাকতে থাকতে ঠিক হয়ে যান।’

মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ‘প্রতি বছর রমজান মাসে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ে। এবার কী বলব? খুবি দুঃখজনক ব্যাপার। রমজান মাসের আরও দুই মাস বাকি রয়েছে এর মধ্যে সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি রমজান মাসে যেন মানুষ একটু স্বস্তি নিয়ে বাজার করতে পারে।’

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ায়ারি/পিআর/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল

ওয়ালটন-বিএসপিএ স্পোর্টস কার্নিভ্যাল মঙ্গলবার শুরু

চাঁদপুরে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স গ্রাহক সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প নির্মাণে ব্যবহৃত হবে বসুন্ধরা সিমেন্ট

চামড়া শিল্পের উন্নয়নে করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে: শিল্পমন্ত্রী

ন্যাশনাল ব্যাংকের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা হবে

ফের বাড়ল সোনার দাম, প্রতি ভরি এক লাখ ১৭ হাজার টাকা

সরকারের আর্থিক সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিতে অডিট কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করার তাগিদ

ইসলামী ব্যাংকের বরিশাল জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সিটি ব্যাংক ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি স্বাক্ষর

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :