সুখের আশায় বিদেশ গিয়ে খুন হলেন ৪ সন্তানের বাবা, দালালদের পকেটে গেল ২২ লাখ

সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৪১| আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৪
অ- অ+

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা নুর আলম। বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল হালিম মোল্যা। নুর আলমের স্বপ্ন ছিল ইউরোপে পাড়ি জমানোর। তার সেই স্বপ্ন পূরণে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার জন্য বছরখানেক আগে একটি দালাল চক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু টাকা নিয়ে দালালরা ইতালির বদলে তাকে লিবিয়ায় নিয়ে একটি বাসায় আটকিয়ে রেখে নির্যাতন চালিয়ে দেশে থাকা তার পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও নুরের জীবন রক্ষা করতে পারেনি তার পরিবার।

পরিবারের অভিযোগ গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর থেকে লিবিয়ার একটি মর্গে পড়ে আছে তার নিথর দেহ। লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পরিবার মরিয়া হয়ে তদবির করেও কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। এমন অবস্থায় লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তার অসহায় পরিবার।

নুর আলমের বড় ভাই মো. সিরাজ মোল্যা অভিযোগ করেন, আমার ভাই নুর আলমকে ইতালিতে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে দালাল চক্রের সদস্য পার্শ্ববর্তী বাখারদিয়া গ্রামের মোকছেম মোল্যার ছেলে মোফিজ মোল্যা। তার সঙ্গে দালাল চক্রের সদস্য একই গ্রামের সিরাজ মুন্সীর লিটন মুন্সী, মাঝারদিয়া গ্রামের আনারদ্দী মোল্যার ছেলে তোরাপ মোল্যা ও নগরকান্দার ধরনদী গ্রামের খোরশেদ মোল্যার ছেলে মিজান মোল্যা রয়েছে। এরা সবাই লিবিয়ায় থাকেন।

তিনি আরও বলেন, গত এক বছর দুই মাস আগে ইতালি নেওয়ার জন্য দালাল চক্রের সঙ্গে ৮ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হন নুর । চক্রের হোতা মোফিজ নুরকে দেশ থেকে রওয়ানা হওয়ার আগে ৪ লাখ আর ইতালি পৌঁছে ৪ লাখ টাকা দিতে বলেন। তার কথামতো প্রথমে তাকে ৪ লাখ টাকা দেন নুর। পরে নুরকে লিবিয়ায় নিয়ে যান। তাকে নিয়ে প্রথমে লিবিয়ার বেনগাজিতে একটি বাসায় রাখেন। ওখান থেকে নৌপথে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতালি না নিয়ে লিবিয়ায় একটি বাসায় দিনের পর দিন আটকে রেখে দালালরা নির্মম নির্যাতন চালান আর দেশে থাকা পরিবারের কাছে ফোন করে দফায় দফায় টাকা পাঠাতে বলেন। নুরকে বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে দালালরা যখন যে টাকা চেয়েছে, আমরা তাই পাঠিয়েছি। মোট ২২ লাখ টাকা পাঠানো হয়।

একপর্যায় নুর দেশে ফেরার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু নুর দেশে এসে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় তাকে প্রথমে বাধা দেওয়া হয়। পরে নুরকে আবারও মারধর এবং নির্যাতন শুরু করে দালালরা। নুর বারবার ফোনে ওদের নির্যাতনের কথা জানিয়ে বলেছে, ওরা আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে, তোমরা আমাকে বাঁচাও। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে হত্যা করে বাসায় ঝুলিয়ে রাখে। ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই দালালরা আমাদের ফোন করে বলে নুর আত্মহত্যা করেছে।

নুর আলমের ছেলে রাসু মোল্যা ও মেয়ে মিতু আক্তার বলেন, আমাদের বাবাকে দালালরা ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছে। এর আগে বাবাকে বাঁচাতে দালালদের কয়েক দফায় ২২ লাখ টাকা দিয়েছি। এই টাকা দিতে গিয়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের অল্প জমিজমা যা ছিল সব বিক্রি করে ও ধারদেনা করে টাকা পাঠিয়েও বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। আমরা ওই দালালদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করছি। সেই সঙ্গে বাবার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

তবে এ বিষয় অভিযুক্ত দালালরা বিলিয়ায় অবস্থান করায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

নুরের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো ধরনের সহযোগিতা লিখিতভাবে চায়, তাহলে আইন মোতাবেক প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন শাহিন।

(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ১২১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে: তারেক রহমান 
আকাশপথ খুলে দিয়েছে পাকিস্তান
বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে অতিথির আসনে তামিম ইকবাল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা