উদীচী ফ্রান্স সংসদের দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠানমালা

একুশ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে উদীচী ফ্রান্স সংসদ দিনব্যাপী কার্যক্রমের প্রথম ভাগে উবারভিলিয়ে ভাষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত ‘হোপা বেঙ্গলি’তে অংশগ্রহণ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ‘পন্তা’ শহরের এক সমবায় ক্যান্টিনে আয়োজিত এই পর্বের শুরুতে ফরাসি এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বাঙালি খাবার তৈরির পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি শেখানো হয়।

এর পাশাপাশি চলতে থাকে বাংলা বর্ণমালা পরিচিতি ও শব্দ গঠনসহ বাংলায় কিছু জরুরি কথোপকথনের অনুশীলন। এরপর শুরু হয় ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব।

এই পর্বে নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি কিরণ্ময় মণ্ডল, সহযোগিতা করেন সংগঠনের সম্মানিত উপদেষ্টা দীপক নিকোলাস গোমেজ, পরবর্তীতে যুক্ত হন সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল চন্দ্র মিশেল। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে এই পর্ব চলতে থাকে দুপুর ১টা ৪৫ পর্যন্ত।

একুশ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় ভাগে ছিল ৫২র ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।

এই আয়োজনে 'বাহান্নোর বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা উপলক্ষে উবারভিলিয়ের ভাষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়। দুপুর ১২টা থেকে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এখানে জড়ো হতে থাকেন।

সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল চন্দ মিশেল, মঞ্চ ও সাজসজ্জা সম্পাদক এলান খান চৌধুরীর নেতৃত্বে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী শহীদ মিনার নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

বিকাল ৩টায় উপস্থিত সবাইকে একুশ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানান উদীচীর সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আলী দুলাল। এরপর সভাপতি কিরণ্ময় মণ্ডলের আমন্ত্রণে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- উবারভিলিয়ে পৌরসভার প্রথম সহকারী মেয়র পিয়্যার সাক এবং কমিশনার মাসিনিসা ওচিন।

বক্তারা সকল মাতৃভাষা রক্ষা এবং চর্চার পথ উন্মুক্ত করার জন্য উদীচীর নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানানোসহ '৫২ র ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর বক্তব্য দেন- সেইন স্যেন স্যানদোনী জেলার কাম্পুস ফ্রাঙ্কোফোনের পক্ষ থেকে ম্যাডাম বাম্বু কামাহা। উদীচীকে এই আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানান এবং ভবিষ্যতে অন্য শহরে এই উদ্যোগ গ্রহণে উদীচীর সাথে এক সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সবশেষে বক্তব্য দেন- উদীচী অন্তঃপ্রাণ ভাষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি কার্লোস সামেদু। শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের পর প্রথমে উবারভিলিয়ে পৌরসভা এবং পরে অন্য নেতৃবৃন্দ অস্থায়ী শহীদ মিনারের বেদীতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং এক মিনিটের নীরবতা পালন করেন। এর পরপরই সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আলী দুলালের তত্ত্বাবধানে প্রবাসী সংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ইপিএস কমিউনিটি ইন ফ্রান্স, সিপিবি ফ্রান্স শাখা, উদীচী ফ্রান্স সংসদ, যুব ইউনিয়ন ফ্রান্স শাখা অন্যতম।

এছাড়াও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর উপস্থিত সকলে সারিবদ্ধভাবে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পুস্পার্ঘ অর্পণের পর বাংলা ভাষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিশু কিশোরদের একুশের গান এবং কবিতা পরিবেশিত করেন । অংশগ্রহণে ছিল - দ্বিপান্বীতা, সম্ভার, অন্তরা, অর্ণব, সকাল, জয়ন্ত, অমিত, শ্রেয়া এবং নেহা।

এরপর বড়দের পরিবেশনায় সংগীত পরিবেশন করেন স্বপ্না জ্যাকলিন পিরিছ, চয়ন বড়ুয়া এবং রোজী মজুমদার। কবিতা আবৃত্তি করেন সম্পা বড়ুয়া, লোকমান আহমদ আপন এবং কিরণ্ময় মণ্ডল।

অনুষ্ঠানে তবলায় সঙ্গত করেন লিটন লুইস সিং ও মন্দিরায় চয়ন বড়ুয়া।

বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ শেষ পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান উপভোগ করেন ।

অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন- ফ্রান্স উদীচীর সহসভাপতি ও বাংলা স্কুলের সঙ্গীত শিক্ষক রোজী মজুমদার।

আয়োজনের সব শেষে উপস্থিত সকলের জন্য চা-কফির সাথে বাঙালির মুখোরোচক খাবার পরিবেশন করা হয়।

সর্বশেষে সভাপতি ২১ শে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান মালায় উপস্থিত উদীচীর সকল সদস্য এবং বাংলা স্কুলের শিশু কিশোরসহ অভিভাবকদের ধন্যবাদ। বিশেষ করে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য এলান খান এবং দুলাল চন্দ্র মিশেল, মুখোরোচক বাঙালি খাবার তৈরি করে আনার জন্য সংগঠনের সহ-সভাপতি রোজী মজুমদার, সহ সাধারণ সম্পাদক সম্পা বড়ুয়া এবং কোষাধ্যক্ষ রুমানা আফরোজকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ।

এছাড়াও আয়োজনে বিশেষ ভূমিকার জন্য উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য রজত রায় রাজু, সলিমুল্লাহ সিদ্দিকী রানা , দীপক নিকোলাস গোমেজ, সহসভাপতি পলাশ বড়ুয়া এবং সাখাওয়াত হোসেন হাওলাদার, কার্যকরী পরিষদ সদস্য উত্তম কুমার কর্মকার, সদস্য খালিদুর রহমান সাগর, ইপিএস কমিউনিটি ই ফ্রান্স-এর সংগঠকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষ করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৬ফেব্রুয়ারি/এলএ)