উৎসবে দামবৃদ্ধি

মাংস-মুরগি থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন ক্রেতারা, চক্র ব্যবসায়ীদের প্রতি ‘ঘৃণা’

পুলক রাজ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪০ | প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০২৩, ০৯:৩২

রাজধানীসহ সারাদেশে ধর্মীয় উৎসব এলেই সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বছরের পর বছর এই অপব্যবসা চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও শবেবরাতকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন মাংসের দোকানে সেই পুরোনো কৌশল নেন ব্যবসায়ীরা। হুট করেই সব ধরনের মাংসের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে ক্রেতারা পড়েন বিপাকে। তারা যে কোনো উৎসব, বিশেষ করে ধর্মীয় উৎসব ঘিরে দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের প্রতি নানা রকম নিন্দা ও ঘৃণাসূচক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। ‘তারা মানুষ নয়’- এমন কথাও শোনা গেছে ক্রেতার মুখ থেকে। মাংস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেও দেখা গেছে এবার শবেবরাতে।

সরজমিনে দেখা গেছে, শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুর, ওয়াপদা রোডসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস গত শবেবরাতকে কেন্দ্র করে ৫০-৭০ টাকা বেড়ে ৮০০-৮২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খাশির মাংস এক হাজার টাকা থেকে ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ১১০০-১১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২৫০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ২৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, গরু-ছাগল ও মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে হয়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর শবেবরাতে মাংস কম বিক্রি হয়েছে।

বুধবার বেলা ১১টার দিকে পশ্চিম রামপুরা কাঁচাবাজার এলাকায় কথা হয় পশ্চিম রামপুরা ওয়াপদা রোড এলাকার বাসিন্দা সাবিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বাসা-বাড়িতে গিয়ে রান্নার কাজ করেন। সাবিনা আক্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গরু-খাশি বলেন আর মুরগি বলেন, এইসব মাংস আমাগোর নাগালের বাইরে চইলা গেছে। তয় শবে-বরাতের সময় ভালো খাবার আমার পোলাপানকে খাওয়ানোর জন্য গরুর মাংস কিনতে গেছিলাম ওয়াপদা রোড এলাকার একটা মাংসের দোকানে। গিয়া তো অবাক হইয়া গেছি! যে বাসায় কাজ করি হেই বাসার মেম সাহেব ৭২০ থাইকা ৭৫০ টাকা কইরা কিইন্না আনেন। আর আমি গিয়া দেখি ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে।’ তিনি এ ধরনের ব্যবসাযীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। বলেন, ‘শবে-বরাত ও রমজান মাসে মানুষ নামাজ পড়ে রোজা রাখে। সারা বছরের গোনাহ মাফের জন্য আল্লাহ্’র কাছে দোয়া করে। আর হেই সময় যদি সবকিছুর দাম বাড়াইয়া দেয়। তহন তো মনে হয় যারা ইচ্ছা কইরা দাম বাড়ায় হেরা মানুষ না।

হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্ট এলাকার বাসিন্দা সবুজ আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের দেশে যেকোনো উৎসবে মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ খাবারের দাম সীমাহীন বেড়ে যায়। আমার মনে হচ্ছে দাম বাড়ানোর পিছনে বাজার সিন্ডিকেট জড়িত আছে।’

সবুজ আহমেদ বলেন, ‘শবে বারতের রাতে মানুষ একটু ভালো খাবার খেতে চায়। আমিও খাশির মাংস কিনতে রামপুরা বাজারে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিকেজি খাশির মাংস ১২০০ টাকা, গরুর মাংস ৮২০ টাকা শুনে না কিনে চলে আসলাম মুরগির দোকানে। মুরগির দাম ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা চায়। পরে ৫০০ গ্রাম ৪০০ টাকায় গরুর মাংস কিনে আনলাম।

শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা সাদাফ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক। গরুর মাংস, খাশির মাংস আর ব্রয়লার মুরগির আকাশ ছোঁয়া দাম। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা মাংস কিনতে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে।

রাজধানীর শান্তিনগর বাজার রোড এলাকার মামা বাগিনা গোস্ত বিতানের মালিক মো. আজাদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি চাই কম দামে গরু-খাশির মাংস বিক্রি করতে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। গরু-ছাগল বেশি দামে কিনতে হয়েছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়েছে। যে গরু ৮০ হাজারে কিনেছি গত সপ্তহে সেই গরু ১ লাখ টাকায় কিনতে হয়েছে। ছাগলেরও একই অবস্থা।

মো. আজাদ হোসেন বলেন, ‘এবার শবেবরাতে গত বছরের তুলনায় কম বিক্রি হয়েছে। মানুষ এত অসহায় হয়ে পড়েছে মাংস ৩০০ গ্রাম থেকে শুরু করে যে যতটুকু ইচ্ছে কিনে নিয়েছে। গরুর মাংস ৮০০ টাকা, খাশির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি করেছি।

রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে সাজিয়া জেনারেল স্টোরের মালিক আল আমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মোটামুটি বিক্রি হয়েছে গরু ও খাশির মাংস। তবে আরও বেশি বিক্রি হতো যতি ৮০০ টাকার কমে বিক্রি করতে পারতাম।’

পশ্চিম রামপুরা ওয়াপদা রোড এলাকার মায়ের দোয়া গোস্ত বিতানের মালিক মো. লিটন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গরুর মাংস ৭৮০ টাকা, খাশি ১১০০ টাকায় বিক্রি করেছি। গরুর দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণেই এতো দামে বিক্রি করতে হয়েছে।’

পশ্চিম রামপুরা কাঁচাবাজার এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী কুদরত পাশা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ২৬০ টাকায় বিক্রি করেছি। বাজারে ক্রেতার ভিড় ছিল কিন্তু ব্রয়লার মুরগির দাম বেশি হওয়ার কারণে মুরগি না কিনে ফেরত গিয়েছেন অনেকে।’

মালিবাগ এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী আফসার আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শবে বরাতকে কেন্দ্র করে সবকিছুর পাশাপাশি মুরগির দামও বেড়েছে। শবেবরাতের সময় প্রতিবছর ধনী-গরিবের ভিড় থাকতো মুরগির দোকানে। তবে এবছর আগের তুলনায় ক্রেতাদের আনাগোনা কম ছিল।

ইন্দিরা রোড এলাকার বাসিন্দা হৃদয় আল নোমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শবে-বরাত শেষ হতেই গরুর মাংস, খাশির মাংস ও মুরগির দাম আগের দামে পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের ওপর মানুষের এ কেমন অত্যাচার! যারা এরকম অমানবিক কাজ করেছে তাদের প্রতি আমি তীব্র নিন্দা জানাই।’

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শবেবরাতকে কেন্দ্র করে খাশির মাংস ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা ও গরুর মাংস ৮০০ থেকে ৮২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আমাদের দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখলেই মাংসের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মাংস নিয়ে অনেক বড় সিন্ডিকেট আছে আমাদের দেশে। এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিলে গরু-খাশির মাংস ৪০০/৪৫০ টাকায় নেমে আসবে। সরকারের পক্ষ থেকে একটু নজর দিলেই এটি সম্ভব।

(ঢাকাটাইমস/০৯মার্চ/পিআর/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এনসিসি ব্যাংকের ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

জাতির জনকের সমাধিসৌধে কেবি কর্মচারী ইউনিয়ন নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদন 

নারী প্রশিক্ষণার্থীদের মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন 

ঋণের সুদহার ১৪ শতাংশের বেশি হবে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের আশ্বাস

ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির পর দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ালেন পাইকাররা

ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে অ্যাস্ট্রা এয়ারওয়েজের চুক্তি স্বাক্ষর

কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিল সাউথইস্ট ব্যাংক

ঈদ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘ট্রাক সেল’ কার্যক্রম উদ্বোধন

বিসিএসআইআর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণা চুক্তি স্বাক্ষর

ঈদ উপলক্ষে ওয়ালটনের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পণ্য উন্মোচন 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :