প্রতি জেলায় ৩০-৫০ বেডের মা ও শিশু হাসপাতাল করা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

খুব দ্রুতই দেশের প্রতিটি জেলায় ৩০-৫০ বেডের আলাদা করে মা ও শিশু হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এটি করা গেলে দেশের মায়েদের প্রসবকালীন যে সমস্যা ও অর্থ ব্যয় হয় তা অনেকটাই কমে যাবে।
রবিবার রাজধানীর মহাখালীস্ত জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) অডিটরিয়াম বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহিদ মালেক বলেন, ‘শেখ হাসিনা রাজনীতি করেন দেশের মানুষের উন্নতির জন্য, দেশের মানুষের স্বস্তিতে রাখার জন্য। কারণ তিনি জাতির পিতার কন্যা, তিনি জাতির পিতার আদর্শে গড়া মানুষ। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছর দেশের দায়িত্ব পরিচালনায় ছিলেন। এই অল্প সময়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, বিসিপিএস, বিএমআরসি প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসকদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদাসহ স্বাস্থ্যখাতের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর সূচনা করে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন আমাদেরকে এখন আর কী কী কাজ করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা তাঁর পিতার আদর্শকে ধারণ করে দেশের মানুষের চিকিৎসা সেবাকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের প্রায় ৩২ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করছেন। অথচ বিএনপি-জামায়াত সরকার দেশের সাধারণ মানুষের জন্য করা বিশেষ এই সেবাটি বন্ধ করে দিয়েছিল। নতুন করে ৫টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৭টি মেডিকেল কলেজ, ২২টি চিকিৎসা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা। প্রতিটি জেলায় বেড সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছেন। জেলা হাসপাতালগুলোতে অতি জরুরি ১০টি করে ডায়ালাইসিস সেন্টার করেছেন। উপজেলা হাসপাতালে বেড বৃদ্ধি করা হয়েছে। চিকিৎসাখাতে আগামীর সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ক্যান্সার, কিডনি, লিভার-চিৎিসাখাতে মানুষ যাতে ঢাকায় না এসে নিজ বিভাগেই নিতে পারে সেজন্য দেশের ৮ বিভাগেই ৮টি অতি উন্নত ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ১৫ তলা বিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলেছে।
‘এর পাশাপাশি আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশের মা ও শিশুদের জন্য আলাদা করে সেবা দেবার জন্য। খুব দ্রুতই দেশের প্রতিটি জেলায় ৩০-৫০ বেডের আলাদা করে মা ও শিশু হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এটি করা গেলে দেশের মায়েদের প্রসবকালীন যে সমস্যা ও অর্থ ব্যয় হয় তা অনেকখানী কমে যাবে।’
শিশু দিবস উপলক্ষে শিশু শ্রম ও বাল্য বিয়ে বন্ধের আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অনেক দোকানে, কল-কারখানায় শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শিশুদের বয়সে শিশুরা খেলাধূলা করবে, আনন্দ করবে। সেখানে শিশুদেরকে যেভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে তা অমানবিক। অন্যদিকে, বাল্যবিয়ে ঠেকাতে সরকার নানারকম প্রচারণা ও উদ্যোগ নিলেও বাল্যবিয়ে অহরহ ঘটছে। বাল্যবিয়ে মানে একজন অপ্রাপ্ত বয়সের ছেলেমেয়ের বিয়ে। এই বয়সে বিয়ে হলে তারা যেখানে নিজেরাই শিশু থাকে, সেই শিশুদের মধ্যে আরেক শিশুর জন্ম হয়। এতে মা ও শিশুর মৃত্যুঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশে সুস্থ-সবল বুদ্ধিমান শিশু হতে হবে। সে পরিকল্পনা নিয়ে আমরা স্বাস্থ্যসেবার কাজ করছি। এখন শিশুশ্রম ও বাল্য বিয়ে সব জায়গাতেই বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন গোটা বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার এই অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেবে এই শক্তি কারো নেই। কোনোভাবেই এই দেশে আর কাউকেই অরাজকতা করতে দেয়া হবে না। সামনে নির্বাচন আসছে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হবে। নির্বাচন বিধি আছে, সেই বিধির বাইরের কোনো প্রস্তাব শেখ হাসিনা গ্রহণ করবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)-এর লাইন ডিরেক্টর আব্দুল মান্নান, জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিনসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ/জেএ/ইএস

মন্তব্য করুন