শরীয়তপুরের যে হাটে বেচাকেনা হয় ২০ লাখ টাকার মরিচ

মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর
  প্রকাশিত : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:০৩| আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:৩৮
অ- অ+

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নওপাড়ায় বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা নওপাড়া হাটে বস্তায় বস্তায় শুকনা মরিচ নিয়ে আসতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আসতে থাকেন মরিচের ক্রেতারা। শুরু হয় হাঁকডাক-বেচাকেনা। এভাবেই প্রতি রবিবার ও বুধবার জমে ওঠে মরিচের এই ঐতিহ্যবাহী হাট। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে মরিচ বেচাকেনা। প্রতি হাটে ৭ থেকে ১০ লাখ টাকার মরিচ বেচাকেনা হয় বলে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের দাবি।

হাটে আসা কৃষক ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা নদী বেষ্টিত এই চরে কয়েকটি হাটের মধ্যে নওপাড়াও একটি হাট। ৩৫ বছরের পুরোনো নওপাড়া হাটের অবস্থান। একসময় এ হাটে মরিচের দু–চারটি আড়ত থাকলেও বর্তমানে ১০-১৫টি আড়ত আছে। একাধিকবার পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয় এ হাট। তবে এ হাটে গাড়ি দিয়ে মালামাল বহন করা সহজ এবং যাতায়াত খরচ কম। সে জন্য চরাঞ্চলে উৎপাদিত মরিচ স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা সপ্তাহের দুই দিন এ হাটে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। চৈত্র ও বৈশাখ—এ দুই মাস এই হাটে চলে মরিচের ধুম কেনাবেচা। প্রতি হাটে দেড় থেকে দুই হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ দেশের বিভিন্ন এলাকার কোম্পানি ও বড় ব্যবসায়ীরা এ হাট থেকে মরিচ কিনে নিয়ে যান।

সরেজমিন বুধবার সকালে দেখা যায়, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আড়তগুলোয় বস্তায় বস্তায় মরিচ নিয়ে বসেছেন। মরিচের ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম এ হাট। বিক্রেতারা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সুরে সুরে ডাকছিলেন আর বলছিলেন, ‘দেখে নেন, বুঝে নেন, একের মাল, ফ্রেশ মাল...।’ বস্তা দেখিয়ে কোনোটি ৩২০ টাকা কেজি, আবার কোনোটি ৩০০ টাকা কেজি দাম হাঁকানো হচ্ছিল। ক্রেতারা মরিচ নেড়েচেড়ে দাম কমাতে বলছেন। দরদামে মিললে মরিচ কিনে নিচ্ছিলেন ক্রেতারা। সাধারণত মরিচের মান ও আকার ভেদে কেজিপ্রতি ১৯০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জয় বাংলা বাজার এলাকার কৃষক সালাউদ্দিন ছৈয়াল তার জমির শুকনা মরিচ ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে এ হাটেই বিক্রি করছেন। এবার দাম বেশি হওয়ায় খুশি তিনি। তিনি বলেন, ‘কখনো উৎপাদন বাড়ে, দাম কমে। আবার কখনো উৎপাদন ও দাম—দুটোই কম থাকে। গত বছর যে জমিতে ৭০ থেকে ৮০ মণ মরিচ হয়েছে, এ বছর মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ মণ মরিচ হয়েছে। দাম পাব কি না, সে শঙ্কায় ছিলাম। এবার কাঁচা মরিচের দাম ভালো পেয়েছি। এখন শুকনা মরিচের দামও ভালো। উৎপাদন কম হলেও দামের কারণে ভালোই লাভ হয়েছে।’

পাশের ঢালী কান্দির আব্দুল হাই গোলদার । তিনি এ হাটে ৩২ মণ মরিচ বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘মরিচ বিক্রির জন্য এ হাট আমাদের প্রথম পছন্দ। এখানে মান বিচারে ন্যায্য দাম পাওয়া যায়। আশপাশের কৃষক-ব্যবসায়ীরা এ হাটে মরিচ নিয়ে আসেন। যারা কিনতে আসেন, তারাও মান যাচাই করে মরিচ কিনতে পারেন।’

মরিচ ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন ফকির বলেন, তিনি প্রতি মৌসুমে নওপাড়ার এ হাট থেকে দেড়-দুই হাজার মণ মরিচ কেনেন। সেগুলো আবার বিভিন্ন আড়ত ও বাজারে পাইকারি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘বৈশাখের মাঝামাঝি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজি পর্যন্ত মরিচ কিনেছিলাম। সে সময় মানসম্মত মরিচও বেশি ছিল। এখন মৌসুমের শেষ দিকে মরিচের আকার ছোট ও ফ্যাকাশে হয়েছে। দামও কমতে শুরু করেছে। গত কয়েকবারের তুলনায় এ বছর এই হাটে মরিচের দাম বেশি। তবে এ হাটে বস্তার ওপরে যেমন মরিচ থাকে, নিচ পর্যন্ত সেই মানের মরিচই পাওয়া যায়। কোনো ছলচাতুরী করা হয় না।’

এ হাটের আড়তের আড়তদার মিজানুর রহমান শামীম বলেন, মরিচের আড়তগুলো শুধু রবি ও বুধবার এক বেলার জন্য খোলা হয়। এ সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা মরিচ বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। তিনি একাই প্রতি হাটে ১ থেকে ৩ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেন। এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ টির বেশি আড়তদার আছেন।

নওপাড়া বাজার কমিটির সভাপতি এনায়েত মৃধা বলেন, ‘আমাদের এ হাট খুবই পরিচিত। এই অঞ্চলের মানুষেরা এখানে মরিচ বিক্রি করতে আসেন, আবার কিনতেও আসেন। মরিচ হাটে তোলার আগে ভালো করে শুকানো, বাছাই কাজ করা হয়। এবার প্রতি হাটে এক থেকে দেড় হাজার মণের বেশি মরিচ বিক্রি হচ্ছে, যার বাজারমূল্য দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। মরিচের আকার, রং ও ধরন অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়। ক্রেতা-বিক্রেতারা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী দামে মরিচ কেনাবেচা করেন।’

নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন মুন্সী মরিচের ভালো বিক্রি হয় বলে জানান।

(ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফের একাধিক প্রদেশে ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, দাবি ভারতের
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের বাড়িতে আ.লীগ নেতার হামলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে আতঙ্ক
পুশ ইন ঠেকাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার বিজিবির
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করা হবে না: আমিনুল হক 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা