মেসির পর এমবাপ্পের প্রতিপক্ষ হলান্ড

শামসুজ্জামান শামস
  প্রকাশিত : ০৪ মে ২০২৩, ১৩:০৬
অ- অ+

লিওনেল মেসি, নিশ্চিতভাবে প্রজন্মের সেরা ফুটবলার তো বটেই অনেক ফুটবল বোদ্ধা মনে করেন সর্বকালের সেরা। এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সমীহ আদায় করা সুপার স্টার। অন্যদিকে কিলিয়ান এমবাপ্পে মেসি, রোনালদোর উত্তরসূরি। নতুন প্রজন্মের এই সেনসেশন মানের বিচারে আছেন হয়তো মেসির খুব কাছে। দীর্ঘ দেড় দশক ফুটবল বিশ্বে রাজত্ব করেছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এই দুই বিশ্বসেরা তারকার ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে কে হবেন তাদের উত্তরসূরি, সেটা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে চলছে তুমুল আলোচনা। কেউ বলছেন ফ্রান্স ও পিএসজি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের হাতেই উঠছে মেসি-রোনালদোর ব্যাটন। আবার একদলের বিশ্বাস নরওয়ে ও ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ডই ভবিষ্যতে কাঁপাবেন ফুটবলবিশ্ব। লিওনেল মেসি নিজের পছন্দ হিসেবে এমবাপ্পেকে বেছে নিয়েছেন। আমেরিকার স্প্যানিশ টিভি নেটওয়ার্ক টিইউডিএনকে এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেছেন, বিশ্বসেরা হওয়ার সব বৈশিষ্ট্য আছে ২৩ বছর বয়সী এমবাপ্পের মধ্যে।

মেসি যোগ করেন ‘কিলিয়ান একেবারে আলাদা ধাঁচের খেলোয়াড়। মাঠে ওয়ান-অন-ওয়ানে বা খালি জায়গায় সে দানবের মতো। ও খুব দ্রুতগতির আর প্রচুর গোলও করে। আমার চোখে সে পূর্ণাঙ্গ একজন খেলোয়াড়। বহুদিন ধরেই সে এমনটা খেলে আসছে। ভবিষ্যতে আমি নিশ্চিত সে সেরাদের একজন হবে।’

কাতার বিশ^কাপে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। ফাইনালে আর্জেন্টাইনদের ৩৬ বছরের শিরোপা খরা ঘুচিয়েছেন মেসি। বিশ^বাসী ফাইনালে মেসি-এমবাপ্পে দ্বৈরথ উপভোগ করেছে প্রাণ ভরে। এ দ্বৈরথে কে জিতেছেন মেসি নাকি এমবাপ্পে তা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করা কঠিন। কাতার বিশ^কাপের ফাইনালে মেসি ও আনহেল দি মারিয়ার গোলে ৩৬ মিনিটের মধ্যেই ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ৮০ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচে এভাবেই এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। যখন মনে হচ্ছিল, একপেশে এক ফাইনালই হতে যাচ্ছে, এমবাপ্পে যেন বলতে চাইলেন, আমি তো আছি!

৯৭ সেকেন্ডের মধ্যে জোড়া গোল করে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান এমবাপ্পে। এরপর অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে মেসির ১০৮ মিনিটের গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ১১৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে যান এমবাপ্পে। জিওফ হার্স্টের পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়ার পর টাইব্রেকারেও লক্ষ্যভেদ করেন এমবাপ্পে। কাতার বিশ^কাপে মেসি ৭টি গোল করেছেন, ৩টি গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। অন্যদিকে এমবাপ্পে নিজে করেছেন ৮ গোল। সহায়তা করেছেন ২ গোলে।

সর্বোচ্চ ৮ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতেন এমবাপ্পে।

কাতারে বিশ^কাপ জয়ের আগে ২০২১ সালে ব্রাজিলকে তাদের মাটিতেই হারিয়ে কোপা আমেরিকা জয়ের মধ্য দিয়ে ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটায় আর্জেন্টিনা। একই বছর আরেকটি শিরোপা জিতে মেসির দল। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে হারিয়ে উঁচিয়ে ধরে ফিনালিসিমা ট্রফি।

লিওনেল মেসির জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোসারিওতে। তার বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন এবং মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন একজন খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। তার পৈতৃক পরিবারের আদি নিবাস ছিল ইতালির আকোনা শহরে। পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে মেসি রোজারিওভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন।

১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে। এ চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার। বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সস মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। হাতের কাছে কোনো কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। বার্সেলোনা মেসির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এর পর মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১০ আগস্ট মেসি দুই বছরের চুক্তিতে ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে যোগ দেন।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ১৮ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে সিনিয়র দলে মেসির অভিষেক হয়। অবশ্য খেলার ৬৩তম মিনিটে বদলি হিসেবে খেলতে নেমে ৬৫তম মিনিটেই তাকে লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয়। ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার লিওনেল মেসি ২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২২ সালে ৫টি বিশ^কাপে অংশ নিয়ে গোল করেছেন ১৩টি।

বিশ^কাপ জয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি ২০২৩ সালে করিম বেনজেমা ও এমবাপ্পেকে টেক্কা দিয়ে ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার জিতেছেন। সেরা তিনে মেসি ও করিম বেনজেমার সঙ্গে ছিলেন এমবাপ্পে। ৫২ পয়েন্ট পেয়ে শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটি জিতেন মেসি। এর বিপরীতে দ্বিতীয় হওয়া এমবাপ্পে পেয়েছিলেন ৪৪ পয়েন্ট। ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হন রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি স্ট্রাইকার বেনজেমা।

ফিফা দ্য বেস্ট অ্যাওয়ার্ডের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পে দুজন সামনের সারিতেই বসে ছিলেন, পাশাপাশি দুই চেয়ারে। ফিফা দ্য বেস্ট অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা ফুটবলার হিসেবে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো যখন মেসির নাম ঘোষণা করেন, পাশের চেয়ারে বসা এমবাপ্পের দিকে তাকান আর্জেন্টাইন তারকা।

এরপর এমবাপ্পের সঙ্গে হাত মেলান। মঞ্চে যাওয়ার আগে বর্ষসেরা পুরস্কার জয়ের জন্য প্রথম অভিনন্দনটা পিএসজির সতীর্থ এমবাপ্পের কাছ থেকেই পান মেসি। হয়তো এমবাপ্পেও ধরেই নিয়েছিলেন পুরস্কারটা মেসির হাতেই উঠতে যাচ্ছে। হাসিমুখেই তাকে অভিনন্দন জানান ফরাসি তারকা।

শুধু অনুষ্ঠানের সময় অভিনন্দন জানিয়েই দায়িত্ব সারেননি এমবাপ্পে। অনুষ্ঠান শেষে মেসিকে অভিনন্দন জানান তিনি। আর সেটা করতে তিনি বেছে নেন ইনস্টাগ্রাম। নিজের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এমবাপ্পে লিখেন, ‘লিও মেসিকে অনেক অনেক অভিনন্দন।’

এটুকু লিখেই থেমে যাননি এমবাপ্পে। ৮ গোল করে কাতার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া এমবাপ্পে সহজভাবেই মেনে নিয়েছেন মেসির শ্রেষ্ঠত্ব। ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছেন, ‘তুমিই সেরা।’ ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কারে মেসির সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এমবাপ্পের নামই শোনা যাচ্ছিল। ফুটবল ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা এমবাপ্পে ২০২২ সালে ছিলেন দুর্দান্ত ছন্দে। ক্লাব আর জাতীয় দলের জার্সিতে নিজের সেরাটাই উপহার দিয়েছেন এই ফরাসি তারকা।

২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ^কাপে দিদিয়ে দেশমের অধীনে শিরোপা জয় করে ফ্রান্স। সেই আসরের নকআউট এবং ফাইনালে গোল করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফ্রান্সের হয়ে বিশ^কাপে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা এবং পেলের পর দ্বিতীয় তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ^কাপের ফাইনালে গোল করেন তিনি। কাতার বিশ^কাপে দিদিয়ে দেশমের তুরুপের তাস এমবাপ্পে ৮ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতেন।

এমবাপ্পে প্রথম বিশ^কাপ খেলেন ২০১৮ সালে। সেখানেই ছড়ান আলো। বিশ^কাপে করেন চার গোল। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার এমবাপ্পে দুই বিশ^কাপে করেছেন ১২ গোল।

কিলিয়ান এমবাপ্পে ১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে খেলেন ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মানের (পিএসজি) হয়ে। ২০০৪-০৫ মৌসুমে ফরাসি ফুটবল ক্লাবে যুব পর্যায়ে খেলার মাধ্যমে ফুটবল জগতে প্রবেশ করেন এমবাপ্পে। পরবর্তীকালে মোনাকোর যুবদলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি ফুটবল জগতে ভালোভাবে প্রবেশ করেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ফরাসি ক্লাব মোনাকো যুব এবং মোনাকোর মূল দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন। যেখানে তিনি ৩ মৌসুম অতিবাহিত করে মোনাকোর হয়ে ৪১ ম্যাচে করেন ১৬ গোল। মাঝে তিনি এক মৌসুমের জন্য পিএসজির হয়ে ধারে খেলেন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে প্রায় ১৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে মোনাকো হতে পাড়ি জমান পিএসজিতে। যেখানে তার সতীর্থ হিসেবে আছে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি এবং ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার নেইমার।

২০১৪ সালে ফ্রান্স অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে ফ্রান্সের বয়সভিত্তিক পর্যায়ে এমবাপ্পের অভিষেক হয়। প্রায় ২ বছর ফ্রান্সের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেলার পর ২০১৭ সালে ফ্রান্সের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষিক্ত হন তিনি। এমবাপ্পে ২০১৮ ফিফা বিশ^কাপ এবং উয়েফা ইউরো ২০২০ এবং ২০২২-এ অংশগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি বিশেষ কিছু পুরস্কারের মালিক। ২০১৭ সালে গোল্ডেন বয়, ২০১৮ ফিফা বিশ^কাপের সেরা যুব খেলোয়াড়ের পুরস্কার এবং টানা তিন মৌসুম লিগ ওয়ানের শীর্ষ গোলদাতার পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০১৭ সালে মাত্র ১৮ বছর ৩ মাস ৫ দিন বয়সে লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ২০১৮ ফিফা বিশ^কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন। এটাই ছিল তার অভিষেক ম্যাচ।

রাশিয়া বিশ^কাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে বিশ^কাপে অভিষেক হয় তার। পেরুর বিপক্ষে প্রথম বিশ^কাপে গোলের দেখা পান। ২০২২-২৩ মৌসুমে সর্বোচ্চ আয় করবেন এমন ফুটবলারদের তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস। আর বছর ধরে চলা মেসি-রোনালদোর দ্বৈরথ থামিয়ে তালিকায় সবার উপরে উঠেন এই তারকা। এছাড়া রিয়াল মাদ্রিদের দেয়া বিশাল অঙ্কের প্রস্তাব ফিরিয়ে আরো পাঁচ বছরের জন্য পিএসজিতে চুক্তি নবায়ন করেন তিনি।

মেসির অ্যাসিস্ট থেকে এমবাপ্পের গোল কিংবা মেসির গোলে এমবাপ্পের অ্যাসিস্ট। পিএসজিতে এরকম দৃশ্য দেখা যায় অনেক ম্যাচেই। ক্লাব সতীর্থ হিসেবে এই দুই তারকার একে অপরের গোল উদযাপনের দৃশ্যও ধরা পড়ে দর্শকদের চোখে। তবে এর বাইরেও ব্যক্তিগত কিংবা দলীয় অর্জনে মেসি এবং এমবাপ্পে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।

পেশাদার ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। শেষ বয়সে এসেও খেলছেন শৈল্পিক ফুটবল। যেকোনো সময় বিদায় বলে দিতে পারেন আন্তর্জাতিক ফুটবলকে। আর এমবাপ্পের ক্যারিয়ার মাত্র শুরুর দিকে। ২০১৮ বিশ্বকাপে নিজের জাত চেনানোর পর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন ২০২২ বিশ্বকাপেও। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতেছেন এমবাপ্পে। শুরুর দিকে মেসিও ছিলেন দুর্দান্ত। দুই তারকার জন্ম দুই মহাদেশে হওয়ার পরেও এই দুই তারকার দ্বৈরথ দেখেছে বিশ্ব। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেয়া হবে ফুটবলারদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ পুরস্কার ব্যালন ডি’অর। গত দেড় যুগ ধরে এ ট্রফিটি নিজেদের করে নিয়েছিলেন মেসি ও রোনালদো। মাঝখানে লুকা মদ্রিচ একবার জিতে নেন এই পুরস্কার। আর সর্বশেষ ব্যালন ডি’অর জেতেন করিম বেনজামা। তবে এবার দ্বৈরথ হবে মেসি এবং এমবাপ্পের মধ্যে। হয়তো এটিই হতে পারে এই দুই তারকার শেষ দ্বৈরথ। মেসি তার ক্যারিয়ারে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ৭টি। এমবাপ্পে এখনো একটিও না জিতলেও ভবিষ্যতে জিততে পারেন। তবে মেসিকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন কি না তা নিশ্চিত নয়।

সম্প্রতি ফিফাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মেসিকে ‘ইতিহাসের সেরা’ উপাধি দিয়েছেন নেইমার। সেই সঙ্গে পিএসজিতে তার আক্রমণভাগের সঙ্গী কিলিয়ান এমবাপ্পেকেও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি। তার মতে, ফরাসি ফরোয়ার্ড হচ্ছেন ‘ফেনোমেনন’। নেইমার বলেন, ‘মেসির সঙ্গে খেলা ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা এবং সেই থেকে আমরা বন্ধুও হয়ে গেলাম। আমি যাদের খেলতে দেখেছি, তাদের মধ্যে মেসিই ইতিহাসের সেরা। মেসির সঙ্গে বার্সায় ৪ বছর খেলেছেন নেইমার। এই সময়ে দুজনে মিলে জিতেছেন ৮টি শিরোপা, যার মধ্যে আছে চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা এবং ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপাও।

তবে বর্তমানে ফরাসি জায়ান্ট পিএসজিতে নতুন সতীর্থদের সঙ্গে খেলছেন নেইমার। তার মতে, নতুন সতীর্থদের মধ্যে ২৩ বছর বয়সী কিলিয়ান এমবাপ্পের মধ্যে ‘ফেনোমেনন’ হওয়ার সব যোগ্যতাই আছে।

এমবাপ্পেকে নিয়ে নেইমার বলেন, ‘এমবাপ্পে হলো ফেনোমেনন। ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার সব যোগ্যতাই আছে তার। তাকে সতীর্থ হিসেবে পাওয়া আমার জন্য অনেক সম্মানের ব্যাপার। মাঠে এবং মাঠের বাইরে আমাদের বোঝাপড়া দারুণ এবং আমি তাকে ভালোবাসি।’

ব্রুশিয়া ডর্টমুন্ড ছেড়ে গত বছর পাঁচ বছরের চুক্তিতে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেন হলান্ড। ইউরোপীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ মহাতারকাকে পেতে আগ্রহী ছিল চেলসি কিংবা রিয়াল মাদ্রিদের মতো বড় বড় জায়ান্টও। শেষ পর্যন্ত ৭৫ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লজের বিনিময়ে তাকে দলে ভেড়ায় সিটি। প্রিমিয়ার লিগে এসে শুরুটা যেভাবে করেছেন এই ধারা বজায় রাখতে পারলে লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো তারকা ফুটবলারদের বেশ কয়েকটি রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে বেশি দিন লাগবে না তার। এমনকি এখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছে মেসি-রোনালদো যুগের পর ফুটবলে রাজত্ব করবেন হলান্ড।

ইতোমধ্যে নিজের জাত চিনিয়েছেন ২২ বছর বয়সি এই তারকা। সবচেয়ে কম বয়সে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৩০ গোলের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে করেছেন ৩০ গোল। তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের এক ম্যাচে করেছেন ৫ গোল কীর্তি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে প্রথমার্ধে একাধিক হ্যাটট্রিকও করেছেন তিনি। এছাড়া দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই ক্লাবের হয়ে অন্তত ১০ গোলের কীর্তি গড়েছেন হলান্ড। এগুলো শুধু তার চ্যাম্পিয়নস লিগের রেকর্ড।

এক সেশনে ম্যানসিটির জার্সি গায়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪২টি গোলের রেকর্ডও হলান্ডের দখলে। এই মৌসুমে একাই করেছেন ছয়টি হ্যাটট্রিক। প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে এক সেশনে সর্বোচ্চ ৪৪টি গোল করেছেন রুড ফন নিস্টলরয় ও মোহাম্মদ সালাহ। মাত্র ৩টি গোল করলে সালাহ ও নিস্টলরয়কে ছাড়িয়ে শীর্ষে উঠবেন এই তারকা। এছাড়া ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলে অবদান রয়েছে হলান্ডের।

সিটিজেনদের হয়ে শেষ দুই ম্যাচেই হলান্ড করেছেন ৮ গোল। যেখানে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে লাইপজিগের বিপক্ষেই করেন ৫ গোল। সেটিও আবার ৫৭ মিনিটের মধ্যে। আর এফএ কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বার্নলির বিপক্ষে করেছেন ৩ গোল। দুই ম্যাচেই ৬৩ মিনিটে তুলে নেন সিটিজেনদের কোচ। লাইপজিগের বিপক্ষে ৫ গোল করে রেকর্ড বইয়ে উঠলেও আরও সুযোগ ছিল তার। এর আগে চ্যাম্পিয়নস লিগের এক ম্যাচে ৫ গোল ছিল মেসিরও। মাঠে থাকলে হয়তো মেসির রেকর্ড ভেঙে দিতেন তিনি। তবে বর্তমান পারফরমেন্সেও এই ফরোয়ার্ডের কাছে প্রত্যাশাও বাড়ছে। এমনটাই মনে করছেন সিটিজেনদের কোচ পেপ গার্দিওলা। তিনি বলেন, ‘সামনে হলান্ড একটি বড় সমস্যায় পড়বে। প্রতি ম্যাচেই লোকেরা তার থেকে তিন-চারটি গোল আশা করবে। কিন্তু এমনটি তো সম্ভব নয়। তবে আমি জানি সে এসব পাত্তা দেয় না। জীবন নিয়ে সে ইতিবাচক এবং আশাবাদী। আমরা ভালো খেলতে থাকলে হলান্ড গোল করে যাবেই।’

লম্বা সময় ধরে লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দ্বৈরথ ফুটবল অনুরাগীদের দারুণ আনন্দ দিয়ে গেছে। তবে সব ভালো কিছুই নাকি কখনো না কখনো শেষ হতে হয়। সে নিয়ম মেনে ইতিমধ্যে প্রায় শেষ দেখে ফেলেছে মেসি-রোনালদোর এই লড়াই। তবে প্রকৃতি নাকি কখনো শূন্যস্থান পছন্দ করে না। এখন নতুন দিনের ফুটবলীয় দ্বৈরথ হিসেবে দেখা হচ্ছে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও আর্লিং হলান্ডকে। এ মৌসুমে ক্লাব ফুটবলে দারুণভাবে লড়েছেন এ দুজন। হলান্ড অবশ্য এমবাপ্পের সঙ্গে দ্বৈরথ নিয়ে একেবারেই ভাবছেন না। মেসি-রোনালদোর দ্বৈরথের প্রশংসা করলেও এমবাপ্পের সঙ্গে নিজের লড়াই নিয়ে ভাবতে চান না নরওয়েজীয় এই স্ট্রাইকার।

এমবাপ্পের সঙ্গে ভবিষ্যতের দ্বৈরথ নিয়ে হলান্ড বলেছেন, ‘আমি নিজেকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করতে পছন্দ করি না। আমি মনে করি, আপনাকে নিজের মতো হতে হবে। তাই আমি তুলনা বা এমন কিছু পছন্দ করি না।’

এ সময় মেসি-রোনালদোর দ্বৈরথের কথাও মনে করিয়ে দেন এই ম্যানচেস্টার সিটি ফরোয়ার্ড। তিনি আরও যোগ করেন, ‘১০ বছর ধরে সংবাদমাধ্যমগুলো মেসি ও রোনালদোকে নিয়ে এমনটা করেছিল। আমার মনে হয়, এটা তাদের আরও ভালো কিছু করার জন্য প্ররোচিত করেছে। এটা ইতিবাচক ব্যাপার। বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ একে অপরের বিপক্ষে ছিল। এটা সঠিক দ্বৈরথ ছিল। তবে সত্যি কথা আমি এটা নিয়ে ভাবি না।’

তবে এর আগে সামনের দিনগুলোতে এমবাপ্পে-হলান্ডের লড়াই জমে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা মার্সেল দেশাই। বিশ্বকাপে দারুণ নৈপুণ্য দেখানো এমবাপ্পেকে নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, এমবাপ্পে একেবারে আলাদা খেলোয়াড়। তার স্টাইল মেসি-রোনালদোর চেয়ে ভিন্ন। সে ভিন্ন প্রজন্মের খেলোয়াড়। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে তাকে দুই পাগলাটে খেলোয়াড়ের সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব না। তবে এমবাপ্পেও এসব অর্জন করতে পারে। সে ভিন্ন ধরনের খেলোয়াড়। আপনি যদি গতির দিকে তাকান, যে গতিতে সে ছোটে তা অসাধারণ। হলান্ডের সঙ্গে মিলে সে সম্ভবত এই প্রজন্মের দুই সেরা খেলোয়াড়।’

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আবেগবশত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না, সরকারকে রিজভী 
জুলাই বিপ্লবে শহিদ ৮ লাশের পরিচয় উদঘাটনে সহায়তার আহ্বান
জবিতে বাজেট বৃদ্ধি ও আবাসন ভাতার দাবিতে গেটলক কর্মসূচি
গাইবান্ধায় ঝড়ের রাতে ফেরার পথে প্রাণ গেল র‍্যাব সদস্যের 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা