পঙ্কজ ভট্টাচার্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন: ড. কামাল হোসেন
‘প্রবীণ রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি কোনো সময় ন্যায়ের কথা বলতে পিছ পা হননি। কেউ উনাকে কোনো সময় ভয় দেখিয়ে উনার পথ থেকে সরাতে পারেননি।’— এসব বলেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুন্নেসা মুজিব মিলনায়তনে পঙ্কজ ভট্টাচার্য স্মরণে নাগরিক স্মরণসভায় এসব বলেন তিনি। স্মরণ সভায় পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ড. কামাল হোসেন বলেন, পঙ্কজ ভট্টাচার্যের মতো দ্বিতীয় কাউকে আমরা আমাদের মাঝে পাবো বলে আমি মনে করি না। উনি আমাদের মাঝে যতদিন ছিলেন উনার আয়ু হয়েছিল বলে অনেকদিন আমাদের দেশের মানুষের অধিকার নিয়ে লড়াই করতে পেরেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষকে সংঘবদ্ধ করে লড়াই করতে পেরেছেন। তার সেই ঐতিহ্যকে সামনে রেখে তরুন সমাজ অনুপ্রানিত হোক এটাই আমি আশা করবো। উনার সম্পর্কে যতটুকু আমাদের তরুন সমাজ জেনেছে আরও জানানো দরকার যে কিভাবে উনি নিষার্থ ভাবে মানুষের সেবা দেশের সেবা করেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। উনি কোন সময় পিছু পা হন নি। কেউ উনাকে কোন সময় ভয় দেখিয়ে উনার পথ থেকে সড়াতে পারেননি।
নাগরিক স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়াও অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারওয়ার আলীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ও তার শুভাকাঙ্খী এবং পরিবারবর্গ।
গত ২৪ এপ্রিল রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পঙ্কজ ভট্টাচার্য। পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান ভক্ত, শুভানুধ্যায়ী, সহযোদ্ধা, বন্ধু, স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শহীদ মিনারে তাকে জানানো হয় রাষ্ট্রীয় সম্মানও। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পোস্তগোলার মহাশ্মশানে। সেখানে তার শেষকৃত্য হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য সবশেষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৭ এপ্রিল থেকে ঢাকার পান্থপথের ‘হেলথ অ্যান্ড হোপ’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর ঈদের দিন শনিবার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাজীবন কেটেছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ১৯৫৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন।
গত শতকের ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী, একজন নেতৃস্থানীয় কর্মী ও সংগঠক ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি ১৯৬৬ সালে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ হন।
পঙ্কজ ভট্টাচার্য মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টির গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গঠনের সময় তিনি ছিলেন দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। পরে সম্মিলিত ‘সামাজিক আন্দোলন’নামে দেশের প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন। ২০১৩ সালে তিনি ঐক্য ন্যাপ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।
(ঢাকাটাইমস/১৯মে/কেআর/কেএম)