খুঁটিতে বাঁধা ছোট্ট ইতির জীবন

সুজন সেন, শেরপুর
  প্রকাশিত : ১৮ জুন ২০২৩, ০৯:৩৬
অ- অ+

যে বয়সে গ্রামের দিগন্ত জুড়ে ছুটে বেড়ানোর কথা এবং বইখাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে বন্দী জীবন পাড় করছে ইতি মনি (৮) নামে এক ছোট্ট শিশু। তার বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদীর ভেলুয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে। হতদরিদ্র বাবা ইব্রাহিম পেটের তাগিদে ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করেন।

গ্রামের বাড়িতে মা আর বৃদ্ধা দাদী ইতি মনিকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে খুঁটির সঙ্গে দড়িতে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছেন। আত্মীয়স্বজনরা এ করুণ দৃশ্য দেখে আফসোস করা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।

ইতির স্বজনরা জানায়, দিনমজুর ইব্রাহিমের কন্যা ইতি মনি জন্মের পর তিন বছর ভালোই ছিল। কিন্তু হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা যায় ইতি মনি মধ্যে। নিজের শরীর নিজেই কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত করা পাশাপাশি বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়তো। বাবা ঢাকায় থাকার কারণে গ্রামের বাড়িতে ইতি মনির মা ও বৃদ্ধা দাদী তাকে বেশিক্ষণ চোখে চোখে রাখতে পারছিল না। ইতোমধ্যে ইতি দুবার পুকুরে পড়ে যায় এবং হারিয়েও যায় দুবার। ফলে বাধ্য হয়েই ইতি মনির জীবন সংকটাপন্নের হাত থেকে বাঁচাতে প্রথম অবস্থায় লোহার শেকলে তাকে বেঁধে রাখতে হতো।

স্বজনরা আরও জানান, কিছু দিন আগে বাবা সর্বস্ব বিক্রি করে ইতির চিকিৎসা করান। এতে কামড়ানোর স্বভাব দূর হলেও ধীরে ধীরে বোবা হয়ে যায় ইতি। এক পর্যায়ে ডান হাতও অবশ হয়ে পড়ে। কেউ তার সামনে গেলে নির্বাক চোখে শুধু তাকিয়ে থাকে। বাড়ির উঠানে খুঁটি ঘিরেই তার জীবন চলছে।

এ অবস্থায় ইতি মনির মা-বাবা হাল ছেড়ে দিয়ে মেয়েকে অমানবিকভাবে শেকলে বেঁধে রাখার বদলে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন। অর্থাভাবে দুই বছর আগে সকল প্রকার চিকিৎসাও বন্ধ করে দেন তারা।

দাদী রোকেয়া বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে ঢাকা টাইমসকে বলেন, নাতনিটার চিকিৎসার জন্য যদি সরকার এগিয়ে আসে তবে ভালো হতো ।

এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম ইতি মনির চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ।

আরও পড়ুন: ঈশ্বরদীতে ছাত্রলীগকর্মীকে গুলি করে হত্যা

ইতি মণির মানসিক সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেরপুরের শিশু ও কিশোর বিশেষজ্ঞ এবং শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল আমীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, শিশুটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারলে ভালো হতো। তবে প্রাথমিকভাবে বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে এটা নিউরোলজিক্যাল ডিজিস হতে পারে। তবে উন্নত চিকিৎসা পেলে শিশুটি অবশ্যই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে বলেও মনে করেন এই চিকিৎসক।

(ঢাকাটাইমস/১৮জুন/এসএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কোকোর কবর জিয়ারত করলেন ডা. জুবাইদা রহমান
পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ১২১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা জানাল ভারত ও পাকিস্তান
কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে: তারেক রহমান 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা