সিদ্ধিরগঞ্জে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ, বিএনপিতে বিরোধ

দুয়ারে কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক ময়দানে দৌড়ঝাঁপে কমতি রাখছেন না বড় এ দল দুটি। তবে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য থাকলেও বিএনপিতে রয়েছে চরম বিরোধ।
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতার বাহিরে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। বিগত বছরগুলোতে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও গেল বছর থেকে পুরোদমে মাঠে নেমেছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে দ্বন্দ্ব প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে না, খোদ নিজ দলের মধ্যেই স্পষ্ট দেখা দিয়েছে।
রাজধানীর সন্নিকটের থানা এটি। দেশের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভূমিকা রাখেন এখানকার রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওতায় পড়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা।
বর্তমান সরকারদলীয় প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একে এম শামীম ওসমানের রাজনৈতিক অনুসারীরা মাঠ দখলে রেখেছে লম্বা সময় ধরে। দীর্ঘদিন থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটির পরিবর্তন না হওয়াতে অনেকই দলের পদবঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু পদ না পেলেও ঐক্য রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে।
অপরদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দুটি ভাগ দেখা গেছে। এখানে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সাবেক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নেতৃত্ব আলাদা-আলাদা ভাগে নেতাকর্মীরা। যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি, আন্দোলন, সংগ্রামে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারের দেখা মিলে তাদের। নিজেদের এমন দ্বন্দ্বে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা দলের ত্যাগী কর্মীদের।
জানা গেছে, বহুদিন কমিটি না থাকায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন। তবে সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল দীর্ঘ ২২ বছর পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সবার সম্মতিক্রমে ৫ সদস্যবিশিষ্ট সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটি করা হয়। পরবর্তীতে ৯৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে সক্রিয় তারা।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, তারা দোটানার মধ্যে রয়েছে সিনিয়র নেতাদের জন্য। দলের এ ক্রান্তিকালে এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীনদের পাল্লা ভারী হচ্ছে।
নিজ দলের নেতাকর্মী মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি গিয়াসউদ্দিন যখন থেকে নেতৃত্ব এসেছে তখন থেকে জাতীয়তাবাদী দল নারায়ণগঞ্জে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তার নেতৃত্ব এখন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয়। তবে দলের এ ক্রান্তিকালে মামুন মাহমুদের সঙ্গে আমাদের বিরোধের লাভবান অবৈধ সরকার দলীয় এমপি শামীম ওসমান।
তিনি আরও বলেন, মামুন মাহমুদও দল করেন আমরা দল করি। তবে আমরা যেকোনো আন্দোলন সংগ্রাম করলে প্রশাসন ও অবৈধ সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা রাস্তায় উঠতে দেননা। অথচ মামুন মাহমুদের কোনো প্রোগ্রামে পুলিশি বা প্রতিপক্ষের বাধা নেই। সুতরাং এটাই স্পষ্ট যে সে শামীম ওসমানের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করে।
থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম বলেন, বিএনপি একটি সুসংগঠিত বড় দল বাংলাদেশে। দলে কাজ করতে গেলে বিভক্তি থাকেই। আমরা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে যুদ্ধ করে যাচ্ছি।
একই দলের হয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের জেলা সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন সাহেব, মামুন মাহমুদকে ডেকেছিলেন একসঙ্গে কাজ করার জন্য। তবে তিনি কেনো আসেনা সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু তার এমন কর্মকাণ্ডে কিছুসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরাট ক্ষতি হয়েছে। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে তো আমরা অংশগ্রহণ করবো। তখন দল থেকে যাকে নমিনেশন দেয়া হবে তার জন্যই আমরা কাজ করবো। বিভক্তিতে আসছে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না।
এবিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শাহআলম হীরা বলেন, আমরা রাজনীতি করি জিয়াউর রহমানের আদর্শে। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশে অবৈধ এ সরকারের পতনের জন্যে মামলা-হামলার শিকার হচ্ছি। আমাদের নেতা তারেক জিয়ার দিকনির্দেশনায় মাঠে আছি অন্য কারো নেতৃত্বে নয়।
বর্তমান জেলা বিএনপির নেতৃত্বের পরিবর্তে মামুন মাহমুদের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সরকারের পতনের উদ্দেশ্যে আন্দোলন করি। এখানে কারো নেতৃত্বে নয়, কেন্দ্রের নির্দেশ মূলবিষয়। একদফা দাবি নিয়ে নেমেছি। গেল ১৪ বছরে তারা কোথায় ছিলেন যখন আমাদের উপর অমানবিক অত্যাচার হয়ে আসছিল। আমি কারো বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী দল। আমাদের দলের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। কারণ আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। আমাদের নেতা একে এম শামীম ওসমানের নেতৃত্ব দীর্ঘদিন যাবত নেতাকর্মীরা সম্মিলিতভাবে জনগণের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিরোধী দল থাকাকালীন সময়েও আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করে ক্ষমতায় এসেছি।
বিএনপিতে বিরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপিতে বিরোধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ তাদের নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতা নেই। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চর্চ্চা করে আসছে। এদের জনগণ এখন আর চায় না। আমরা তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যের রাজনীতি করে। তবে আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় নেতাকর্মীরা কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচন আসলে আমাদের থানার নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে যায়। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে বলেই আমরা জয়ী হই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে নিয়ে মন্তব্য করে মজিবুর রহমান বলেন, সে তো অন্ধ, চোখে দেখে না। যদি চোখে দেখতেন তাহলে তো আর উল্টাপাল্টা কথা বলতো না। দেশের উন্নয়ন রাজাকারের পছন্দ হয়না। তারা দেশকে কি নেতৃত্ব দিবে? যারা দেশের সম্পদ লুট করে খায়। বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে আমাদের ঐক্য রয়েছে। জনগণ আমাদের আবার জয়যুক্ত করবে।
(ঢাকাটাইমস/২৫ আগস্ট/ইএইচ)

মন্তব্য করুন