মেরামত শেষে অক্টোবরে চালু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ

চলতি মাসের শুরুতে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের সংস্কার হবে আগামী দুই সপ্তাহেই। ফলে আগামী সেপ্টেম্বরের বদলে এই রেলপথ চালু হবে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
এর আগে এই প্রকল্পটি সেপ্টেম্বরেই চালুর আশা করা হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। বন্যার আগে প্রকল্পের কাজ ৮৭ ভাগ সম্পন্ন হয়েছিল। প্রকল্পটি চালু হলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ৪৫তম জেলা হিসেবে বাংলাদেশ রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে।
শনিবার সকালে ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য জানান চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মুফিজুর রহমান।
তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রকল্পটি প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। সে কারণে আগামী সেপ্টেম্বরে চালুর আশা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম দিকে প্রবল বৃষ্টিতে রেল লাইনটির ৫০০ মিটারের মতো অংশ পানির নিচে চলে যায় এবং রেললাইনের নিচের মাটি, পাথর সরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত অংশের কাজ গত মঙ্গলবার থেকে শুরু করেছি। সেখানে নতুন আরও তিনটি কালভার্ট করতে হচ্ছে। এটি শেষ হতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। সেজন্য সবমিলিয়ে অক্টোবরের ১৫ তারিখের আগে প্রকল্পটির সম্পূর্ণ কাজ শেষ করা যাবে না। আশা করছি অক্টোবরের মাঝামাঝি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এবং ট্রেন চলাচল উপযোগী হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন।
প্রকল্পের তথ্যমতে, অতিভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নির্মাণাধীন রেললাইনের সাতকানিয়া অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাথর ও মাটি সরে গিয়ে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী এলাকায় রেললাইন বসে যায়। পর্যাপ্ত সংখ্যক কালভার্ট না থাকায় পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি রেললাইনে বাধা পেয়ে সরে যেতে পারেনি।
তবে ওই রেলপথে যেখানে ১৪৫টি সেতু ও কালভার্ট করার কথা ছিল সেখানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রয়োজন মনে হওয়ায় মোট ১৭৩টি সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। মূল প্রকল্পের চাইতেও ৪০টিরও বেশি কালভার্ট করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত (১৮ আগস্ট) শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদর্শন করেছেন রেল সচিব হুমায়ুন কবির। এ সময় তিনি বলেন, টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে বসে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন দ্রুত ঠিক করা হবে। সেপ্টেম্বরের দিকে সব কাজ শেষ করে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ট্রায়াল রানের পর সেই মাসের শেষ সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ চালু করা হবে।
বন্যার কারণে রেললাইনের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে ব্যয় বাড়বে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেছিলেন, ব্যয় সীমা বাড়বে না। যে ব্যয় নির্ধারণ রয়েছে, তার মধ্যেই করা হবে। টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে বৈঠকের পর সংস্কার কাজের সিদ্ধান্ত হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশনসের এমডি আব্দুল করিম ভূঁইয়া বলেন, মাত্র ৫০০ মিটার জায়গা থেকে পাথর সরে গেছে স্রোতের টানে। পাথর রিপ্লেস হয়ে যাবে। অলরেডি আমরা কাজ শুরু করেছি। যে জায়গায় পাথরের নিচে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এগুলো আমরা মেরামত করে ফেলব। এটা খুব সময়ের বিষয় না। এটার জন্য পুরো প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় পাহাড়ি ঢলে পাথর ও মাটি সরে যাওয়ায় নির্মাণাধীন কক্সবাজার রেললাইনের নিচে এখনো পানি জমে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে মেরামত কাজ শুরু করতে পারিনি। টেকনিক্যাল টিমের সাথে তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত দেবেন কখন মেনটেইনেন্স শুরু হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল করিম ভূঁইয়া বলেন, সরেজমিনে আপনারা দেখেন। ছবিগুলো নেন। এখানে কোনো স্লিপারও বাঁকেনি, রেললাইনও বাঁকেনি। এখানে ব্যালাস্টের ওপর স্লিপার থাকে, স্লিপারের ওপর রেললাইন থাকে। ব্যালাস্ট সরে যাওয়াতে স্লিপার বসে গেছে। এ কারণে রেললাইন বসে গেছে। এটা যদি আপনারা অ্যাঙ্গেলে ছবি নেন, তখন মনে হবে রেললাইন বেঁকে গেছে। এখন আপনারা এবং আমরাও রেললাইনের পাশে আছি। আপনারা দেখেন কোথাও কিন্তু রেললাইন বাঁকেনি।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পে। হাতি চলাচলের জন্য রয়েছে আন্ডারপাস। নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি স্টেশন।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালে ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ৩০ জুন। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। এ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলায় প্রায় এক বছর আগেই তা সমাপ্ত হতে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। রেলপথটি নির্মিত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।
(ঢাকাটাইমস/২৬ আগস্ট/ইএইচ)

মন্তব্য করুন