তাড়াশে ২৭ কিলোমিটার খাল খনন: বৃদ্ধি পেয়েছে ফসল ও মাছের উৎপাদন

শায়লা পারভীন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৬

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এলজিইডির টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ২৭ কিলোমিটার খাল পুনর্খননের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৮ শতাংশ খাল খননের কাজ শেষ হয়েছে। খাল খননে ফসল ও দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এলজিইডি, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ হ্রাস করে ভূগর্ভস্থ পানি সেচ এর আওতায় তাড়াশ উপজেলার বারুহাস দক্ষিণ ভদ্রাবতী ও তালম ইউনিয়নের উত্তর ভদ্রবতী উপ-প্রকল্পের খাল পুনঃখনন কাজে বারুহাস ইউনিয়নের চৌধুরী বাড়ী জামে মসজিদ থেকে তালম ইউনিয়নের রানীরহাট ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৭ কিলোমিটার খাল পুনর্খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ফলে এ উপজেলায় ধান বেশি উৎপাদিত হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। খালের পানি ব্যবহার করে বিশাল জনগোষ্ঠী উপকৃত হচ্ছেন। এসব খালে প্রাকৃতিকভাবে দেশি মাছের উৎপাদন বাড়বে বলে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখান থেকে মাছ ধরে তাদের আমিষের চাহিদা পূরণ করবে। বাড়তি মাছ তারা বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, এলজিইডির টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ২৭ কিলোমিটার খাল খনন শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৮ ভাগ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। খালটি পুনর্খনন সম্পন্ন হলে প্রায় ১হাজার ৫৫০হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে। এক ফসলি জমি তিন ফসলি জমিতে রূপান্তিরত হবে ও জলাবদ্ধতা দূর হবে। এতে করে প্রায় ২ হাজার ৪৫০ মে.টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে। ইতোমধ্যে এখান থেকে বিশাল জনগোষ্ঠী সুফল পেতে শুরু করেছেন। খালগুলো যাতায়াত, পণ্য পরিবহন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। খাল পাড়ের মানুষ খালে পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারছেন। এসব খালে প্রাকৃতিকভাবে দে

শীয় জাতের মাছ জন্মেছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠি এখান থেকে মাছ শিকার করে তাদের আমিষের চাহিদা পুরণ করছেন।

দক্ষিণ ভদ্রাবতী ও উত্তর ভদ্রাবতী খাল খননের ফলে উপজেলার অন্তত ১হাজার ৫শত ৫০হেক্টর হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা দূর হবে। আগামী বোরো মৌসুমে এই জমিগুলো সেচ ও চাষের আওতায় আসবে। উপজেলায় ফসলের উৎপাদন বাড়বে। এছাড়া ক্ষুদ্রাকার পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সদস্যদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।

বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, আমাদের উপজেলায় সাড়ে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ ভদ্রাবতী ও উত্তর ভদ্রাবতী খাল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে পণ্যপরিবহন, সেচ সুবিধা ব্যাহত হচ্ছিল। বেশ কিছু জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে মাছের উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এলাকার মানুষ পানির কষ্টে ভুগছিলেন। কিন্ত এলজিইডির অর্থায়নে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে সমবায় সমিতির মাধ্যমে খালগুলো খনন করা হয়েছে। সমিতির সদস্যরা পানি ব্যবস্থাপনা, সেচ, মৎস্য শিকার সহ সব কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন। সমিতিতে তারা সঞ্চয় জমা রাখছেন। আবার এখান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে তার আয় বর্ধক কাজ করছেন। এ খাল থেকে এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠি উপকৃত হচ্ছে।

উপজেলার তালম ইউনিয়নের খোশালপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, খাল খনন হয়েছে। এখান থেকে গৃহস্থালী কাজে পানি ব্যবহার কতরতে পারছি। খাল থেকে মাছ ধরে খাচ্ছি। অতিরিক্তি মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি। আমার মত আরো অনেকে এখান থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। খালটি আমাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

উপজেলার তালম ইউনিয়নের নাগরপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সোবাহান ও আব্দুস সামাদ বলেন, খালটি খনন সম্পন্ন হলে তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে। জলাবদ্ধতা দূর হলে জমিতে তিন ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে। আগে জলাবদ্ধতায় জমি চাষাবাদ করতে সমস্যা হত। পানির অভাবে সেচ সুবিধা ছিল না। অসময়ে বৃষ্টি হলে ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে যেত। এখন সমবায়ের ভিত্তিতে খাল খনন হয়েছে। আমরা এর সুফল পেতে শুরু করেছি। এখন আর এ সমস্যা থাকবে না। আশা করছি আগামী বোরো মৌসুমে ভালভাবে বোরো ধানের আবাদ করতে পারব। অতিরিক্ত ফসল ঘরে তুলতে পারব। আমাদের আর অভাব অনটন থাকবে না।

সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শফিকুল ইসলাম জানান, এলজিইডি’র টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ২৭কিলোমিটার খাল খনন শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭৮ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্ষার পানি কমে গেলে বাকি কাজটুকু সম্পূর্ণ করা হব। তিনি আরও জানান, ডিজাইন অনুযায়ী সঠিকভাবে খাল খনন করা হচ্ছে।

((ঢাকাটাইমস/০৮সেপ্টেম্বর/এআর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :