কালীগঞ্জের কাঁকরোল যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

মাহফুজুর রহমান, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
| আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৪১ | প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:১১
কৃষকের কাঁকরোল ক্ষেত, চলছে পরিচর্যা।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ কৃষি অফিস কর্তৃক উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল ও গারারিয়া গ্রামকে নিরাপদ সবজির গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই গ্রামগুলোতে চাষিরা কোনো প্রকার বালাইনাশক ছাড়াই বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সবজির চাষ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এই গ্রামগুলোর চাষ করা কাঁকরোলের রয়েছে বেশ চাহিদা। রাজধানীসহ দেশের আশপাশের বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়েও যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বালু নদী তীরবর্তী গ্রাম বিরতুল ও গাড়ারিয়া। ঢাকার লাগোয়া এই উপজেলার গ্রাম দুটির নিরাপদ সবজির চাহিদা দেশ জুড়ে। বিশেষ করে এই গ্রামে চাষ করা কাঁকরোল উৎপাদন আশেপাশের গ্রামের চাষিদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। কাঁকরোল চাষে ওই গ্রামগুলোর চাষিদের সফলতায় একই ইউনিয়নের বাগদী, পারওয়ান ও পানজোরা গ্রামের চাষিরা চাষ করছেন বিষমুক্ত সবজি কাঁকরোল।

স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ স্টিকি ট্র্যাপ, হাত পরাগায়ন, আইপিএ প্রযুক্তি, ব্যাগিং, সুস্থ ও ভালো বীজ, সুষম সার, মালচিং, ভার্মি কম্পোস্ট এবং জৈব বালাইনাশকের মাধ্যমে বিরতুল ও গাড়ারিয়া গ্রামে নিরাপদ সবজি কাকরলের চাষ হচ্ছে। ওই দুই গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের চাষ করা বিষমুক্ত সবজি কাকরলের বেশ চাহিদা থাকায় রাজধানীসহ আশেপাশের বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়েও সেই কাঁকরোল যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল গ্রামের কাঁকরোল চাষি কালিপদ চন্দ্র দাস বলেন, আমি এই বছর সোয়া বিঘা জমিতে কাকরলের চাষ করেছি। ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো আয় করেছি। স্থানীয় কৃষি অফিসের লোকজন আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরামর্শ দেন বলে আমরা কাঁকরোল চাষে বেশ উৎসাহ পাচ্ছি।

একই গ্রামের আরেক কাঁকরোল চাষি প্রমেশ চন্দ্র দাস বলেন, কাকরলের চাহিদা থাকায় পাইকাররা বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে করে বাজারে নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা থাকছে না এবং যাতায়াত খরচ কমে যাচ্ছে। ফলে আমাদের লাভের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে।

ওই গ্রামের কাঁকরোল চাষি নীহার চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের গ্রামের সবজি বিষমুক্ত সবজি। বিশেষ করে এই গ্রামের কাঁকরোল যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

কথা হয় বাগদী, পারওয়ান ও পানজোরা গ্রামের কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তারা প্রতিবেদককে জানান, শুধু নিরাপদ সবজির গ্রাম নয়। নিরাপদ ওই সবজির গ্রামগুলোর সবজি দিয়ে কালীগঞ্জ পৌরসভাসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একটি করে নিরাপদ সবজি বাজার করলে আমরা যারা কৃষক আছি তারা সবজি সিন্ডিকেটের বাহিরে গিয়ে ন্যায্যমূল্যে সবজি বিক্রি করতে পারবো।

কালীগঞ্জ উপ-সহকারী (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ কালীগঞ্জ থেকে আমরা বিরতুল ও গাড়ারিয়া গ্রামের কাঁকরোল চাষিদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। গ্রাম দুটিতে পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে বালাইনাশক ছাড়াই কাঁকরোল উৎপাদন করছে। এ জন্য বাহিরের দেশের ক্রেতাদের যে চাহিদা ছিল নিরাপদ ফসল, সে কারণে এখানে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা যারা আছি, তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, গ্রীষ্মকালীন সবজি হিসেবে কাঁকরোল একটি জনপ্রিয় সবজি। সাধারণ খরিপ-১ এবং খরিপ-২ এই দুই মৌসুমে এই সবজিটি চাষবাদ করা হয়। আমাদের কালীগঞ্জ উপজেলা একটি সম্ভাবনাময় ফসল হচ্ছে কাঁকরোল। কারণ এই কাঁকরোল আমাদের কালীগঞ্জ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা বিরতুল ও গাড়ারিয়া এই দুটি গ্রামকে‘নিরাপদ সবজির গ্রাম’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কৃষিকে বিষমুক্ত করতেই এই উদ্যোগ। তবে এতে কৃষকদের ভালো সাড়াও মিলছে। ওই দুই গ্রামের যে কৃষকরা আছেন তারা কাঁকরোল চাষ করছেন বিষমুক্ত উপায়ে। এছাড়া জৈব কৃষি এবং জৈবিক বালাই নামক ব্যবস্থাপনা এই পদ্ধতিগুলো তারা ব্যবহার করছে।

(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :