ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই কুয়েতের ফ্লাইটে গোপালগঞ্জের শিশু জোনায়েদ

শেখ মোস্তফা জামান, গোপালগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৫৯

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি বিমানে উঠে যায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের মাদ্রাসায় পড়ুয়া ১০ বছরের শিশু জোনায়েদ। বিমানটি উড্ডয়নের প্রস্তুতি নেওয়ার আগ মুহূর্তে জানা যায়, সে ওই ফ্লাইটের যাত্রী নয়। ভিসা-পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস ছাড়াই বিমানে উঠে পড়ে সে। পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে বিমান কর্তৃপক্ষ।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের ইমরান হোসেন মোল্যার ছেলে মাদ্রাসায় পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জোনায়েদ হোসেন মোল্যা (১০) বাড়ি থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ঢাকায় গিয়ে বসুন্ধরা সিটিতে খাওয়া দাওয়া করে ঢাকার একটি বাসে এয়ারপোর্টের সামনে গিয়ে নামে। এয়ারপোর্টে মানুষের ভিড়ে ভিসা-পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস ছাড়াই বিমানে উঠে পড়ে সে।

সোমবার রাত ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট (কেইউ-২৮৪) উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় জোনায়েদ বিমানের ভেতরে করিডোরে হাঁটাহাঁটি করছিল। কেবিন ক্রু শিশুটিকে সিটে বসার পরামর্শ দেন। তখন বিমানের কয়েকটি আসন খালি থাকায় ওই শিশু একটিতে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পর পাশের আসনের যাত্রী তাকে তার মা-বাবার কাছে গিয়ে বসতে বলেন। কিন্তু শিশুটি তার মা-বাবার বিষয়ে কোনোকিছু বলতে পারছিল না। তার কাছে পাসপোর্টও ছিল না। একপর্যায়ে কেবিন ক্রুরা হেড কাউন্ট (যাত্রী গণনা) করেন। তখন একজন যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। এরপর বিমানের দরজা খুলে শিশুটিকে এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে মঙ্গলবার রাত তিনটার সময় শিশুটির চাচা ইউসুফ মোল্লার কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।

এই ঘটনায় মুকসুদপুর উপজেলাব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শিশুটির বাড়িতে ব্যাপক লোকজনের সমাগম হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ছেলেটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। অনেক নম্র ও ভদ্র। এমন একটি ঘটনা ঘটাবে এটা আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না।

শিশুটির চাচা ইউসুফ মোল্লা জানান, তার ভাতিজা জোনায়েদ মোল্লা খুবই দুরন্তপনা বালক। তাকে এক মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছিলো সেখান থেকে সে বার বার পালিয়ে আসে বলে তাকে মাদ্রাসা থেকে এনে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। তবুও সে বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে হারিয়ে যায়, আবার একাই ফিরে আসে। তারই ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহ আগে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা তার খোঁজ পাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি সে সেখান থেকেও পালিয়ে গেছে। বিমানে উঠে পড়ার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানিনা। বিমানবন্দর থানা থেকে আমাদের ফোন করা হয়।

শিশুটির বাবা ইমরান হোসেন মোল্যা জানান, জোনায়েদের মা ওকে ছোট রেখে মৃত্যুবরণ করে। পরে ওকে মুকসুদপুর উজানী আজিজিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেই। সেখানে পড়া অবস্থায় মাদ্রাসা থেকে কয়েকবার পালিয়ে গেছে। এমন ঘটনায় আমি হতবাক। তার মানসিক কোনো সমস্যা হতে পারে।

শিশু জোনায়েদ হোসেন মোল্যা জানায়, বাড়ি থেকে ১হাজার টাকা নিয়ে মুকসুদপুর থেকে ঢাকার বাসে ওঠে সে। ঢাকা বসুন্ধরায় খাওয়া দাওয়া করে এয়ারপোর্ট এ যায়। সে বিমানবন্দরের সব নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিমানে উঠে পড়ে। তাকে কোনো চেক করা হয় নাই। সে জানেই না যে বিমানে উঠতে বোডিং পাস, পাসপোর্ট এবং ভিসা লাগে। সে কোন কিছু না ভেবে সখের বসে বিমানে উঠে বলে জানায়।

(ঢাকাটাইমস/১৩ সেপ্টেম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :