মায়াবী আঁধার
কামালুদ্দিন সাহেব আজ তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে উঠেছে কারণ আজ তার পরীক্ষার হলে ডিউটি আছে। তাড়াহুড়োর আর একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে- তিনি প্রথম কোনো পরীক্ষার হলে ডিউটি দেবেন। দুই মাস আগে বসন্তপুর কলেজের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। অজানা কোনো কারণে সে কলেজের প্রধান শিক্ষককে ভয় পান যদিও তিনি তাকে যথেষ্ট সমীহ করেন নতুন হিসেবে। কামালুদ্দিন স্যার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই ঠিক করছেন এমন সময় ওয়াশরুমের দরজা খট করে উঠলো। ভেজা চুলে বীথি দাঁড়িয়ে আছে। আঠারো বছরের এক ছোট্ট পরি! তাদের বিয়ে হয়েছে পনেরো দিন আগে। খয়েরি শাড়িতে ফর্সাগালের মেয়েটাকে আরো সুন্দর লাগছে। সে তার চুলগুলো পেছন থেকে এনে বুকের ওপর রেখেছে। তার লম্বা চুলগুলো নাভিকে স্পর্শ করেছে। গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরের মতো টপ টপ করে পানি পড়ছে সেই চুল থেকে। উড়ন্ত বকের ডানার মতো সাদা উদর চুলের ফাঁকে ফাঁকে দেখা যাচ্ছে। কামাল সাহেবের দৃষ্টি সেখানেই বাঁধা পড়েছে। কামাল সাহেব কিছু বলার আগেই বীথি বললো- দ্রুত নাস্তা করতে আসেন। আপনার দেরি হয়ে যাবে। কামাল সাহেব কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন, তার আগেই বীথি রুম থেকে চলে গেল। বীথি চলে যাওয়ার পর অর্ধ-হাঁ করা মুখ নিয়ে শূন্য খোলা দরজার দিকে কামাল সাহেব তাকিয়ে রইলেন।
আমরা পুরুষ শ্রেণি মেয়েদের যে অঙ্গগুলোকে সুন্দর মনে করি সেগুলো কি সত্যি অনেক সুন্দর? নাকি মতিভ্রম? যেমন বলা যায়- কোনো যুবতী মেয়ে যদি কোনো কারণে তার কাপড় পায়ের পাতা থেকে পাঁচ ইঞ্চি ওপরে উঠায়, পুরুষ শ্রেণির চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ওই পা দেখে সত্যি কি মুগ্ধ হওয়ার কিছু আছে? একটা দোয়েল পাখি থেকে কি ওই পা বেশি সুন্দর? আর কোনোভাবে যদি একটা মেয়ের বুকের ওড়না সরে যায়, ধারণা করা যেতে পারে পুরো পুরুষ জাতি ফিরে তাকাবে। ব্যাপারটা কি এত আশ্চর্যের? এটা কি কোনো এক বিকালে সারি-সারি সাদা মেঘ, ঝাঁক-ঝাঁক পাখিদের মালার মতো করে বাড়ি ফেরা, একটা রক্তিম সূর্য অস্ত যাচ্ছে এমন দৃশ্য থেকেও বেশি সুন্দর? প্রকৃতির সৌন্দর্য হারায় না বরং মানুষের বয়সের সাথে সাথে সে এই সৌন্দর্য আরো বেশি উপলব্ধি করতে পারে। মানুষের সৌন্দর্য বয়সের সাথে সাথে মিলিয়ে যায়। একজন মা যখন তার ছোট্ট শিশুকে কোলে করে চাঁদ দেখায় আর বলে- আয় আয় চাঁদ মামা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা, তখন শিশুটি খিলখিল করে হাসে। পরিণত বয়সে ওই শিশুটি যখন অন্য একটি হাত পরম মমতায় ধরে চাঁদ দেখে, তখনও সে হাসে। তবে এই দুই হাসির মাঝে বিস্তর ব্যবধান।
কামাল সাহেব খুব আরাম করে নাস্তা খাচ্ছেন আর বীথির রান্নার প্রশংসা করছেন। আহা! কি স্বাদ! ছাত্রজীবন পার করেছি ঘাসপাতা খেয়ে।
তুমি এমন রান্না শিখেছো কার কাছে?
স্বামীর এমন প্রশংসায় বীথির চোখেমুখে আনন্দের ছড়াছড়ি। সে আপাদমস্তক একজন সংসারী মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই রান্নাবান্না নিয়ে বেশি আগ্রহী। বাড়িতে কোনো আত্মীয় আসলে সে স্কুলে যেত না, দাদির সাথে রান্না করতে বসে যেত। সে নানা প্রকার পিঠা বানাতে পারে, মাছ-মাংস রান্না করতে পারে, এক কথায় বলা যায়- সে রান্নায় পটু। সে প্রবল আগ্রহ নিয়ে রান্না শিখেছে তার স্বামীর জন্য। তার দাদি যখন বলতো- এ বু…চুলোর কাছেততে যা, একটু পড়গে। লেখাপড়া না শিকলি কেউ তোরে নিবি না। এই জামানায় পড়া ছাড়া দাম নাই। খালি এক খাবলা সুন্দর হোলিই চলে না। তখন বীথি বলতো- সরো তো দাদি এই হেনতে, সরো। কারো নিয়া লাগবি না।
তবে বীথির আলাদা একটা জগৎ ছিল- তার কল্পনার জগৎ। সেখানে সে নানা বিষয় ভাবতো। অধিকাংশ ভাবনা ছিল স্বামীকে নিয়ে। অনেক লেখাপড়া করবে, চাকরি করবে এমন চিন্তা কখনো করেনি। সে ভাবতো হঠাৎ কোনো রাজপুত্র এসে তাকে নিয়ে যাবে, সে জানে না সেই রাজপুত্রটা কে। তবুও সে অনেক ভালোবাসে সেই অচেনা রাজপুত্রকে। সে কখনো বীথিকে কষ্ট দেবে না, কখনো ছেড়ে যাবে না। সে মাঝে মাঝে সেই রাজপুত্রের ছবি মনের মাঝে আঁকার চেষ্টা করতো। কামাল যেদিন তাকে প্রথম দেখতে এসেছিল, সেই দিনই সে কামালকে ভালোবেসে ফেলেছিল। গোল গোল সাদা গ্লাসের সাদা চশমা পরা, হাসলে গালে টোল পড়ে। কি মায়াবী চেহারা!
বীথি কামাল সাহেবের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে বললো- আমার রান্না সত্যি কি ভালো হয়েছে নাকি আমাকে খুশি করার জন্য বলছেন?
কামাল বললো- দুইটাই।
বীথি চোখটা একটু ছোট করে বললো- মানে?
মানেটা খুব সোজা। আমার বউটা সত্যি অনেক ভালো রান্না করেছে এবং আমি তাকে খুশি করার জন্য এই সত্যটা বলেছি।
বীথি মুখ হাঁ করেছে তবে এখনো মুখ থেকে কথা বের হয়নি, এমন সময় বেডরুম থেকে কামাল সাহেবের ফোন বেঁজে উঠল- তুমি চোখের আড়াল হও, কাছে কিবা দূরে রও…। এই রিং টোনটা বীথি কামাল সাহেবের ফোনে সেট করেছে। তবে এই টোনটা শুধু বীথি কল দিলে বাজার কথা। এখন কেন বাজছে? বীথি এক দৌড়ে ফোনটা নিয়ে আসলো। প্রিন্সিপাল স্যার কল করেছেন।
কামাল: আসসালামু আলাইকুম, স্যার।
প্রিন্সিপাল: ওয়ালাইকুম আসসালাম। কামাল সাহেব, আপনি আজ একটু দ্রুত আসবেন। একটা জরুরি মিটিং আছে।
কামাল: জি স্যার। আমি এখনই আসছি।
কামাল খাবার পুরো শেষ করলো না। বীথির মনটা খুব খারাপ হলো। এই মানুষটা এমন করে কেন। খাবারটা শেষ করলে কি এমন ক্ষতি হতো। বীথির এখন ইচ্ছা করছে আজ সকালে নাস্তা করবে না। বিড়বিড় করে বললো, সে যে এই মানুষটাকে অসম্ভব ভালোবাসে; কামাল কি সেটা বোঝে না? সারাটা দিন সে একা একা বাসায় থাকে, তার জন্য মনটা ছটফট করে, বুকের ভেতর ব্যথা করে। মনে হয় এই মানুষটা ছাড়া সে বাঁচবে না। বীথির চোখ ছলছল করছে।
কামাল বাসা থেকে বের হয়ে যাবে এমন সময় বীথি এক দৌড় দিয়ে কামালকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।
ছাড়ো দেরি হয়ে যাবে।
বীথি মায়া জড়ানো কণ্ঠে বললো, আচ্ছা ছাড়বো, আগে বলেন- আই লাভ ইউ আমার বীথি।
কামাল: আই লাভ ইউ আমার বীথি, আমার পৃথিবী।
বীথি কামালকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো- আমি কিছু জানি না, যেমন আগে আগে যাচ্ছেন, আগে আগে চলে আসবেন। ভালোবাসার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতা পুরো জীবনটাকে উলটপালট করে দেয়। একটা মানুষ জীবনের কেন্দ্রে পরিণত হয়। ঘুরেফিরে শুধু তার কথাই মনে পড়ে, শুধু তাকেই ভাবতে ভালো লাগে।
বীথি কৌশলে কামালের কোটের পকেটে এক টুকরো কাগজ রাখলো যেন সে বুঝতে না পারে। এই কাগজে একটা গান লেখা আছে। গানটা সে হিন্দি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছে। অনুবাদের শুরুটা এমন-
তোমার স্মৃতি নিয়ে, তোমায় লেখা চিঠিগুলো
হাজারো রঙে দৃশ্যমান হয়
যখন সকাল হয় ফুল হয়ে ফুটে
যখন রাত হয় তারা হয়ে যায়
যখন কোনো গান শুনি, আমার হৃদয়ে কম্পিত হয়
মনে হয় তুমি এসেছো...
............................................................
কামাল রাস্তায় একটাও রিকশা দেখছে না। একটা কুকুরও নেই। এমন তো হওয়ার কথা না। তার বাসার সামনে সব সময় দুই-তিনটা নেড়ি কুত্তা থাকে। কামালকে দেখলে তারা লেজ নাড়ায়। তাদের জন্য কামালের মায়া হয়। আল্লাহ-পাক ইচ্ছা করলে তাকেও নেড়ি কুত্তা বানাতে পারতো, তাকে বানিয়েছেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। গভীর কৃতজ্ঞতায় সে মনে মনে বললো- আলহামদুলিল্লাহ। তার ইচ্ছা করে এদের জন্য খাবার কিনে আনবে। তবে কোনো কারণে সে ভুলে যায়, আর আনা হয় না।
কামাল হাঁটা শুরু করেছে আর বিড়বিড় করছে- কাজের সময় কিছু পাওয়া যায় না। সময়ও বেশি নাই। সময় মাঝে মাঝে পিঁপড়ার মতো চলে আর মাঝে মাঝে চলে সুন্দরবনের হরিণের মতো। এখন হয়েছে সুন্দরবনের হরিণ, লাফায় লাফায় সময় যাচ্ছে। কিছুদূর হাঁটার পর সে একটা রিকশা দেখলো। যাক বাবা একটা রিকশা তাহলে পাওয়া গেল। সে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো এই রিকশা যাবে? রিকশাওয়ালা কোনো উত্তর দিচ্ছে না। কামাল আবার বললো- কি হলো ভাই, উত্তর দিচ্ছে না কেন, যাবেন? রিকশাওয়ালা বললো, আপনি তো আমাকে জিজ্ঞাসা করেন নাই যে, আমি উত্তর দেবো। আপনি বলছেন, এই রিকশা যাবে? এখন রিকশার সাথেই কথা চালাচালি করেন। দেখেন সে যায় কি না।
ভাই, আপনি কি আমার সাথে ফাজলামো করছেন? আমার তাড়া আছে।
রিকশাওয়ালা: আমার তো তাড়া নাই। আপনার তাড়া আপনার কাছে, আমার কি!
কামাল শান্ত গলায় বললো- আপনি কি কলেজ রোড যাবেন?
রিকশাওয়ালা: জি না। যাবো না।
কামাল বললো- তাহলে এত্তো কথা বললেন কেন? প্রথমেই না বলতেন?
রিকশাওয়ালা: এতো কথা আমি কই বললাম। কথা তো বাড়ালেন আপনি।
কামাল নিজের মেজাজটা আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। রাগে মাথার চুল খাঁড়া হয়ে গেছে। কাপাকাপা গলায় বললো- আপনাকে থাপড়ানো দরকার। এখন সময় নেই। পরে দেখা হলে সময় নিয়ে থাপড়াবো।
রিকশাওয়ালা: পরে কেন, এখনি মারেন। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের না মারলে তো আপনাদের খাবার হজম হয় না। পরে গ্যাস হবে, গ্যাস থেকে গ্যাস্ট্রিক-আলসারও হতে পারে। নেন, চোখমুখ জড়ায়ে একটা চড় মারেন।
কামালের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তাকে অসহায় লাগছে। তার দ্বারা একজন রিকশাওয়ালাকে চড় মারা সম্ভব না। সে এই কাজটা কখনোই করতে পারবে না। সে হাঁটা শুরু করেছে।
রিকশাওয়ালা পকেট থেকে একটা বেনসন সিগারেট বের করলো। একটা বেনসনের দাম এখন সতেরো টাকা। সাধারণত কোনো রিকশাওয়ালা এই সিগারেট খায় না। তবে তার যুক্তি হলো, দিনে পাঁচটা না খেয়ে একটা খাবো। এতে ক্ষতিও কম হবে, খেয়ে আরামও পাওয়া যাবে। সে সকালে একটা সিগারেট কেনে সারাদিন পকেটে রাখে। বাসায় যাওয়ার আগে পায়ের ওপর পা তুলে মনের আনন্দে সিগারেটে টান দেয়। তবে আজ সে এখনই সিগারেটটা ধরালো। এমন আনন্দের সময় একটা টান না দিলে সিগারেটের অপমান হবে। সে আজ একজন ভদ্রলোককে জব্দ করেছে, শুধু জব্দ বললে ভুল হবে, ভালোই জব্দ করেছে। সে জানতো এই লোক তাকে মারতে পারবে না, শুধু রাগে গদগদ করবে। অতি ভদ্রলোকরা কারো গায়ে হাত তুলতে পারে না। তার ভদ্রলোকদের এই গদগদানি দেখতে ভালোই লাগে। সে মাঝে মাঝে এমটা করে। অবশ্য মানুষ চিনতে ভুল করে কয়েক বার আচ্ছা প্যাঁদানি খেয়েছে। মানুষ ভালো লাগানোর জন্য কত কিছু করে, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কয়েক ঘণ্টার জন্য। সেই তুলনায় কয়েকবার প্যাঁদানি খাওয়া তেমন কিছু না।
কামাল জোরে জোরে হাঁটছে। কি আশ্চর্য! আশপাশে কোনো মানুষও নেই। কেমন যেন সবকিছু অচেনা লাগছে। সে কোথায় চলে এসেছে! একি! সে কোনো কিছু চিনতে পারছে না। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে, শরীর দিয়ে টপ টপ করে ঘাম পড়ছে।
কামাল সাহেব কোথায় যান?
কে আপনি? আমি তো কাউকে দেখছি না। কামালের রক্ত চলাচল বেড়ে যাচ্ছে, কেমন যেন অস্থির লাগছে, হাত-পা লেগে আসছে, সে আর নড়তে পারছে না। এই ভয়াবহ মুহূর্তে তার বীথির কথা মনে পড়লো। বীথিকে দেখতে ইচ্ছা করছে। হয়তো আর দেখা হবে না তার সাথে।
আমি গাছ, তোমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছি। তুমি আমাকে দেখতে পারছো না?
কামাল লক্ষ্য করলো তার পাশেই বড় একটা গাছ। এই গাছের নাম সে জানে না। আগে কখনো দেখেনি। গাছের ভাষা সে কিভাবে বুঝতে পারছে? কামাল আতঙ্কিত কণ্ঠে থেমে থেমে বললো- আমি, আমি কলেজে যাচ্ছি।
গাছ: তোমার ভয় নেই, আমি তোমার বন্ধু। তোমার কলেজে যেতে হবে না। পৃথিবীর সকল দায়িত্ব তোমার শেষ। আমি তোমাকে নিতে এসেছি। তোমার পরীক্ষার সময় শেষ। এখন ফলাফল পাবার অপেক্ষা করো।
কামাল: আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমার কীসের পরীক্ষা? আমি পরীক্ষার হলে ডিউটি দিতে যাচ্ছি। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমাকে যেতে দিন।
গাছ: জোরে শব্দ করে হাঁ...হাঁ...হাঁ। তারপর সাথে সাথে মুখটা কঠিন করে বললো- বোকা মানব! তোর পুরো জীবনটাই তো পরীক্ষা। সময় শেষ। এখন আমার সাথে যেতে হবে।
কামাল কিছু বুঝে উঠতে পারছে না, আর্তনাদ করে বলে-দয়া করে আমাকে আর একটু সময় দেন। আমি বীথির সাথে একটু কথা বলবো। এই দুনিয়াতে ও ছাড়া আমার আপন তো কেউ নেই। মা-বাবা, ভাই-বোন কেউ নেই।
গাছ: পৃথিবীতে কেউ কারো আপন না। এখানে প্রয়োজনটাই মুখ্য। একটা সময় সবাই তার আপন নীড়ে ফিরে যায়। একটু থেমে বলতে শুরু করলো, এখন আমার একটা ডাল মড়মড় করে ভেঙে পড়বে তোমার ওপর। তোমার মাথাটা শরীর থেকে আলাদা হয়ে যাবে। চোখ বেরিয়ে আসবে মাথা থেকে। শরীরটা চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। রক্ত ছড়িয়ে পড়বে চারপাশে। সবাই শুধু বলবে, কি নির্মম মৃত্যু! হায়রে! কি নির্মম।
গাছের ডাল মরমর করে ভাঙতে শুরু করেছে। কামাল চিৎকার করছে না না। আমার একটা কথা শোন। গাছের ডাল মরমর করছে। কামাল চিৎকার করছে একটা কথা শোন। মট মট মট ধপাস…
কামাল বিছানা থেকে লাফ দিয়ে বসে পড়েছে। তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে। গা থরথর করে কাঁপছে। সে একবার বীথির দিকে তাকালো। রুমের সবুজ ডিমলাইটের আলোয় বীথির ফর্সা গাল জ্বলজ্বল করছে।