বোয়ালমারীর কুমার নদে নৌকা বাইচ দেখতে মানুষের ঢল

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার তেলজুড়ী এলাকার কুমার নদে নৌকা বাইচ ও গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারা বছর শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকে ওই এলাকা ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। নৌকা বাইচ দেখতে জেলার ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার হাজারো মানুষের ঢল নামে কুমার নদের পাড়ে।
শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নন, নৌকা বাইচ দেখতে আর মেলা থেকে হরেক রকম পশরা কিনতে আশপাশের এলাকা থেকেও হাজারো নারী পুরুষ ছুটে আসেন তেলজুড়ী বাজারে। ওই গ্রামের মেয়েদের জামাইরা শ্বশুরবাড়ি আসেন এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে, পরিবার-পরিজন নিয়ে মেতে ওঠেন আনন্দে।
প্রতি বছর ৯ আশ্বিন (২৬ সেপ্টেম্বর) বসে এই মেলা ও নৌকা বাইচের আসর। নৌকা বাইচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিশিষ্টজন, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে তিন দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় মিষ্টির দোকান, খেলনা, বিভিন্ন খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে উঠে স্থানীয় ও আশপাশের উপজেলার বাসিন্দারা।
নৌকা বাইচের পাশাপাশি কুমার নদে হাজারো মানুষ ট্রলার নিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করে এই উৎসব। একই উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল মেলায়ও। সেখানে নানা রকম মিষ্টি, জিলাপি, দানাদার, লবঙ্গ লতিকাসহ নানা রকম খাবারের পসরা বসে। সেখানে বেচাকেনাও হয় ভালো।
নৌকা বাইচ ও মেলায় ঘুরতে আসা গৃহবধূ নাজমা আক্তার জানান, প্রতি বছরে এই দিনের জন্য অপেক্ষায় থাকি বাবার বাড়ি আসার জন্য। স্বামী, সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি নৌকা বাইচ দেখতে। খুব ভালো লেগেছে। মেলায় ঘুরেছি, অনেক কিছু কিনেছি।
মেলায় আসা দশম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া আক্তার জানান, বান্ধবীদের নিয়ে নৌকা বাইচ দেখেছি, খুব ভালো লেগেছে। মেলায় ঘুরেছি, অনেক কিছু কিনেছি। খাবার খেয়েছি, অনেক আনন্দ পেয়েছি।
মেলায় মিষ্টির দোকান নিয়ে বসেছেন অনীল সাহা। তিনি বলেন, এই নৌকা বাইচ ও মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর অপেক্ষা করি। মেলায় দোকান দিয়েছি। দোকানে রসগোল্লা, আমৃত্তি, দানাদারসহ বিভিন্ন মিষ্টি সামগ্রী রেখেছি। বেচাকেনাও খুব ভালো হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এক দিনের জন্য নৌকা বাইচ হলেও মেলা চলে তিন দিন। এই মেলায় বেচাকেনা করে লাভ হয় অনেক।
খেলনার দোকানি আরশাদ মোল্লা বলেন, মেলায় এসেছি ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। তিন দিন থাকবো। কাস্টমার যা চাচ্ছে তা দিতে পারছি।
নৌকা বাইচ ও মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি এ এফ এম লিটু সিকদার জানান, শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এই নৌকা বাইচ ও গ্রামীণ মেলা। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই আয়োজন করা হয় প্রতিবছর। এ বছর ১২৩ তম আয়োজন করা হয়। এটি একটি উৎসবে পরিণত হয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ এই উৎসবে অংশ নেয়।
এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, গ্রামীণ জনপদের এই ঐতিহ্য যেন টিকে থাকে বহুদিন। বাঙালি সাংস্কৃতির এই আয়োজন সফল হোক প্রতি বছর, এটি তাদের কামনা।
জয়নগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কৃষ্ণ বিশ্বাস জানান, নৌকা বাইচ ও মেলাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জয়নগর পুলিশ ফাঁড়ি, ডহরনগর ফাঁড়ি ও বোয়ালমারী থানা পুলিশের সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, নৌকা বাইচ একদিনে শেষ হলেও, মেলা চলবে তিন দিনব্যাপী। মেলা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমরা সব সময় এখানে থাকবো যাতে মানুষ আনন্দমুখর পরিবেশে বাড়ি ফিরতে পারে।
(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/এআর)

মন্তব্য করুন