সওজের অবহেলায় রানীসংকৈলে তলিয়ে গেছে ১০০ হেক্টর জমির আমন ধান

আহমেদ ইসমাম, রানীসংকৈল (ঠাকুরগাঁও)
 | প্রকাশিত : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৭

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীসংকৈল উপজেলায় সড়ক ও জনপথের (সওজ) অবহেলায় প্রায় ১০০ হেক্টর রোপা আমন ধান ঝুঁকিতে রয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, উপজেলার সড়ক ও জনপথের অধীনে সাগর বিল্ডার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে নির্মাণাধীন দুটি সেতুর সঠিক নিয়মে বিকল্প রাস্তা না করায় এ ক্ষতি সাধন হয়েছে। কৃষি অফিস বলছে, এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদকে আগেই অবহিত করা হয়েছিল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রানীসংকৈলের নেকমরদ-ধর্মগড়ের কাউন্সিল বাজারের নির্মাণাধীন সেতুর বিকল্প সড়কটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় উত্তর দিকের কয়েক কিলোমিটার এলাকার ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তবে দক্ষিণ দিকের পানি ৫ ফুট নিচে অবস্থান করছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, এই বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করার সময় সড়ক ও জপথের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ারকে বারবার অনুরোধ করার পরও আমাদের কথা শুনে নাই।

কাউন্সিল বাজার হাট কমিটির সভাপতি শাহ আলম বলেন, আমাদের জন্ম এই এলাকায়ই। আমরা জানি এই জায়গা দিয়ে বর্ষাকালে কী পরিমাণ পানি যায়। এই জায়গা থেকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল যে পানি যাওয়ার জন্য যে দুটি পাইপ দেওয়া হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। কিন্তু তারা আমাদের বলে আমরা ইঞ্জিনিয়ার, আপনারা কি আমাদের চেয়ে বেশি বোঝেন। এর পর আমরা কৃষি অফিসকে জানিয়েছিলাম। তারাও বারবার বলার পর গায়ের জোরে এই কাজ করেছে।

তলিয়ে যাওয়া আমন ধান ক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আলমগীর। তিনি বলেন, আমার তিন একর জমিতে আমন ধান আছে। তা এখন পুরোটাই পানির নিচে। এই ধান আদৌ বাড়ি নিয়ে যেতে পাড়ব কি না আল্লাহ জানে।

বিশ শতাংশ জায়গায় আমন ধান করা আকবর আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সারা বছর সন্তানদের নিয়ে ভাত খাবো এই আশায় আমন ধান বোপণ করেছিলাম। কিন্তু এই রাস্তার পানি ঠিক মতো না যাওয়ায় আমার ফসলে এখন বুকপানি। এভাবে কয়েকদিন থাকলে সব ধান পচে যাবে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিল বাজার থেকে দক্ষিনে কাশিপুর ইউনিয়নের চার কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত জলাবদ্ধতা হয়েছে। এই এলাকার আমন ধান এখনো পানির নিচে। ঠিক কখন পানি নেমে যাবে তা সঠিকভাবে বলতে পাড়ছে না। তবে এর পরিমাণ ১০০ হেক্টরের বেশি হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি অফিসের একাধিক সূত্র।

এ দিকে বুধবার বিকালে কাউন্সিল বাজারের বিকল্প সড়কটির ওপর দিয়ে পানি যাওয়া শুরু করলে এর আংশিক অংশ ভেংগে যায়। এতে দক্ষিণের (ডাউন) রোপা ধানে প্রবল বেগে পানি যাওয়ায় এই ফসলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ দিকে হরিপুর ও রানীসংকৈল উপজেলার এক মাত্র সংযোগ সড়কটি সোমবার রাতেই ভেঙে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দুই উপজেলার সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ধান, চাল ভুট্টার ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা পরিচালনা ব্যহত হচ্ছে।

রামপুর ও কাউন্সিল বাজারের ব্রিজ দুটির বিকল্প রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা দ্রুত এর প্রতিকার চেয়েছেন।

কাউন্সিল বাজারের ভুট্টার ব্যবসায়ী সুভান জানান, কাউন্সিল বাজার থেকে দৈনিক বিশ থেকে পচিশটি ভুট্টার ট্রাক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। এ ভাবে রাস্তা বন্ধ হয়ে থাকলে আমাদের লাখ টাকা ক্ষতি হবে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা পাচ দিনের ভারি বর্ষণে রানীসংকৈল উপজেলার নদ ও নদীগুলোর পানির চাপ বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে ভারতের পাহাড়ি ঢলের কারণে নাগর নাদীর পানি তীরবর্তী গ্রামগুলোতে প্রবেশ করেছে।

এ সময় উপজেলায় রেকর্ড পরিমান ১২৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

ধর্মগড় ইউনিয়নে নাগর নদীর তীরে এক একর জায়গায় আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করেছেন মাসুদ। তুলনামূলক উঁচু জায়গায় চাষ করার কারণে ডুবে যাওয়া আশংকা ছিল না। গত বছরও বেশ ভালো ফলন হয়েছিল একই জায়গায়। কিন্তু রাতে ভারত থেকে আসা ঢলে পানি বেড়ে গেলে তার ফুল কপির জমিতে এখন এক বুক পানি।

তার আশে পাশের আরও অনেক চাষির সবজি ও ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

চাষি মাসুদ বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে যদি পানি নেমে যায় তবে ধানের ক্ষতি কম হবে। তবে সবজি বাচানো সম্ভব না।

আরেক মরিচচাষি আল আমিন বলেন, ভালো দামের আশায় ৩০ শতাংশ জায়গায় মরিচ আবাদ করেছিলাম। কিন্তু সেই মরিচ ক্ষেতে এখন বুকপানি।

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে চাষিরা ফসলের পরিচর্যা করতে না পারায় তাদের ফসল ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে চাষিরা।

রানীসংকৈল উপজেলার কৃষি অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা আমরা এখনো নির্ধারণ করতে পারি নাই। এ জন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি।

ঠাকুরগাঁও সহজ নির্বাহী প্রকৌশলী রাফিউল ইসলাম বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে এবং কৃষকেরা তাদের চাষাবাদকৃত ধান বাঁচানোর লক্ষ্যে সড়কটি হয়তো বা কেটে দিয়েছে। পানি স্বাভাবিক হলেই সড়কটি পুনরায় সংস্কার করে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৭সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :