কুয়াকাটা সৈকতে প্রাচীন পুকুর এখন আবাসিক হোটেলের ময়লা পানি ও বর্জ্যের ভাগাড়!

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
| আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:০০ | প্রকাশিত : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৩৯
কুয়াকাটা সৈকতে প্রাচীন পুকুরে যাচ্ছে আবাসিক হোটেলের ময়লা পানি, ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। ছবি: ঢাকা টাইমস

পটুয়াখালীর পর্যটন নগরী কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্বে ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন একটি প্রাচীন পুকুর (ঢিপ) রয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা মতে ৭০'র বন্যায় পুকুরটি আবির্ভাব ঘটে। প্রাচীন এই পুকুরটি সবচেয়ে বেশি উপকারে আসে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের।

তবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কেন্দ্রিক যে সকল আবাসিক ও খাবার হোটেল রয়েছে সেসবের ময়লা পানি নিষ্কাশন করা হয় প্রাচীন এই পুকুরের মধ্যে। বিচের আবাসিক হোটেলের ময়লা পানিতে পুকুরের পানি ঘোলাটে হয়ে পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। এদিকে অস্বাস্থ্যকর পানিতে পর্যটক এবং স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে গোসলে নামছেন। যার যারা বাধ্য হয়ে গোসল করছেন তারা নানা ধরনের রোগাক্রান্ত হচ্ছেন। প্রাচীন এই পুকুরটিতে সৈকত কেন্দ্রিক আবাসিক হোটেলের ময়লা পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন বন্ধে, এবং পর্যটক স্থানীয়দের ব্যবহারের উপযোগী ও দৃষ্টিনন্দন লেক হিসেবে রূপ দিতে জোর দাবি জানান পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সমুদ্র সৈকতের কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন প্রাচীন এই (ঢিপ) পুকুরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে গোসল করছে স্থানীয় বাসিন্দাসহ পর্যটকরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত দুই বছর পূর্বে এই পুকুরটি কচুরিপানা দিয়ে ভরা ছিল। আশেপাশের বাসিন্দারা সহ পর্যটকরা এই পুকুরে কিছু জায়গা পরিষ্কার করে তখনও গোসল করতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান কুয়াকাটা পৌর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এই পুকুরকে দৃষ্টিনন্দন একটি লেক রূপান্তরে পর্যটকদের গোসলের সুবিধার জন্য এ সকল কচুরিপানা অপসারণ করে একটি ঘাট নির্মাণ করে পর্যটন নগরীতে নান্দনিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ হাতে নেয়। কিন্তু জেলা প্রশাসনের পূর্বানুমতি ছাড়াই এমন উদ্যোগ নেয়ার ফলে আইনি জটিলতার বেড়াজালে উন্নয়ন কাজ সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দা সহ হাজার হাজার আগত পর্যটকদের এক চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।

ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটক রায়হান বলেন, সমুদ্র সৈকতে এমন একটি পুকুর পর্যটকদের জন্য খুবই উপকারী। অনেক পর্যটক একদিনের জন্য বেড়াতে এসে হোটেলের রুম ভাড়া নেয়না। তাদের জন্য এমন একটি পুকুর ব্যাপক ভূমিকা রাখে। দেখা গেছে সমুদ্রে গোসল করে শরীরের আটকে থাকা বালু পরিষ্কার করার জন্য তাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই এই পুকুরটি অনেক বেশি কার্যকরী। পর্যটক আরিফ বলেন, আমরা একবার শিক্ষা সফরে এসে এই পুকুরেই গোসল করেছিলাম। কিন্তু তখন পুকুরের পানি ও আশেপাশের পরিবেশ এতটা নোংরা ছিল না। সাইদুল, রেদওয়ান সহ বেশ কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য মানুষ বনভোজনে এসে এই পুকুরের পানি দিয়ে গোসল ও রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকেন। তবে এই পুকুরের পানি এখন আর ব্যবহার উপযোগী বলে মনে হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের এদিকে বিশেষ নজর দিতে দাবি জানান তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ দুলাল বলেন, কুয়াকাটা পৌর মেয়রের উদ্যোগে কুয়াকাটা পিকনিক স্পট ও ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন সী বিচ এলাকায় সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেয় গত বছর। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আগত পর্যটকদের নান্দনিক পরিবেশে বাড়তি বিনোদনের জন্য একটি লেক ও পার্কসহ আবাসিক হোটেলের ময়লা পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল এটি অবশ্যই এই এলাকার জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় পর্যটন বান্ধব কাজ। যে কাজটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু, আইনি জটিলতায় শেষ পর্যন্ত সে কাজের সমাপ্তি করা হয়নি। এখন বর্তমানে এই অঞ্চলটি একটি ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। বর্তমান পরিবেশে নেতিবাচক মন্তব্য করবে যেকেউই। স্থানীয় বাসিন্দা কবির, আঃ মজিদ, মো. সোহেল, আমির হোসেন সহ অনেকেই আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র কেন্দ্রিক আবাসিক ও খাবার হোটেলের ময়লা ও বর্জ্য নিষ্কাশনে এই পুকুরটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। যে কারণে পুকুরের পানি এখন আর ব্যবহার উপযোগী নেই। তবুও আমরা বাধ্য হয়ে এই পানি ব্যবহার করে আসছি। আমরা এ বিষয়ে স্থানীয় প্রতিনিধির কাছে বারবার তলব করে আসলেও ড্রেন থেকে নির্গত হওয়া এ সকল ময়লা পানি বন্ধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বছর অতিক্রম হলেও।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর মেয়র ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য আনোয়ার হাওলাদার জানান, এই পুকুরটি ঘিরে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। এই পুকুরটি দৃষ্টিনন্দন করণে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং আবাসিক হোটেল থেকে যে সকল ময়লা পানি নির্গত হয় তা বন্ধ করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৯অক্টোবর/ প্রতিনিধি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :