নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মা ইলিশ শিকার, টাকায় মিলছে অনুমতি

পাবনা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ২১:১৮

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা ও বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পাবনার বেড়ায় ধুমধাম করে চলছে ইলিশ শিকার। জেলেদের দাবি সরকারি সহযোগিতা না পেয়েই বেঁচে থাকার তাগিদে করছেন ইলিশ শিকার।

এদিকে মৎস অফিস বলছে, বেশি বরাদ্দ না থাকায় সব জেলেকে সরকারি প্রণোদনা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন মৎস কর্মকর্তা নৌ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে চলছে অভিযান। অভিযানের মধ্যেও টাকায় মিলছে ইলিশ ধরার অনুমতি।

গত ১২ অক্টেবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ ঘোষণা করেছে সরকার।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বেড়া উপজেলার দশটি ইউনিয়নের বেড়া পৌরসভা, হাটুরিয়া-নাকালিয়া, মাছখালি, ঘিওর, রাকশা, নগড়বাড়ি এলাকায় তালিকাভুক্ত মৎস্যজীবীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার যারা ইলিশ আহরণ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

তবে উপজেলার কয়েকটি মৎস্যজীবী সমিতির তথ্য হিসাব অনুযায়ী জেলে পরিবারের সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশি। তাদের বিকল্প কোন আয়ের উৎস নেই। ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুমে ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এ সময় মাছ আহরণ ও বাজারজাতকরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।

এ বছর বেড়া উপজেলার তিন হাজার জেলেদের মধ্যে সাড়ে সাতশ জেলে পরিবারকে প্রণোদনা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার ১৩ দিনে ৩০ জন জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং জেলেদের বিরুদ্ধে ৯টি নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে কাজিরহাট কাজিশরিফপুর গিয়ে দেখা যায়, বেইলি সেতুর দুই পাশে দাঁড়িয়ে কিছু লোকজন পথযাত্রীদের ডেকে বলছেন ভাই মাছ লাগবে না কি? অনেকেই তাদের সাথে গিয়ে জেলেদের বাড়ি থেকে দামদর করে মাছ কিনে আনছে। অথচ ৫০০ মিটার দূরে রয়েছে কাজিরহাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ি।

কাজিরহাট কাজিশরিফপুর নটাখোলা ঘাটে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশটি ইলিশ ধরা নৌকা জালসহ ঘাটে ভেড়ানো রয়েছে। এ যেন উৎসব মূখর পরিবেশে শিকার হচ্ছে মা ইলিশ। ৭শত থেকে ৯শ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯শত টাকা ও ছোট সাইজের ইলিশ সাড়ে চারশ থেকে পাঁচশ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক থেকে দের কেজি ওজনের ইরিশ বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে ১৪ শ টাকা দরে।

নগরবাড়ি রঘুনাথপুর মৎস্যজীবি সমিতির মো. আব্দুল মালেক বলেন, আমার ইউনিয়নের সমিতির তালিকাভুক্ত জেলে আছে চারশতর মতো। এর মধ্যে সরকারি অনুদান হিসেবে প্রায় একশজনের মতো ২৫ কেজি করে চাল পেয়েছে। এই চালে কয়দিন খাবে একটি পরিবার? শুধু অভিযান পরিচালনা করেই ইলিশ ধরা বন্ধ করা যাবে না।

টাকার বিনিময়ে ইলিশ ধরার অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে কাজিরহাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মাহিদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার নৌ-পুলিশের কোন কর্মকর্তা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। মা ইলিশ রক্ষার্থে দিনরাত আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তার প্রতিদিনই আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার তের দিনে ৩৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য সাড়ে চার লাখ টাকা। সেগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোরশেদুল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের শুরু থেকেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শেষ মুহুর্তে ইলিশ একটু বেশি ধরা পরছে একারণে আমাদের অভিযান আরও জোড়ালোভাবে পরিচালনা হবে।

নৌ পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রমাণ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৫ অক্টোবর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :