রাঙ্গাবালীতে দখলদারদের কবলে সরকারি খাল

আবু তাহের হোসাইন, রাঙ্গাবালী,পটুয়াখালী
| আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ২০:০৩ | প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৩৬

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ফুলখালী গ্রামের উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত সরকারি কৈয়ার খাল দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন দীর্ঘদিন যাবত এ কাজ করছেন। খালের বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দেওয়ায় এখন খালটি মৃতপ্রায়। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতারা বাৎসরিক চাঁদার বিনিময়ে মাছ ধরার অনুমতি দেন নির্দিষ্ট কিছু লোকজনদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালটিতে বাঁধ দেওয়ায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। খালের আশপাশের প্রায় জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকে। জানা গেছে, খালটির আয়তন ৭-৮ একর। খালের মূল শাখা ও উপশাখা (নালা) দখল করে অবৈধ বাঁধ দেওয়ায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময়ের খরস্রোতা কৈয়ার খালটি এখন নাব্য সংকটে পড়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে খালের প্রকৃত রূপ। দ্রুত এসব অবৈধ দখলদারদের উৎখাতের দাবি এলাকাবাসীর।

অভিযুক্তরা হলেন- মতলেব গাজী, মস্তফা গাজী, মহিব্বুল্লাহ ফরাজী, মাসুম ফরাজী, নুরু হাওলাদার, রনি হাওলাদার, ফারুক মিয়া, কামাল হাওলাদার, দুধা গাজী, শাহজালাল মাওলানা, শহিদ শিকদার, জাফর দালাল, আব্বাস ফকির, আনিস হাওলাদার, ফেরদৌস হাং, নাইম হাওলাদার, জোনাব আলী খাঁ, কালু খাঁ, দুদা হাওলাদার, জামাল হাওলাদার, নাইম হাং, সিদ্দিক গাজী, তাহের মিয়া, বশির মিয়া, ইউসুফ মিয়া, ফারুক মিয়া, মহসিন, মোয়াজ্জেম মিয়া।

ফুলখালী গ্রামের পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে খালটি পাশের গ্রাম চতলাখালী দিয়ে বাহেরচর-গহিনখালী খালের সঙ্গে মিশেছে। খালটি প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে দুই কিলোমিটার অংশে অন্তত ২০টি জায়গায় বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। খালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করাসহ যে যার মতো করে বালু ভরাট করে উঠিয়েছে ঘরবাড়ি।

ফুলখালী গ্রামের ইউসুফ মল্লিক বলেন, এখানে দুইটি খাল রয়েছে দুটোই সরকারি খাল। এখানকার স্থানীয় লোকজন দখল করে রেখেছেন। খালের মাঝখান দিয়ে বাঁধ উঠিয়ে নির্মাণ করেছেন বড় বড় ঘের ও পুকুর। খালটি দখল হওয়াতে আমার প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে বীজতলা পঁচে যাচ্ছে অন্য ফসল ও ঠিকভাবে ঘরে তুলতে পাড়ছি না, এছাড়াও পানি নিষ্কাশনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে যার ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন সাধারণ মানুষসহ শতশত কৃষক।

অভিযুক্ত মহিবুল্লাহ ফরাজী জানান, তিনি অনেকদিন যাবৎ সরকারি খাল অবৈধভাবে দখল করে আছেন। তিনি আরও জানান, খালটি আমি ছাড়াও ২০ থেকে ২২ জন দখল করে আছে।

এছাড়াও অভিযুক্ত নাইম হাওলাদার বলেন, এখানে সরকারি খাল দখলে আমরা নিজেরা নিজেরাই আছি, যদি সকল কৃষকের কথা চিন্তা করে সরকার খালটি কেটে দেয় তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই, এতে সবার জন্য ভালো হবে বলে মনে করি।

স্থানীয় কৃষক জামাল হাওলাদার বলেন, খালটি সম্পূর্ণ সরকারি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত। এক সময় এটা বড় একটি খাল ছিল, খালটি দখল করে মাছের ঘের ও পুকুর এবং অবৈধভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করায় এখন পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, অবৈধভাবে খাল দুটি দখল হয়ে যাওয়ার কারণে পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। এতে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কৃষক। ইউএনওর কাছে কৃষকরা লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে আশা করছি খুব শীঘ্রই খাল দুটি দখল মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, রাঙ্গাবালী যেহেতু কৃষি নির্ভর একটি এলাকা, খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে কৃষকের কোনো ক্ষতি হোক এটা আমরা চাই না। সব ধরনের খাল আমি উচ্ছেদ করে দিবো, বাঁধ দিয়ে খালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। আমরা রাঙ্গাবালীতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সরকারি খাল অবমুক্ত করেছি। তিনি আরও বলেন, উপজেলার কোথাও প্রাকৃতিক খালে বাঁধ নির্মাণ করতে দিবো না।

(ঢাকাটাইমস/২৬ অক্টোবর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :