বিডিসাফের দিনব্যাপী সাইবার সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত

দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটরস ফোরামের (বিডিসাফ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিষয়ক দিনব্যাপী সম্মেলন ‘সাইবার সিকিউরিটি সিম্পোজিয়াম ২০২৩’। শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে শনিবার রাজধানীর মহাখালীতে ‘ব্র্যাক ইন’ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সিম্পোজিয়ামে উঠে আসে তথ্য প্রযুক্তির নিরাপত্তা এবং সাইবার সচেতনতা বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন। সকালে উদ্বোধনী পর্বে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব স্মার্ট বাংলাদেশের বুনিয়াদি ভিত্তি হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতার বিষয়ে আলোচনা করেন। একইসঙ্গে দেশে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে উপস্থিত প্রযুক্তিবিদদের প্রতি নিরাপদ সাইবারজগৎ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সচিব বিডিসাফের কার্যক্রমের প্রশংসা করার পাশাপাশি আইসিটি বিভাগের সঙ্গে বিডিসাফের একসঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনার বিষয়ও তুলে ধরেন।

বিডিসাফের সভাপতি মো. জোবায়ের আল মাহমুদ হোসেন বলেন, প্রায় পাঁচ হাজার সদস্যের এই সংগঠন পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেলে, ক্লাউড কম্পিউটিংসহ দেশের বিভিন্ন উদীয়মান প্রযুক্তির বিকাশে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা নামিয়ে আনবে শূণ্যের কোটায়। তিনি বলেন, চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ চালিয়ে যাবে বিডিসাফ।

‘সাইবার সহনশীলতা অর্জনের মাধ্যমে গড়ে তুলি নিরাপদ বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সিম্পোজিয়ামে ছিল দশটি কারিগরি বিষয়ের ওপর আলোচনা এবং একটি প্যানেল আলোচনা। অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসাবে তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন সংগঠনের উপদেষ্টা বরেণ্য তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এবং উদ্যোক্তা শায়েরুল হক জোয়ার্দার নীল। তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তাকে এখন শুধু তথ্যপ্রযুক্তি কার্যক্রম হিসেবে দেখার অবকাশ নেই। সামগ্রিক দিক থেকেই সাইবার নিরাপত্তার জন্য সমন্বিত স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ‘মেঘনা ক্লাউড’-এর সিওও সাইফ রহমান। তিনি ক্লাউড প্রযুক্তি এবং সাইবার নিরাপত্তায় সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার বিষয়ে আলোকপাত করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এমাজন নর্থ আমেরিকার স্টার্ট-আপ টিমের প্রধান মেহেদি জামান।

দিনব্যাপী বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে আলোচনা পর্বগুলো পরিচালনা করেন ব্যাংক, সফটওয়্যার নির্মাতা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। কারিগরি বিষয়ে আলোচনা করেন মুঠোফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের হেড অফ ক্লাউড নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিকিউরিটি রাসকিন পাল, প্রিন্সিপাল সিকিউরিটি আর্কিটেক্ট মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন এবং হেড অফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি মুহাম্মদ শওকত আলী বিভিন্ন ধরনের সাইবার টুল, স্ট্র্যাটেজি এবং অনুশীলন নিয়ে আলোচনা করেন।

অন্যদের মধ্যে আইসিডিডিআর,বির সিস্টেম এডমিন শংকর নন্দী, বিজিআইটির হেড অফ ডেভঅপ্স অ্যান্ড ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ারিং আমির হোসেন, সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিস্থান ব্রেন স্টেশন ২৩ এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার মো. মেহেদী হাসান, কনটেসা সল্যুশনসের এসএম রুবায়েত ইসলাম এবং আলফা কানেকশনের আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর, তথ্যপ্রযুক্তি ও সাইবার সিকুইরিটি অবকাঠামো নির্মাণের এবং পরিচালনা বিষয়ে কারিগরি বিষয়ক আলোচনা করেন। এছাড়া আকিজ ভেনচার গ্রুপের হেড অফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি সাহানাজ বেগম ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার ঝুঁকির বিষয়ে আলোচনা করেন।

প্যানেল ডিসকাশনে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ ফোন ও এয়ারটেল বাংলাদেশের সাবেক প্রধান তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং কনটেসা সল্যুশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুৎফর রহমান, কমিউনিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ কাইউম খান, আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট বাংলাদেশের পরিচালক মুইজ তাসনিম ত্বকি এবং মুঠোফোন অপারেটর রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী।

এম এ কাইউম খান তার বক্তব্যে আর্থিক প্রতিস্থানে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা করেন। সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী ডাটা সিকিরিটি ও প্রাইভেসির আইনগত দিক তুলে ধরেন। ডেলয়েট বাংলাদেশের পরিচালক মুইজ তাসনিম দেশে সাইবার বিশেষজ্ঞদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার পাশাপাশি অন্যান্য সফটস্কিলের বিষয়ে কথা বলেন।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিডিসাফের সাধারণ সম্পাদক মোহিব্বুল মোক্তাদীর তানিম।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল সাইবার সিকিউরিটি কুইজ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং পৃষ্ঠপোষকদের হাতে আমন্ত্রিত অতিথিরা সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

(ঢাকাটাইমস/২৮অক্টোবর/কেএম)