অন্তিম অবস্থায় সরকার, পতন অত্যাসন্ন: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ২২:২৮ | প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ২১:১৬

আদর্শ ও ন্যায়ের সংগ্রাম কখনো পরাজিত হয় না মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, চক্রান্তকারী নিষ্ঠুর আওয়ামী সরকারের পতন অত্যাসন্ন। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলন, মামলা, হামলা ও গ্রেপ্তার দিয়ে কখনোই থামানো যাবে না।

তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে বর্তমানের কর্তৃত্ববাদী সরকারের বংশবদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী যৌথভাবে যে হিংস্র পরিকল্পনার মাধ্যমে হামলা, তাণ্ডব, ও জানমালের ক্ষতিসাধন করেছে বিএনপি তাতে ঘৃণা, ক্ষোভ ও ধিক্কার জানাচ্ছে।

সোমবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত জুলাই ২০২২ থেকেই লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে বিএনপি পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সমাবেশ ও ঢাকায় মহাসমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশে যে লোক সমাগম হয়েছে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব। পথে পথে বাঁধা অতিক্রম করে দেশের সকল শ্রেণি ও পেশার আপামর জনসাধারণ এসব কর্মসূচিতে শান্তিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সাধারণ মানুষ বিএনপির দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়ে যেভাবে যোগ দিয়েছেন, তা বিএনপিসহ সব গণতান্ত্রিক দলের নেতাকর্মীকে অনুপ্রাণিত করেছে, তাদের দাবি যে জনগণের দাবি তা প্রমাণ করেছেন। নারী-পুরুষ, তরুণ-বৃদ্ধ, শ্রমিক-কৃষক কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে, কেউ পায়ে হেঁটে, নদী সাঁতরে পার হয়ে, চিড়া-মুড়ি নিয়ে আমাদের সমাবেশগুলোতে যোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বাধা দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ ও তার ফ্যাসিবাদী সরকারের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গত পরশুর (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ এবং আজ ২৯ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচিতে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা চার, গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীর সংখ্যা ৬৯০ জন, মোট মিথ্যা মামলার সংখ্যা ২০টি এবং আহত ৩,০০০ এর অধিক নেতাকর্মী। এছাড়াও মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ২৩ অক্টোবর হতে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ দিনে মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই হাজার ৬৪০ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মিথ্যা মামলা হয়েছে ৪৫টি।

বিএনপির এই মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, 'গত ২৮ জুলাই হতে ২৯ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে ৪৪২টি, গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৩১০ জনকে, মোট আসামি ৩১ হাজার ৯৮০ জন, এবং হামলা চালিয়ে আহত করা হয়েছে ৫ হাজার ১১০ জনের চেয়েও বেশি নেতা-কর্মীকে। বিচারবিভাগের রাজনীতিকরণ করে ১৫টি মিথ্যা মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও প্রায় ৯০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এই পরিসংখ্যান কেবল গত জুলাই থেকে আজ অবধি, গত ১৫ বছরে লাখো মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, কারাগারে কয়েক লাখ বিএনপি কর্মী অন্তরীণ হয়েছে, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের গুলিতে ও নির্যাতনে সন্তান হারিয়েছেন হাজারো বাবা-মা।

তিনি বলেন, এসব নির্যাতন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেছেন, সরকারের সমালোচনা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেই অত্যাচার ও মামলার খড়গ নেমে এসেছে। কুখ্যাত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮ এর কবলে পড়ে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট, কার্টুনিস্ট, লেখক, কলামিস্ট ও সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যরা অত্যাচারিত হয়েছেন, পুলিশি হেফাজতে ও কারাগারে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, 'এই নজিরবিহীন অত্যাচার, নির্যাতন, ও খুনের শিকার হয়েও বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলো সহিংসতার পথ বেছে নেয়নি। নেতাকর্মীরাও শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন। বিএনপির গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একত্রে জোর আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। গণতন্ত্রের পক্ষের সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলো একটি সুষ্ঠু ও অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছেন। দেশের ভেতরের সাধারণ মানুষ ও বাইরের আন্তর্জাতিক শক্তির জোর সমর্থন পাওয়ার ফলে বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন যখন সফল হতে যাচ্ছে, তখন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে উঠেছে। এই অন্তিম অবস্থায় আওয়ামী লীগ যৌক্তিক জ্ঞান হারিয়ে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ২৮ অক্টোবরে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে একটি সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করার পরিকল্পনা করে আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগত রাজনৈতিক পুলিশ বাহিনী। উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু গ্রেপ্তার-নির্যাতন সত্ত্বেও আগের রাত থেকেই মহাসমাবেশের স্থান নয়াপল্টন নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে।

তিনি বলেন, বিএনপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে সশস্ত্র হামলা নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক। কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা ও পুলিশের বক্তব্যেরই প্রতিফলন এই রক্তাক্ত আক্রমণ। বাস, ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ করেও যখন সরকার মহাসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। তারা যখন দেখেছে বাধা উপেক্ষা করে মহাসমাবেশে লাখ লাখ লোক যোগ দিয়েছে তখন তারা পরিকল্পিতভাবে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ করে, হামলার মাধ্যমে, আমাদের সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছে।

গত পরশু পুলিশি সহিংসতার এক পর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন। পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের স্থানীয় নেতা শামীম মিয়া। গভীরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন মহাসমাবেশে অংশগ্রহণকারী হাজার-হাজার গণতন্ত্রকামী মানুষ। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অনেক নেতা-কর্মী আজও হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন।

রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশের সব শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ। একদিকে হিংস্র ফ্যাসিবাদ, অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী জনগণ। ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে একটি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন আদায় করে গণতন্ত্রকামী জনগণের একমাত্র লক্ষ্য। আমরা দৃঢ়কণ্ঠে জানিয়ে দিতে চাই যে, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে আমাদের যে চলমান আন্দোলন তা সহিংসতা দিয়ে দমানো যাবে না। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর প্রতি জনগণের যে সমর্থন তা গতপরশু দিনের মহাসমাবেশে অভূতপূর্ব উপস্থিতির মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে। আরও তীব্র মনোবল, দৃঢ় অঙ্গীকার, ও সুসংগঠিত জনসমর্থন নিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনগণ।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/৩০অক্টোবর/জেবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দেশের জনগণ আজ ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করছে: রিজভী

উপজেলা নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-আ.লীগে অস্বস্তি, মাঠপর্যায়ে কেন উপেক্ষিত দলীয় সিদ্ধান্ত

প্রয়াত নেতা পিন্টুর কবর জিয়ারতে বিএনপি নেতারা

ট্রেনভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে কমলাপুরে সিপিবির বিক্ষোভ

জনগণের কাছে হেরে যাওয়ার আগে ক্ষমতা ছেড়ে দিন: ফারুক

দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে মীরজাফর হিসেবে চিনবে: রিজভী

শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুর কাছে গণমাধ্যম বারবার আত্মসমর্পন করেছে: বাংলাদেশ ন্যাপ

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার

কে এই মামুনুল হক? যেভাবে পান ব্যাপক পরিচিতি

হেফাজতের সাবেক নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :