সিদ্ধিরগঞ্জে বস্তাবন্দি স্কুলছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বস্তাবন্দি কিশোরীর মরদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পরও হয়নি কোনো মামলা। মেয়ের লাশ খুঁজে পেয়েও নির্বিকার বাবা-মা।
বৃহস্পতিবার নিজ বসবাসরত বাড়ির অল্প কিছুদূর একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা কিশোরী স্বপ্না আক্তারের (১৪) লাশ।
দীর্ঘ সময় ধরে ফেলে রাখা বস্তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা বস্তাটি খুলে দেখতেন পান বস্তাবন্দি মৃতদেহ ফেলে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে তারা পুলিশকে জানালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শওকত জামিল ঘটনাস্থল গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করেন।
নিহত কিশোরীর শরীরের বেশিরভাগ অংশ পচন ধরে যাওয়ায় তাৎক্ষণিভাবে পরিচয় শনাক্তে সমস্যা হলেও সেসময় ঘটনাস্থলে থাকা দেলোয়ার হোসেন খোকা নামের এক ব্যক্তি ধারণা করেন তার মেয়ের লাশ এটি।
তিনি বলেন, ‘ভিকটিমকে পরিহিত পোশাক তার মেয়ের। ৩০ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ রয়েছে সে।’
বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেল ৫ টায় (নাসিক) ৭ নং ওয়ার্ডস্থ কদমতলী এলাকা থেকে মরদেহ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
মামলা না হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না আশায় মামলা হয়নি। শুক্রবার হওয়াতে এখনো হাতে রিপোর্ট পাইনি। এ ঘটনার আইনগন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।’
নিহত ওই কিশোরী আদমজী এমডব্লিউ স্কুলের ৮ম শ্রেণীতে পড়াশোনা করতো। মরদেহ উদ্ধারের পর তার পিতা দেলোয়ার হোসেন খোকা ও মাতা শাহিনুর আক্তার নিহদকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আত্মীয় স্বজনরা। তবে, পুলিশ বলছে কাউকে আটক করা হয়নি।
ভিকটিমের মা-বাবাকে থানায় জিজ্ঞেসাবাদের জন্য আটক রাখার বিষয় তিনি বলে, ‘আটক রাখা হয়নি তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হচ্ছে মামলার তদন্তের স্বার্থে।’
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ‘সন্তান ৩ দিন যাবত নিখোঁজ হওয়া সত্বেও সংশ্লিষ্ট থানায় কোনো অভিযোগ কিংবা জিডি করেনি পরিবার। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, মেয়ের মৃত্যু হয়েছে তাতে বিন্দুমাত্র অনুশোচনার দেখা মেলেনি পিতা-মাতার। তাদের আচরণে সন্দেহ দেখা দিলে পিতা-মাতাকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শুক্রবার এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞেসাবাদ চলছিল।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নিহত স্বপ্নার পিতা দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের ফাটল রয়েছে তার। ভিকটিম শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ঘরের বড় মেয়ে। স্বপ্নার আরেকটি ছোট বোন রয়েছে তার নাম অনামিকা। ভিকটিমের গলায় পোঁচের দুটি দাগ রয়েছে এবং তার দেহ কম্বল মোড়ানো অবস্থায় বস্তায় ভরা হয়েছে। লাশ থানায় নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ভিকটিমের বাসায় গিয়ে ঘর থেকে বটি এবং একটি চাকু জব্দ করেছে।
ভিকটিমের ছোট চাচা মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা টাইমস প্রতিবেদক। জিজ্ঞেস করা হয় আপনার ভাতিজী নিখোঁজের বিষয়ে আপনারা জানতেন কি না? জবাব তিনি বলেন, ‘না আমাদের জানানো হয়নি। লাশ পাওয়ার পর জেনেছি। ’
স্বপ্নার পিতার আগের সংসারের ঝামেলা সম্পর্কে তিনি বলে, ‘আমরা জানি না সেটা। পুলিশ জিজ্ঞেসাবাদের জন্য দেলোয়ার হোসেন খোকা ভাই আর তার স্ত্রীকে থানায় রেখেছে। আর পুলিশ তাদের তদন্তের স্বার্থে এখানে কয়েকবার এসেছে।’
নিহতের মামাতো ভাই শাকিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘মরদেহ নিয়ে যাওয়ার পর আমার বড় মামা ফখরুদ্দিন বাবুলকে কথা বলার জন্যে নিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়েটি নিখোঁজের সম্পর্কে জানেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না আমাদের জানানো হয়নি। আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ তেমন হয় না। গতকাল ঘটনার পর জেনেছি।’
জিজ্ঞেসাবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শওকত জামিল ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, জিজ্ঞেসাবাদ চলছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। মামলা প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখনো কোনো প্রস্তুতি হয়নি।’
বৃহস্পতিবার লাশ উদ্ধারের পর ভিকটিমের পিতা দেলোয়ার হোসেন খোকা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, গত ৩০ এপ্রিল সকালে স্কুল ড্রেস পড়ে তার মেয়ে স্বপ্না বাসা থেকে বের হন। করে আর বাসায় ফিরেনি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও তার কোনো সন্ধান পাননি তারা। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে থানায় গিয়ে স্কুল ড্রেস দেখে লাশ শনাক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। তবে এটা আমারই মেয়ে।’
(ঢাকাটাইমস/০৩মে/প্রতিনিধি/এসআইএস)

মন্তব্য করুন