বিশ্বকাপে আফগান চমক থামছেই না, হারালো শ্রীলঙ্কাকেও, উজ্জ্বল হচ্ছে সেমির স্বপ্ন

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ২২:৪১

ব্যাটিং এবং বোলিং দুই বিভাগেই দারুণ পারফরমেন্স দেখিয়ে চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানরা। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেওয়া আফগানরা নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয়। আর আজ নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে লঙ্কানদের হারিয়ে আবারও রূপকথার জন্ম দিলো।

আজকের ম্যাচে ব্যাটিং এবং বোলিং দুই বিভাগেই ব্যর্থ শ্রীলঙ্কা। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে আফগানদের বোলারদের বোলিং তোপে মাত্র ২৪১ রানেই অল আউট হয় তারা। ২৪২ রানের লক্ষে ব্যাট করতে নেমে মাত্র শূন্য রানেই প্রথম উইকেট হারায় আফগানরা। শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারনোর পর জুটি গড়েন ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহ। এই জুটির ৭৩ রানে ভর করে ঘুরে দাঁড়ায় আফগানরা। জাদরান ৩৯ রানে ফিরে গেলেও রহমত শাহ তুলে নেন অর্ধশতক। আর শেষের দিকে হাশমতুল্লাহ শাহিদী ও আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের অপরাজিত ১১১ রানের জুটিতে ২৮ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় আফগানরা। হাশমতুল্লাহ শাহিদী ৫৮ ও আজমতুল্লাহ ওমরজাই ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন।

লঙ্কানদের দেওয়া ২৪২ রানের লক্ষ তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় আফগানরা। ইনিংসের চতুর্থ বলেই দিলশান মাদুশঙ্কার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তার বিদায়ে শূন্য রানেই প্রথম উইকেট হারায় আফগানরা।

শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহ। এই জুটিতে ভর করে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৫০ রান করে আফগানরা।

দলীয় ৭৩ রানে ইব্রাহিম জাদরানের বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। হাফ সেঞ্চুরির আশা জাগানো জাদরান ৫৭ বলে ৩৯ রান করে দিলশান মাদুশঙ্কার বলে ডিপ থার্ড ম্যানে দিমুথ করুণারত্নের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে।

ইব্রাহিম জাদরানের বিদায়ের পর হাশমতুল্লাহ শাহিদীকে নিয়ে জুটি গড়েন রহমত শাহ। এই জুটিতে ভর করে ২১ ওভারে দলীয় শতক তুলে নেয় আফগানরা।

এরপরেই ব্যক্তি অর্ধশতক তুলে নেন রহমত শাহ। লঙ্কানদের বিপক্ষে আজ তিনি ৬১ বলে তুলে অর্ধশতক। যার মধ্যে রয়েছে ৫ টি চারের মার।

এই জুটিতে ভর করে আফগানরা যখন বড় সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছিলো তখন আফগান শিবিরে আঘাত হানেন কাসুন রাজিথা। ৭৪ বলে ৬২ রান করা রহমত শাহকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তিনি। রাজিথার বলে মিড অনে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান তিনি।

১৩১ রানে ৩ উইকেট যাওয়ার পর জুটি গড়েন হাশমতুল্লাহ শাহিদী ও আজমতুল্লাহ ওমরজাই। এই ব্যটারই আজ তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। লঙ্কানদের বিপক্ষে আজ হাশমতুল্লাহ শাহিদী অর্ধশতক তুলে নেন ৬৭ রানে আর আজমতুল্লাহ ওমরজাই অর্ধশতক তুলে নেন ৫০ বলে।

শেষ পর্যন্ত এই জুটির ১১১ রানে ভর করে পুনেতে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৪২ রানের লক্ষ্য আফগানরা পেরিয়ে গেছে ৭ উইকেট ও ২৮ বল বাকি রেখে। হাশমতুল্লাহ শাহিদী ৫৮ ও আজমতুল্লাহ ওমরজাই ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন।

এই জয়ের ফলে ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার পাঁচে উঠে এসেছে আফগানিস্তান, সেমিফাইনালের স্বপ্নটা এখন দেখতেই পারে তারা। অথচ আগের দুই বিশ্বকাপ মিলিয়ে মাত্র একটি জয় আফগানদের, সেটিও ২০১৫ সালে।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নামলে শুরু থেকেই দুই লঙ্কান ওপেনারকে চাপে রাখে আফগান বোলাররা। যার ফলে ৫ ওভারে মাত্র ১৮ রান তুলতে পারে লঙ্কানরা। এর পরের ওভারেই লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন নুরের পরিবর্তে দলে জায়গা পাওয়া ফজল হক ফারুকী। এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ফেরান ২১ বলে ১৫ রান করা দিমুথ করুণারত্নেকে। প্রথমে আম্পায়ার ফজল হক ফারুকীর আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় আফগানিস্তান। যাতে সফল হয় আফগানরা। দিমুথ করুণারত্নের বিদায়ে ২২ রানে ভাঙে লঙ্কানদের ওপেনিং জুটি।

২২ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে জুটি গড়েন দিমুথ করুণারত্নে ও কুশল মেন্ডিস। এই জুটিতে ভর করে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৪০ রান তুলে লঙ্কানরা। এই জুটিতে ভর করে শুরুর ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলো লঙ্কানরা। কিন্তু দলীয় ৮৪ রানে পাথুম নিসাঙ্কার বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। এই জুটি থেকে আসে ৬৭ রান। ৪ রানের জন্য আজ হাফ সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হলেন পাথুম নিসাঙ্কা। ৬০ বলে ৪৬ রান করা পাথুম নিসাঙ্কা আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে রহমানুল্লাহ গুরবাজের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে।

পাথুম নিসাঙ্কার বিদায়ের পর সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস। এই জুটিতে ভর করে ২১ ওভারে দলীয় শতক তুলে নেয় লঙ্কানরা। এই জুটিতে ভর করে যখন বড় সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছিলো লঙ্কানরা তখনই আঘাত হানেন মুজিব উর রহমান। মুজবের বলে ৫০ বলে ৩৯ রান করা কুশল মেন্ডিস নাজিবুল্লাহ জাদরানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। তার বিদায়ে ভেঙে যায় ৫০ রানের জুটি। কুশল মেন্ডিসের পথ ধরে ফিরে যান সাদিরা সামারাবিক্রমাও। মুজিবের দ্বিতীয় শিকার হয়ে পিরে যান তিনি। আউট হওয়ার আগে করেন ৪০ বলে ৩৬ রান। তার বিদায়ে ১৩৯ রানেই ৪ উইকেট হারায় লঙ্কানরা।

১৩৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন চরিথ আসালাঙ্কা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তবে এই জুটিও বেশিদূর যেতে পারেনি। দলীয় ১৬৭ রানে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা রশিদ খানের শিকার হয়ে ফিরে গেলে ভেঙে যায় এই জুটি। আউট হওয়ার আগে করেন ২৬ বলে ১৪ রান। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার পথ ধরে ফিরে যান চরিথ আসালাঙ্কাও। ২৮ বলে ২২ রান করা চরিথ আসালাঙ্কা ফজল হক ফারুকীর বলে মিড অফে রশিদ খানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে পিরে যান প্যাভিলিয়নে।

চরিথ আসালাঙ্কার বিদায়ের পর বেশি সময় ক্রিজে থাকতে পারেননি দুশমন্থা চামিরাও। ৪ বলে মাত্র ১ রান করে রান আউটের শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। তার বিদায়ে ১৮৫ রানেই ৭ উইকেট হারায় লঙ্কানরা। ১৮৫ রানে ৭ উইকেট হারানো লঙ্কান দলের হাল ধরেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও মহেশ থেকসানা। এই জুটিতে ভর করে ৪২ ওভার ৫ বলে দলীয় ২০০ রান তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা।

কিন্ত দলীয় ২৩০ রানে মহেশ থেকসানা বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। এই জুটি থেকে আসে ৪৫ রান। ৩১ বলে ২৯ রান করা মহেশ থেকসানা ফজল হক ফারুকীর বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। মহেশ থেকসানার পর ফিরে যান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসও। ফজল হক ফারুকীর বলে লং অনে মোহাম্মদ নবির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান তিনি। আউট হওয়ার আগে করেন ২৬ বলে ২৩ রান। শেষ পর্যন্ত ৪৯ ওভার ৩ বল খেলে সব উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান তুলতে সক্ষম হয় শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তানের হয়ে ফজল হক ফারুকী ৪ টি, মুজিব উর রহমান ২ টি, আজমতুল্লাহ ওমরজাই ১ টি ও রশিদ খান ১ টি উইকেট নেন।

ঢাকাটাইমস/৩০অক্টোবর/এনবিডব্লিউ

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :