মৎস্য সম্পদ পাল্টে দিচ্ছে দ্বীপ জেলা ভোলার অর্থনীতি

ভোলা প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৩৯ | প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:২১

চার দিকে নদী বেষ্টিত উপকূলীয় এলাকা দ্বীপ জেলা ভোলার মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস মৎস্য খাত। এ খাতকে কেন্দ্র করে দিনদিন ভোলার অর্থনৈতিক অবস্থা চাঙা হচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাগর ঘেঁষা এ জেলায় প্রতিবছর ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ উৎপাদন বাড়ছে। গত অর্থ বছরের তুলনায় প্রাকৃতিক ও বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন বেড়েছে। এর ফলে ভোলার প্রায় ২ লাখ মানুষের যেমন এ সেক্টরে কর্মস্থান সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি এ মাছ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু বাজার ব্যবস্থার দুরবস্থার কারণে এ অঞ্চলের জেলেরা মাছের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জেলার মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৩৯ হাজার মেট্রিক টন মাছের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে মোট উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। যা চাহিদা থেকেও ১ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন মাছ বেশি উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ইলিশ আহরণ করেছেন ১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিল টন। তবে গত ২০২১ থেকে ২০২২ সেশনে ইলিশ মাছ আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। অন্যদিকে ২০২১ থেকে ২০২২ সেশনে ঘেরও পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে মাস উৎপাদন হয়েছে ৩৯০৬৭ মেট্রিক টন এবং ২০২২ থেকে ২০২৩ এর উৎপাদন হয়েছে ৩৯৪৪৩ মেট্রিক টন।

সদর উপজেলার ভাঙতির খাল এলাকার মো. সাজি ও নাজিমসহ একাধিক জেলে অভিযোগ করে বলেন, অধিক দামে তেল কিনে নদীতে গিয়ে মাছ ধরে সেই মাছ কম দামে বিক্রি করতে হয়। এক কেজি ওজনের এক হালি ইলিশ আমরা ঘাটে বিক্রি করি সাড়ে তিন থেকে চার হাজার। অন্য আড়তদারেরা তা বিক্রি করছেন সাড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা।

তুলাতুলি মাছ ঘাট এলাকার জেলে মো. কালাম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়া নদীতে গেলে এখন খরচ আগে তুলনায় বেশি হয়। এদিকে আড়তদে কম দামে মাছ বিক্রি করতে হয়। আড়তদার থেকে আগে দাদন নেওয়া তাদের কাছেই বিক্রি করতে হয় মাছ।

তবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির ভোলা জেলার সভাপতি মো. এরশাদ জানান, এ বছর জেলেরা প্রায় ২ লাখ মেট্রিল টন ইলিশ আহরণ করেছেন। সেই মাছ দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

সদর উপজেলার পরানগঞ্জ সাইন্টিফিক হ্যাচারির ম্যানেজার মো. সালাম জানান, প্রতিবছর বাণিজ্যিকভাবে তাদের হ্যাচারিতে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ চাষ করা হয়ে। এতে খরচ বাদ দিয়ে তাদের বছরের প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা লাভ হয়। তাদের উৎপাদিত মাছ ভোলায় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে এ হ্যাচারিতে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করে আসছেন বলেও জানান তিনি।

তুলাতুলি মাছঘাটের আড়তদার মো. ইউনুছ বেপারী জানান, এ মৌসুমে জেলার বাইরের বিভিন্ন মোকামে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ পাঠিয়েছেন। তাদের এ ঘাট থেকে এসব মাছ জেলার বাইরে বরিশাল, খুলনা, যশোর ও মাওয়া পাঠানো হয়ে থাকে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভোলা এমন একটি জায়গায় যেখানে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার মতো বড় নদী রয়েছে। এ উপকূলীয় এলাকার যেমন এখনে প্রজনন ক্ষেত্র তেমনই এখানে বিচরণ ক্ষেত্র ও নার্সারি গ্রাউন্ডও রয়েছে। প্রতি বছর এ জেলা থেকে ২ লাখ মেট্রিক টন মাছ বিদেশসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সারাদেশে যে ইলিশ মাছ উৎপাদন হয় তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন হয় ভোলায়। এজন্য ভোলার মৎস্যের অর্থনীতির ওপর অনেকটা নির্ভর করে এ জেলার প্রায় ২ লাখ পরিবার। আগামীতে এ মৎস্য সম্পদ ভোলার অর্থনীতিকে আরও পাল্টে দেবে বলেও মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :