উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে করে প্রাকৃতিক দাওয়াই বাঙ্গি ফল

সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ দেননি, তার ওষুধ নেই। প্রকৃতিতেই রয়েছে সব রোগের দাওয়াই। যুগে যুগে হেমিকদের মতে, মৌসুমী রোগের দাওয়াই রয়েছে মৌসুমী ফলেই। রোগ হলে তো ওষুধ খেতেই হয়। তবে রোগ ঠেকাতে কাজে দেয় প্রাকৃতিক ফল বাঙ্গি। বর্তমানে চলছে বাঙ্গির মৌসুম। কম বেশি প্রায় সব জায়গার বাজারই ভরপুর গ্রীষ্মের এই ফলে।
বাঙ্গি এক রকমের শশা জাতীয় ফল যার অন্য নাম খরমুজ, কাঁকুড়, ফুটি। যার বৈজ্ঞানিক নাম কাকুমিস মেলো এবং ইংরেজি নাম মাস্কমেলন। দেশের প্রায় সব এলাকাতেই গ্রীষ্মকালে বাঙ্গি জন্মে। তরমুজের পর এটিই অধিক প্রচলিত শসা গোত্রীয় ফল। বাঙ্গিগাছ দেখতে অনেকটা শসা গাছের মতো, লতানো।
ছোট এবং লম্বাটে জাতকে চিনাল বলা হয়। লতানো গাছে ধরা বাঙ্গিকে অনেকে ফুটি বলেও ডাকে। ফুটি বেশ বড় আকারের হয়, কাচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ রঙের হয় এবং ফেটে যায়। ফলের বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো হালকা ডোরা কাটা খাঁজযুক্ত। খেতে তেমন মিষ্টি নয়, অনেকটা বেলে বেলে ধরনের। এর ভেতরটা ফাঁপা থাকে। কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
রসাল এই ফলটির মিষ্টি কম হওয়ায় অনেকে খেতে আগ্রহ দেখান না, অনেকে অপছন্দ করেন। কিন্তু পুষ্টিগুণে এর জুড়ি নেই। তাই বাঙ্গিকে অবহেলা করা উচিত নয়। বাঙ্গির পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। এটি ভিটামিন ‘সি’, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফলটি খেলে যেসকল সুফল পাওয়া যায়।
বাঙ্গি ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ একটি ফল। গরমে শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এটি।বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পানি, যা গরমে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে গরম ও অতিরিক্ত রোদের জন্য হয় সানবার্ন, সামার বয়েল, হিট হাইপার পাইরেক্সিয়া। বাঙ্গির রস এই অসুখগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। বাঙ্গি এই পানির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।
গরম ও অতিরিক্ত রোদের কারণে সানবার্ন, ফিট হাইপার পাইরেক্সিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। বাঙ্গির রস এসব সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রয়োজন হয়। বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। ফলে, এই ফল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
বাঙ্গিতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। হার্টের রোগীরা শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ অর্থাৎ ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স করার জন্য খাদ্যতালিকায় বাঙ্গি রাখতে পারেন।
বাঙ্গি ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করে। এটি ত্বকের কোষ নষ্ট হয়ে গেলে তা ঠিক করতে সাহায্য করে। বাঙ্গির প্রোটিন কম্পাউন্ড ত্বককে করে সুন্দর। বাঙ্গি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করুন।
ব্রণ বা একজিমার সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিন এক গ্লাস বাঙ্গির শরবত খান। এ ছাড়াও বাঙ্গি ভালো করে ব্লেন্ড করে ছেঁকে রসটুকু বের করে তা লোশনের মতো ব্যবহার করুন। এতে ব্রণ এবং একজিমার সমস্যা দূর হয়।
বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘ইন্সনিটোল’, যা আমাদের চুল নতুন করে গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে থাকে। তাই নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুলের অনেক উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ব্লেন্ড করা বাঙ্গি শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনারের মতো ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ কার্যকরী।
বাঙ্গি ফলের পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সক্ষম। বাঙ্গি মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে শরীরের অবসাদ ভাব দূর করে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব উপকারী বাঙ্গি। নিয়মিত বাঙ্গির শরবত খেলে খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও অ্যাসিডিটি দূর হয়।
বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। তাই মানুষের জন্য, বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য বাঙ্গি বিশেষ উপকারী ফল।
বাঙ্গিতে কোনো চর্বি নেই। যারা দেহের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিশেষ চিন্তায় ভোগেন, তারা এ ফল খেতে পারেন নির্দ্বিধায়। দেহের ওজন কমাতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বাঙ্গির ভূমিকা অপরিহার্য।
বাঙ্গিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। বাঙ্গিতে চিনির পরিমাণ রয়েছে খুবই কম, তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে।
(ঢাকাটাইমস/১০ এপ্রিল/আরজেড)

মন্তব্য করুন