জোট সরকার শিক্ষার হার ৬৫ থেকে ৪৩ শতাংশে নামিয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী

বর্তমানে শিক্ষার হার ৭৬.০৮ ভাগ বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জোট সরকার (বিএনপি-জামায়াত) শিক্ষার হার ৬৫ থেকে ৪৩ শতাংশে নামায়।
রবিবার সকালে গণভবনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরের পর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বহুল প্রতীক্ষিত এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পরীক্ষা-২০২৩ এর ফল প্রকাশিত হচ্ছে। করোনা মহামারির জন্য ২০২১ ও ২০২২ সালে সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা সম্ভব হয় নাই। করোনা মহামারির পর এবার প্রথম পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা হয়েছে। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ফল প্রকাশিত হলো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৩ সালে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮৮ জন। ছাত্র সংখ্যা ৬ লাখ ৯৮ হাজার ১৩৫ জন, যা ৫০.৭৯% এবং ছাত্রী সংখ্যা ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৩৫৩ জন, যা ৪৯.২১%। গত বছরের তুলনায় এ বছরেও ফলের সূচকে বেশ কিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এর পেছনে আমাদের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
বিনামূল্যে সঠিক সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়া, টেলিভিশনে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পাঠদান প্রচার, উপবৃত্তি প্রদান এবং শিক্ষার উপকরণ হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার ফল প্রক্রিয়াকরণ ও চূড়ান্তকরণ সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও পরীক্ষার্থীরা ঘরে বসেই পরীক্ষার ফল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবে।
সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠান ও ফল প্রকাশে আন্তরিক সহযোগিতার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ এবং পরীক্ষায় কৃতকার্য সব পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমি আশা করব তারা নব উদ্যমে পূর্ণ প্রস্তুতিতে আগামীতে পরীক্ষা দিয়ে সফল হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষার হার ৭৬.০৮ ভাগ। জোট সরকার শিক্ষার হার ৬৫ থেকে ৪৩ শতাংশে নামায়।
শিক্ষা খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে মোট ৫ হাজার ৯৭টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ৭৫৮টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২ হাজার ৬২৯টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২২৬টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৩৭৯টি এবং ডিগ্রি কলেজ ১০৫টি।’ তিনি বলেন, ‘নতুন করে ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি মহাবিদ্যালয় (সরকারি) এবং সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে ৬২টি নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ১৯টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জেলা সদরে অবস্থিত ৭০টি সরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ, ২০০টি সরকারি কলেজ এবং নির্বাচিত ১ হাজার ৬১০টি বেসরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতি উপজেলায় আন্তর্জাতিক মানের একটি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ২৩টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং নতুন ২টি সার্ভে ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে প্রি-ভোকেশনাল শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বইসহ চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা ও সাদরি- এই পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করছি।’
কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৪১ শতাংশে উন্নীত করার জন্য ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
‘এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করা হয়েছে এবং এ শিক্ষাকে কর্মমুখী শিক্ষা হিসেবে রূপান্তরের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে’- বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ২০২৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। যার মূল ভিত্তি হবে ড. কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এবং সর্বোপরি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।’
(ঢাকাটাইমস/২৬ নভেম্বর/জেএ/এফএ)

মন্তব্য করুন