খুন করলে কেমন লাগে- এমন কৌতূহলে গৃহশিক্ষিকাকে হত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:২১

অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ হত্যা করে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে। কখনও সেই হিংসার জন্ম দেয় টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিবাদ, কখনও পুরোনো শত্রুতা। কিন্তু কোনো মানুষকে খুন করলে কেমন লাগে, সেই কৌতূহল থেকে কেউ কাউকে হত্যা করেছেন, এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। এই বিরল ঘটনাই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। শুধুমাত্র কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে এক গৃহশিক্ষিকাকে হত্যা করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন জুং ইয়ু-জং ২৩ বছর বয়সি এক নারী।

শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে একটি জেলা আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। যদিও এ ঘটনার জন্য হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইয়ন নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, অপরাধ বিষয়ক উপল্যাস, সিনেমা, ওটিটি সিরিজের পোকা ছিল ২৩ বছর বয়সী জুং ইয়ু-জং। বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকত সে, কারও সঙ্গে সম্পর্কও ছিল না। রহস্য এবং অপরাধ সংক্রান্ত উপন্যাস, টেলিভিশন শো নিয়েই তাঁর দিন কাটত। দীর্ঘদিন ধরে এই কাল্পনিক অপরাধের জগতে ঘোরাঘুরি করতে করতে তার বাস্তবে অপরাধ করার ইচ্ছে জেগেছিল। আর শিকার খোঁজার জন্য সে বেছে নিয়েছিল এক টিউটরিং অ্যাপ।

এ অ্যাপের মাধ্যমে গৃহশিক্ষকদের সন্ধান পাওয়া যায়। গৃহশিক্ষকদের মধ্যেই বা বলা ভাল, শিক্ষিকাদের মধ্যেই সে তার শিকার খুঁজেছিল। চলতি বছরের মে মাসে, সে প্রথম অ্যাপটিতে যোগ দিয়েছিল। ৫০ জনেরও বেশি নারী গৃহশিক্ষিকাকে যাচাই করার পর, এক ২৬ বছর বয়সী ইংরেজি-ভাষার শিক্ষিকাকে বেছে নিয়েছিল সে।

নিজের পরিচয় দিয়েছিল এক শিশুর মা হিসেবে। শিক্ষিকাকে সে জানিয়েছিল, তার সন্তান উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। এরপর, বুসানে সেই শিক্ষিকার বাড়িতেই তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিল সে। পুলিশ জানিয়েছে, নিজেকে ছাত্রীর মা হিসেবে পরিচয় দিলেও, গৃহশিক্ষিকার বাড়িতে নিজেই স্কুল ইউনিফর্ম পরে গিয়েছিল জু ইউ-জং। তাঁর বাড়িতে ঢুকেই সে একটি ছুরি দিয়ে গৃহশিক্ষিকাকে কোপাতে শুরু করেছিল।

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, শিক্ষিকাকে সে ১০০ বারেরও বেশি আঘাত করেছিল। এমনকি, শিক্ষিকার মৃত্যু হওয়ার পরও সে ছুরি দিয়ে কোপানো বন্ধ করেনি। এরপর তাঁর দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে দেহাংশগুলিকে একটি স্যুটকেসে ভরেছিল সে। স্কুলের ইউনফর্ম ছেড়ে নিহত শিক্ষিকার পোশাকটি পরে নিয়েছিল সে। তারপর একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে সুটকেসটি বুসানের এক নদীর ধারে একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। শরীরের কিছু অংশ অবশ্য সে নিজের বাড়িতে রেখে দিয়েছিল।

তবে অপরাধের নেশায় সে কোনওরকম সতর্কতা অবলম্বন করেনি। আর সেই কারণেই দ্রুত ধরাও পড়ে গিয়েছিল জু ইউ-জং। যে ট্যাক্সিতে করে, সে দেহ লোপাট করতে গিয়েছিল, সেই ট্যাক্সির চালক দেখেছিলেন, ইউ-জং-এর পোশাকে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। এ ছাড়া স্যুটকেসটি নির্জন জায়গায় ফেলে আসতে দেখে তার সন্দেহ হয়েছিল। তিনি পুলিশে খবর দিয়েছিলেন।

এরপরই দেহাংশগুলো উদ্ধারের পর এই বিষয়ে তদন্তে নেমেছিল পুলিশ। জং-এর অনলাইন ব্রাউজিং ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, কাউকে কীভাবে হত্যা করতে হয়, সেই বিষয়ে কয়েক মাস ধরে গবেষণা করেছিল সে। শিক্ষিকার বুসানের বাড়ির কাছে সিসিটিভি ক্যামেরাও লাগানো ছিল। সেই ক্যামেরায় গৃহশিক্ষিকার বাড়ি থেকে তার স্যুটকেস নিয়ে বের হওয়ার ছবি বন্দি হয়েছিল।

ধরা পড়ার পর পুলিশি জেরার মুখে প্রাথমিকভাবে অপরাধ অস্বীকার করেছিল ইউ-জং। পুলিশ কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে সে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত গত জুন মাসে নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছিল সে।

শুক্রবার বুসান জেলা আদালতের বিচারক, রায় ঘোষণার সময় বলেন, কোনও কারণ ছাড়াই কারও হত্যা হতে পারে। এই হত্যাকাণ্ডে সমাজে এই ভয় তৈরি হয়েছে। জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আদালতে ইউ-জং দাবি করে, সে সেই সময়ে ‘হ্যালুসিনেশন’ এবং অন্যান্য মানসিক ব্যাধিতে ভুগছিল। তাই, তার সাজা কমানো হোক। আদালত কিন্তু তার যুক্তি মানেনি। বিচারক জানান, পরিকল্পনা করে সতর্কতার সঙ্গেই এই অপরাধ করেছিল ইউ-জং। তাই তার মানসিক ও শারীরিক ব্যাধির দাবি মেনে নেওয়া যায় না।

(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :