দ্রব্যমূল্যের কশাঘাত

এবার ডিম আলু খাওয়াও বাদ দিলেন নিম্নবিত্ত শিরিনরা

তানিয়া আক্তার, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১১| আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৬
অ- অ+

দীর্ঘদিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজারে হিমশিম খাচ্ছে দেশের মানুষ। চাল, ডাল, তেল থেকে শুরু করে আলু, পেঁয়াজ, এমনকি ডিম- সবই যেন স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। বছরজুড়ে এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাসব্যাপী টানা হরতাল-অবরোধেরও প্রভাব পড়েছে। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ফুটপাতের ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষের বেঁচে থাকাই দায়। কীভাবে বেঁচে আছেন এই স্বল্প আয়ের মানুষেরা? এর উত্তর খুঁজতে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ধাক্কা লেগেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখের টেকের বস্তিবাসীদের জীবনে। এই এলাকার বস্তির ভাড়া সর্বনিম্ন ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। এখানকার শ্রমজীবী মানুষেরা জানান, বাজার খরচ বেড়ে যাওয়ায় মাছ-মাংসের পর তারা এবার খাবার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন ডিম আর আলুও।

অন্তত ১০ জন নিম্নবিত্তের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস। তারা জানান, বছরে একবারও চোখে দেখেন না মাংস। কালেভদ্রে কেনেন ‘পচা’ মাছ। প্রয়োজনীয় সকল পণ্য কাটছাঁট করেই জীবন টিকিয়ে রেখেছেন তারা।

এই বস্তিতেই থাকেন গৃহকর্মী শিরিন (ছদ্মনাম)। তিনি ঢাকা টাইমসকে জানান, স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন মাসে পনেরো দিন। বাকি দিনগুলো কাজের অভাবে বসে থাকতে হয়। তাদের তিন সন্তানই পড়াশোনা করেন। শত কষ্টেও সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। কমিয়ে এনেছেন খাওয়া খরচ।

তিনি বলেন, ‘বাজারপাত্তির এত্ত দাম। মাত্র একজনের বাসায় কাজ করি। মাস শেষে দেহা যায় মাইনসের কাছ থেইকা টাকা ধার লইতে অয়। কেমনে যে জীবন পার করতাছি। জীবন বাঁচান হইলো আসল কতা।’ বস্তির আরেক বাসিন্দা নীলিমার স্বামী ফার্নিচারের দোকানে বার্নিশের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘যে চাইল (চাল) আগে ৩০ টেকা দিয়া কিনতাম অহন ৫৫ টেকা কেজি। আগে যে তেল ১৭০ টেকা কইরা খাইছি অহন বাইড়া হইছে ২০০ টেকা। তেল আর চাইল কিনতেই তো কষ্ট। আর খামু কি?’

রাজধানীতে বছর তিনেক ধরে রিকশা চালাচ্ছেন গোলাপ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আগে দিনে আয় হতো ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা। হরতাল চলে, ঢাকার বাইরে থেকে মানুষ আহে না। এখন পাই ৫০০ টাকার মতো। কী খাই আর না খাই কী কমু? আল্লাহ বাঁচায় রাখছে!’

এই রিকশাচালক জানান, যারা রিকশায় চলতেন তারাও খরচ কমানোর জন্য পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির দাপটে জীবনের মূল্যও কমিয়ে এনেছেন অনেকে। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করতে না পারায় ছেলের পড়াশোনা বন্ধ করেছেন একজন বাবা। গাড়ির গ্যারেজে কর্মরত বাচ্চু মিয়ার তিন সন্তানের মধ্যে দুই সন্তান ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘ছোট পোলাডারে ইস্কুল থেইকা ছাড়ায়া নিয়া আসলাম। বেতন দিবার পারি না। পোলা আর মাইয়া একই ইস্কুলে পড়তো। দুইজনের মাসে খরচ হইয়া যাইতো ৩ হাজার পাঁচশো টাকা। অহন শুধু মাইয়াডারে পড়াইতাসি। বড় পোলাডা আর আমিই আয় করি। ঘরে আমার মা আছে, বইনও আছে। এহন সবাই মিইলা খালি সবজি খাই।’

সবমিলিয়ে নিত্যপণ্যের এই বাজারে গরিব হয়েছেন আরও গরিব। মাসের পর মাস পেরিয়েও খেতে পারছেন না মাছ-মাংস। নিজেদের সন্তানদের শিক্ষিত মানুষ করার আকাঙ্ক্ষাও অধরায় মিলিয়ে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের স্বাভাবিক বাজার ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/০৯ডিসেম্বর/টিএ/এসআরপি/আরআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর: তাদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তবুও বহাল...
পাকিস্তান থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে ফেরানো হবে রিশাদ ও নাহিদকে!
মেঘনায় অনুমোদনহীন ডেন্টালে জীবাণুযুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ছড়াচ্ছে হেপাটাইটিস বি
ই-হজ সিস্টেমে ভিসা বাতিল করার অপশন চালু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা