পত্রিকার ভুয়া বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে ৬৩৯ প্লট বরাদ্দের চেষ্টা!

রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য বেদখলে থাকা ৬৩৯টি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির জন্য জনসংযোগ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ পাওয়ার পরপরই ‘বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশের ব্যবস্থা করে জনসংযোগ বিভাগ। নির্ধারিত সময়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে এমন পত্রিকাসহ নথিও উপস্থাপন করা হয় বিভাগটিতে।
বিস্ময়কর হলো- প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তিই প্রকাশ হয়নি কোনো পত্রিকায়! বরং জনসংযোগ বিভাগে কর্মরত অফিস সহকারী নিজেই প্রেস থেকে ভুয়া বিজ্ঞপ্তি যুক্ত পত্রিকার কাটিং প্রিন্ট করে নথিপত্র তৈরি করে নিজ এবং ভূ-সম্পত্তি দপ্তরে উপস্থাপন করেন। তাও আবার নিজ স্বাক্ষরে। মূলত ৬৩৯ প্লট বরাদ্দের চেষ্টা ছিল তার। শেষ পর্যন্ত তার অপচেষ্টা হয়েছে ব্যর্থ।
এমন জাল-জালিয়াতির মূল হোতা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জনসংযোগ দপ্তরের সাবেক অফিস সহকারী শামসুল আরেফিন। শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি তার। অসাধু উপায়ে প্রতারণার আশ্রয়ে ভুয়া ও জাল কাগজ তৈরির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। ২৮ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি দায়ের করা হয়। কার্যালয়টির সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আসামি শামসুল আরেফিন (৩৪) লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার রামপুর গ্রামের মৃত আহসান উল্লাহ’র ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৮টি রেলস্টেশনের অবৈধভাবে দখলে থাকা ৬৩৯টি প্লট বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য দরপত্র আহ্বান করে দুটি জাতীয় এবং দুটি আঞ্চলিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারের ব্যবস্থার জন্য ২০১৯ সালের ১৫ মে জনসংযোগ বিভাগকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেন বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা। চিঠিটি জনসংযোগ বিভাগে কর্মরত অফিস সহকারী শামসুল আরেফিন নিজ স্বাক্ষরে ২০১৯ সালের ১৬ মে গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২৯ মে জনসংযোগ বিভাগের প্রধানের স্বাক্ষর না নিয়ে ‘ফর’ দিয়ে চারটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার হয়েছে মর্মে পত্রিকায় প্রচারের কপি বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রেরণ করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে, ২০১৯ সালের ১৭ মে দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রাম মঞ্চ পত্রিকায় এবং ২০১৯ সালের ১৮ মে দৈনিক মানবজমিন ও নিউ ন্যাশন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারের তথ্য উপস্থান করে শামসুল আরেফিন। অথচ ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার অফিস থেকে আসা চিঠি জনসংযোগ দপ্তরের রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ না করে কিংবা অফিস প্রধানের নিকট উপস্থাপন না করে এবং অবহিত না করে ভুয়া স্বাক্ষরে নিজেই জাল কাগজ তৈরি করেন। পত্রিকায় প্রচার না হওয়ার সত্ত্বেও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রচার দেখিয়ে জনসংযোগ দপ্তরের ব্যবহৃত ফরম ব্যবহার করে স্মারক বিহীন পত্রিকায় প্রচারের কপি বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রেরণ করেন আরেফিন।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বলেন, জাল জালিয়াতির মাধ্যমে স্বাক্ষর ব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করেছিলেন। কমিশনের নির্দেশনা পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২জানুয়ারি/এআর)
মন্তব্য করুন