ইসরায়েলি হামলায় আরও ২ সাংবাদিক নিহত
গাজা উপত্যকার সীমান্তবর্তী রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় বার্তা সংস্থা এএফপির ক্যামেরাম্যান মুস্তফা থুরায়া এবং কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ওয়ায়েল আল-দাহদুরের ছেলে হামজা নিহত হয়েছেন।
রবিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিববার ইসরায়েলি হামলার খবর সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলেন এএফপির ক্যামেরাম্যান মুস্তাফা ও হামাজা। কিন্তু পথিমধ্যেই হামলার শিকার হয় তাদের বহনকারী গাড়িটি। এতে নিহত হন দুইজন।
হামজার বাবা ওয়ায়েল আল-দাহদুর আল জাজিরার গাজা ব্যুরোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে গত ৭ অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের বিমান হামলায় দাহদুর মা, আরেক ছেলে, মেয়ে এবং নাতিসহ পরিবারের চার সদস্য প্রাণ হারান। এর কয়েকদিন পর তার বাবাও দখলদার বাহিনীটির হামলায় আহত হন।
এবার ছেলেকে হারিয়ে ফের বাকরুদ্ধ আল জাজিরার এই সাংবাদিক। এর পরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে তিনি বলেন, আমরা এগিয়ে যাবো। গাজায় কী হচ্ছে, কী ধরনের বর্বরতা চলছে তা বিশ্ববাসীর দেখা উচিত।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, রাফাহতে এ দুই সাংবাদিককে বহনকারী গাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে যেখানে হামলা চালানো হয়েছে, সেটিকে নিরাপদ করিডোর হিসেবে ঘোষণা করেছিল ইসরায়েল।
তবে এ হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বরাতে আনাদোলু জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত ১০৯ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৭০ ফিলিস্তিনি, চার ইসরায়েলি ও তিনজন লেবাননের সাংবাদিকও রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে হাসপাতালে আনা হয়েছে এমন নিহত ফিলিস্তিনিদের মোট সংখ্যা ২২ হাজার ছড়িয়ে গেছে। এছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরে ৩২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৮ হাজার ফিলিস্তিনি।
এছাড়া প্রায় তিন মাস ধরে ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে, যা গত ৭৫ বছরে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মাঝে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতিতে ২৪ বিদেশিসহ মোট ১০৫ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ২৪০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ জন মহিলা এবং ১৬৯টি শিশু রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি শেষে গত ১ ডিসেম্বর থেকে গাজা উপত্যকায় পুনরায় সংঘাতে জড়ায় ইসরায়েল ও হামাস।
অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জন। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
(ঢাকাটাইমস/০৮জানুয়ারি/এমআর)