দেড়শ টাকার কম্বল ৪০০ টাকা!

পৌষের শেষার্ধে কুয়াশায় কাঁপছে দেশ। উত্তুরে হাওয়াসহ বইছে শৈত্যপ্রবাহ। হিম হাওয়ায় নাকাল ঢাকাবাসীও। শীতের অনুভূতি বেড়ে যাওয়ায় পাতলা শীতবস্ত্রের চেয়ে কম্বলের প্রতি ঝুঁকছেন নগরবাসী। কিন্তু কম্বলের দাম শুনে অবাক বনে যান ক্রেতারা। ধরনভেদে কম্বলের দাম গত বছরগুলোর তুলনায় এবার বাড়তি দামে বিক্রির অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। যেন শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কম্বলের দামও।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেট এলাকায় শপিংমলসহ ফুটপাতে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নগরীতে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকায় কম্বল কিনতে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানে এসেছেন স্নিগ্ধা দেবনাথ। কিন্তু গত বছর যে দামে কম্বল কিনেছিলেন হঠাৎ তা বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। দাম বাড়ানোর নানা অযুহাত দেখালেও ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছেন না দোকানি।
অভিযোগ করে স্নিগ্ধা দেবনাথ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই পাতলা কম্বলগুলো প্রতিবারই ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এটা প্রায় সবাই জানেন। এগুলো অন্য কোনো সময় দামাদামি করতে হয়নি। কিন্তু এবার কোনোভাবেই ৪০০ টাকার নিচে বিক্রি করছে না।’
ফুটপাতে অস্থায়ী দোকানে রাখা কম্বলগুলোর একটি খুলে দেখিয়ে দোকানদার মোছাব্বের আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়ছে। নতুন বছর কম্বলের দামও তো বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’ তবে এই দোকানি বিগত বছরগুলোতে পাতলা কম্বল বিক্রি করেছেন ১৫০ টাকায়। কিন্তু চলতি বছর দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন ৪০০ টাকায়। এই বাড়তি দাম রাখার দোষ চাপালেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির উপর।
বিক্রেতা মোছাব্বের আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কাঁচাবাজারসহ সব পণ্যেরই তো দাম বাড়ছে। আমরা দাম না বাড়াইলে নিজেরা চলব কীভাবে?’
মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের পাশে অবস্থিত একটি শীতবস্ত্রের দোকানের বারান্দায় দেখা গেল সারি সারি কম্বল রাখা। সেখানেও পাতলা সিঙ্গেল কম্বলগুলো ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাপড়ের মান এবং আকারের কারণে দাম বাড়তি বলে দাবি বিক্রেতাদের।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার শীতবস্ত্রের দোকান ও ফুটপাতে ক্রেতাদের ভিড় জমেছে। সেখানেও কম্বলের বাড়তি দাম চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে দোকানের সংখ্যা বেশি থাকায় দামদর করে কেনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দামদর করতে নারাজ ক্রেতারা। তাদের মতে সিঙ্গেল পাতলা কম্বলগুলো কয়েকবছর ধরেই ডেকে ডেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখেছেন। কিন্তু হঠাৎ এ বছর দাম বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ক্রেতা জাকির হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শীতেও কষ্ট। কম্বল কিনতে এসেও কষ্ট। এই পাতলা কম্বল একটা দিয়া শীত কাটে না। তাই একসঙ্গে দুইটা কিনতে চাইছিলাম। কিন্তু কম্বলগুলারও দাম বাড়ায়ে দিছে।’
উল্লেখ্য, ঢাকার কোথাও কোথাও শুক্রবার দুপুর পর্যন্তও দেখা মেলেনি সূর্যের। বরং ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে হিম হয়ে আছে নগরবাসী। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কমে বাতাসযুক্ত হওয়ায় শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে নগরবাসীর।
শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রামে সূর্যের দেখা মিলছে না তিন দিন যাবৎ। তীব্র ঠাণ্ডায় কুড়িগ্রামে কাবু শ্রমজীবী মানুষ। শীতের প্রবল আবহে কাবু সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের অসহায় মানুষ। শীতের দাপটে এক কথায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলসহ দেশজুড়েই বাড়ছে শীতের তীব্রতা।
(ঢাকাটাইমস/১২জানুয়ারি/টিএ/কেএম)

মন্তব্য করুন