দেনা-পাওনা নিয়ে তর্কের জেরে পরিকল্পিত হত্যা, গ্রেপ্তার ৩

দেনা পাওনা নিয়ে তর্কের জেরে ইজিবাইক চালককে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এবিষয়ে র্যাব ৩ এর টিকাটুলি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
র্যাব জানায়, শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানা এলাকায় ইজিবাইক চালককে ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় অন্যতম প্রধান আসামি ও মূল পরিকল্পনাকারী শরিয়তপুরের ইমাম হোসেনের ছেলে আরিফ (২২), আবুল বেপারীর দুই ছেলে ছেলে পারভেজ বেপারী (২৬) এবং সজিব বেপারীকে রায়ণগঞ্জ সদর ও ঢাকার বনানী থানাধীন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।
র্যাব ৩ এর অধিনায়ক বলেন, অটোরিকশা চালক হাবিবুর রহমান ওরফে হাবু মাদবর এর সঙ্গে গ্রেপ্তার আরিফের টাকার লেনদেন ছিল। তাদের মধ্যে দেনা পাওনা নিয়ে তর্ক বিতর্ক এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আরিফ হাবিবের উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। গ্রেপ্তারকৃত আরিফ তার বন্ধু নাহিদ সরদার, পারভেজ বেপারী, সজিব বেপারীসহ তার আরও বেশ কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে এ ব্যাপারে গোপনে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১ টায় ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আরিফ এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা একত্রিত হয়ে সুইচ গিয়ার, চাকু, চাপাতি সহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সখিপুর থানাধীন কাচিকাটা ইউনিয়নের ৮৯ নং হাজিয়াবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অপেক্ষা করে। ভিকটিম হাবিব অটোরিক্সায় যাত্রী নিয়ে নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার বাজার থেকে সখিপুর থানার চর দুলার চর এলাকায় যাওয়ার পথে অটোরিকশা থামিয়ে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু করে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভিকটিমের উপর তারা হামলা চালায়। হামলার মধ্যে নাহিদ সরদার তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে ভিকটিম হাবিবুর রহমানের মাথায় সজোরে কোপ দেয়। তখন হাবিবুর রহমান মাথা সরিয়ে নিলে তার কাধে চাপাতির কোপ লাগে। পরবর্তীতে ধৃত পারভেজ ও সজিব সহ অন্যান্য সহযোগীরা ভিকটিমকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে এবং ধৃত আরিফ হাবুর পেটের মধ্যে সুইচ গিয়ার দিয়ে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। আঘাতের ফলে ভিকটিম হাবু গুরুতর জখম প্রাপ্ত হয়ে অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকে।
তিনি বলেন, ধৃত আসামিগণ সহ তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পালিয়ে যায়। পালানোর সময় স্থানীয় জনতা নাহিদ সরদার কে আটক করে এবং এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হস্তান্তর করে।
স্থানীয় লোকজন ভিকটিম হাবুকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তৎক্ষণাৎ স্থানীয় একটি সরকারি হাসাপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের বড় ভাই জসিম মাদবর বাদী হয়ে ০৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৫-৬ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে সখিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার অন্য তিন জন এজাহারনামীয় আসামি আশরাফুল দেওয়ান, মাহাবুব বেপারী ও ইউসুফ সহ অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামিরা পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে র্যাবের অভিযান অব্যহত রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বর্ণনায় দিয়ে তিনি আরও বলেন, আরিফ সখিপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের একজন সক্রিয় সদস্য এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সে মাঝে মাঝে অটোরিকশা চালাতো, কখনো কখনো ট্রাকের হেলপারী করতো কিন্তু তার মূল কাজ ছিল কিশোর গ্যাং ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করা। নিজে বেপরোয়া চলাফেরার পাশাপাশি এলাকায় কিশোরদের টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করাতো। পারভেজ এবং সজিব বেপারী আপন দুই ভাই। পারভেজ ৮ম শ্রেণী এবং সজিব ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তাদের মা একজন জর্ডান প্রবাসী এবং বাবার সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। অল্প বয়সে। বাবা-মা কে কাছে না পেয়ে পড়াশোনা না করে তারা এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তারা আরিফের নেতৃত্বে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকানণ্ডে জড়িত ছিলো। ধৃত আরিফ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত পারভেজ সকলকে ফোন করে একত্রিত করে এবং নিজে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে।
(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/এইচএম/এসএম)

মন্তব্য করুন