বাণিজ্য নিয়মকানুন যথাযথ না মানলে নিষেধাজ্ঞা-জরিমানা, বাংলাদেশকে হুঁশিয়ারি ইইউর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:৫৯ | প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:৩০

মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশ ডিউ ডিলিজেন্স বা নিয়মকানুন যথাযথভাবে পালন না করলে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কর্মকর্তারা।

একইসঙ্গে তারা বলেছেন, জরিমানার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের জন্য ব্র্যান্ডগুলোকে বাধ্য করা হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ‘আইনের যথাযথ পরিপালন’ বিষয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন হুঁশিয়ারি দেন ইইউ কর্মকর্তারা। গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)।

আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ুন রশীদের সভাপতিত্বে গোলটেবিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেপুটি হেড অব ইইউ মিশন বার্নড স্প্যানিয়ার।

অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এবং আইবিএফবি সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকী। অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জানান আইবিএফবি উপদেষ্টা মুহাম্মদ আবদুল মজিদ।

মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো মানতে একগুচ্ছ নিয়মকানুন তৈরি করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদেশগুলো। নিয়ম না মানলে উৎপাদক, ক্রেতা ও ব্র্যান্ড—যে কাউকেই দেওয়া হতে পারে নিষেধাজ্ঞা, বা আরোপ করা যেতে পারে বড় ধরনের জরিমানা।

আলোচনা অনুষ্ঠানে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, যে ডিউ ডিলিজেন্স আইন করা হয়েছে, তা শুধু ক্রেতা–বিক্রেতার বিষয় না; সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত সবার পালনের জন্যই তা করা হয়েছে। এসব নিয়মকানুনের মধ্যে শিশুশ্রম, বাধ্যতামূলক শ্রম, দাসত্ব (স্লেভারি), বন ধ্বংস, পরিবেশদূষণ, ইকোসিস্টেমের ক্ষতি করা ও মানবাধিকারের মতো বিষয় রয়েছে। সুতরাং এসব শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের একার স্বার্থ নয়, এর সঙ্গে বৈশ্বিক স্বার্থ যুক্ত।

২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশকে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তাই ডিউ ডিলিজেন্স আইনকে আলাদা হিসেবে দেখা ঠিক হবে না বলে সতর্ক করেন চার্লস হোয়াইটলি। বলেন, এ–সম্পর্কিত প্রায় ৩২টি কনভেনশন রয়েছে। বাংলাদেশকে এগুলো শুধু অনুসমর্থন নয়, বরং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

মূল বক্তব্যে বার্নড স্প্যানিয়ার বলেন, ‘স্থানীয় দুর্বল নিয়ম ও কম দামে ক্রয়াদেশ নেওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ খাতে অনেকেই নিয়মকানুন মেনে চলেন না। আমরা বাংলাদেশে রানা প্লাজাধসের ঘটনা এবং করোনার সময় কিছু ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের অদায়িত্বশীল আচরণ দেখেছি।

তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছায় নিয়মকানুন মানছে না। এ জন্য সরবরাহ খাতে সুশাসন থাকা প্রয়োজন। এই বাস্তবতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কিছু আবশ্যক পালনীয় আইন বাস্তবায়ন করছে।’

বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু বিধিবিধান পাস হয়েছে। আইনগুলো সার্বজনীন ও বৈশ্বিকভাবে পালনযোগ্য হওয়া উচিত।

ফারুক হাসান আরও বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে টেকসই ও নৈতিক চর্চা পালন করা হচ্ছে। তবে এটি একক কোনো কাজ নয়। ক্রেতা–বিক্রেতা উভয়ের সমর্থন প্রয়োজন। ক্রেতাদের মধ্যে পণ্যের কম দাম দেওয়ার জন্য এক ধরনের অনানুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতা রয়েছে। ব্যবসা ক্ষেত্রে এ ধরনের অসদাচরণ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ডিউ ডিলিজেন্স বাধ্যবাধকতা দুভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথমত, মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে ভুক্তভোগী যে কেউ নির্দিষ্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় আদালতে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন। দ্বিতীয়ত, ইইউর তদারককারী কর্তৃপক্ষগুলো নিজেরাই পর্যবেক্ষণ করবে যে সরবরাহ শৃঙ্খলে কেউ নিয়ম ভাঙছে কি না। যথাযথভাবে নিয়ম না মানলে ইইউ কর্তৃপক্ষ যেকোনো নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, যার আর্থিক মূল্য ওই কোম্পানির বৈশ্বিক আয়ের ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

তবে বর্তমান আর্থিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের উৎপাদকদের পক্ষে এত ধরনের পরিপালন মেনে চলার বাস্তবতা নেই বলে জানান আইবিএফবি সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে সামাজিক ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স একেক অঞ্চলে একেক রকম। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমরা সবচেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি করছি, অথচ আমাদের ওপর একের পর এক নিয়মকানুনের বোঝা চাপানো হচ্ছে। বর্তমান বৈশ্বিক আইনগুলো প্রয়োজনীয় সংশোধন করে একক ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।’

সব অঞ্চলের জন্য একক নিয়ম চেয়েছেন অন্য ব্যবসায়ী নেতারাও। এ ব্যাপারে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দাম নিয়ে সব সময়ই আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। ক্রেতা দেশগুলোর বিভিন্ন আইনের পরিপালনের লক্ষ্যে কয়েক ধরনের অডিট পদ্ধতি মেনে চলতে হয় উৎপাদকদের। এতে ব্যবসার সময় ও খরচ অনেক বেড়ে যায়। এসব অডিট পদ্ধতিকে একত্রীকরণ করা প্রয়োজন।’

বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, সব কমপ্লায়েন্স মানার শর্ত দিলে, এই ভারী বোঝা বহনের শক্তিও আমাদের দিতে হবে। অর্থাৎ পণ্যের ন্যায্যমূল্য দিতে হবে।’

এ বিষয়ে ডেপুটি হেড অব ইইউ মিশন বার্নড স্প্যানিয়ার বলেন, ‘দাম নির্ধারণ হচ্ছে ক্রেতা–বিক্রেতার মধ্যে নেগোসিয়েশনের বিষয়। এ বিষয়ে ইইউ কাউকে বাধ্য করতে পারে না বলে জানান তিনি।

ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ পেল ওয়ালটন

আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ আইএমএফের

তাপপ্রবাহ: ২ হাজার শ্রমজীবীকে সোনালী ব্যাংকের ছাতা উপহার

রংপুরে জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স অ্যাওয়ার্ড পেল ইসলামী ব্যাংক

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উপশাখাসমূহের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আরও ৪ বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হলেন শিবলী রুবাইয়াত

অতি গরমে কী ক্ষতি হচ্ছে আম ধান পোল্ট্রিতে, কতটা প্রস্তুত কৃষি খাত

ন্যাশনাল ব্যাংকের ২০২৩ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদিত

বিআরটিএর অভিযান, ৩৯৮ মামলায় ৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা জরিমানা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :