৩৪ বছর ধরে নেই নির্বাচন, চাকসুর অচলাবস্থা কাটবে কবে!

চবি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩৩| আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৪
অ- অ+

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। পাহাড়-প্রকৃতি আর পাখির অভয়ারণ্য ঘেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠা করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু)। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয় এ ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পার হয়ে গেছে ৫৮ বছর। এখন পর্যন্ত মাত্র ৬ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন।

সর্বশেষ ১৯৯০ সালে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর কেটে গেছে আরও ৩৪ বছর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা, শিক্ষার মান, অধিকার আদায়ে নেতৃত্ব প্রদান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চা এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে জাতীয় জীবনে ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অবদান রাখতে সক্ষম ব্যক্তিত্ব তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে অন্যান্য সংগঠনের নির্বাচন আয়োজন করলেও চাকসু নির্বাচনে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং নানা অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা।

চাকসু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এবং ছাত্রসংগঠনের নেতাদের মাঝেও হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ছাত্রসংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীদের অধিকারগুলো যথাযথভাবে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর ও আদায় করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী হাসিবুর রহমান তুর্জয় বলেন, চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার সুযোগ পাচ্ছি না। এছাড়া নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। চাকসু নির্বাচন হলে আমরা আমাদের প্রতিনিধি বাছাই করতে পারতাম, যারা আমাদের সমস্যাগুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে পারতো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সারওয়ার মাহমুদ বলেন, চাকসু না থাকায় আমরা আমাদের অধিকারগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে পারছি না। শাটলে বগি স্বল্পতা, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা তুলে ধরার মতো কোনো প্রতিনিধি না থাকায় প্রশাসনের কাছে আমাদের কথাগুলো বলতে পারছি না।

চবি ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি সাদাফ খান বলেন, দ্রুত চাকসু গঠন জরুরি। উপাচার্য চাইলেই নির্বাচন দিতেন পারেন। আমরা আশা করি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পাব। আমরা জোরালোভাবে চাকসু গঠনের পক্ষে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব সোপান বলেন, ছাত্রলীগ সবসময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে। আমরা সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম। আমি মনে করি ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়মিত হলে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসতো। যারা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু কন্যার সারথি হতো।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি প্রত্যয় নাফাক বলেন, আমরা অনেক বার প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি চাকসু নির্বাচনের জন্য কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা হতাশ। চাকসুসহ সকল ছাত্র সংগঠনের নির্বাচনগুলো দেওয়ার জন্য আমরা বারবার বলেছি। এ নির্বাচনগুলো না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় করা যাচ্ছে না।

চাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, চাকসু নির্বাচন নিয়ে আমরাই সবচেয়ে বেশি সরব ছিলাম। তৎকালীন প্রশাসনের কাছে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি, মানববন্ধন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনের উদ্যোগও নিয়েছিল কিন্তু ওনারা পরবর্তীতে আর চাকসু গঠনের কোনো পদক্ষেপ নেননি। আমরা আশা করি শিক্ষার্থীদের এই প্রাণের দাবি অতি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি চাকসু গঠন। তবে অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো আমাদের এ দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার অগ্রাহ্য করেছে। আমি আশা করি সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও ভিসি মহোদয়ের উদ্যোগে এই ছাত্রসংসদ আবার গঠিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চাকসু মূলত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলে তাদের সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরতে পারতো। এখান থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিতে পারে এমন ব্যক্তিত্ব তৈরি হতো।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী ঢাকা টাইমসকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আমি মনে করি নিয়মিত চাকসু নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক যে কোনো দাবি আদায়ে আমি এবং শিক্ষক সমিতি পাশে আছি।

চাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, এটা একমাত্র উপাচার্য মহোদয়ের এখতিয়ার, আমি এই বিষয়টা ভেবে দেখতে বলেছি। চাকসু হওয়া প্রয়োজন। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম চাকসু উপভোগ করেছি।

তবে এ ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারকে একাধিকবার কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা