বগুড়ায় ১৩ হাজার টাকা জন্য ক্লিনিকে চারদিন ধরে আটকা প্রসূতি

বগুড়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩৪

বগুড়ায় সিজার অপারেশনের পর নবজাতকের মৃত্যুর পর ১৩ হাজার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় চারদিন ধরে প্রসূতি নারীকে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে সোনাতলা উপজেলার সৈয়দ আহমেদ কলেজ এলাকায় সোনালী হাসি কমিউটিনিটি হসপিটাল এন্ড ফাতেমা ডায়াগনস্টিকে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ওই প্রসূতিকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়।

ওই প্রসূতির নাম জাকিয়া। তিনি আদমদীঘির আলতাফনগর এলাকার নূর আলমের স্ত্রী। তিনি পেশায় ভ্যানচালক। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কিছুদিন পর থেকে জাকিয়া বাবার বাড়ি সোনাতলার বালুয়াহাট ইউনিয়নের দিঘলকান্দিতে অবস্থান করছিলেন।

জাকিয়া ও নূর আলম এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, গত ২৮ জানুয়ারি প্রসব বেদনা নিয়ে জাকিয়াকে সোনালী হাসি কমিউটিনিটি হসপিটাল এন্ড ফাতেমা ডায়াগনস্টিকে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকালে তার সিজার অপারেশন করা হয়। সিজার অপারেশন করেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার শরিফুল ইসলাম শাতিল। এনেসথেসিয়ার চিকিৎসক ছিলেন ডা. কামরুল আহসান। সিজার অপারেশনের পর নবজাতকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হতে থাকে। পরে এই হসপিটাল থেকে নবজাতককে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) পাঠানো হয়। শজিমেকে আসার পর চিকিৎসক ওই নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পরের দিন থেকেই জাকিয়ার স্বামী নুর আলম বলেন, বাচ্চা মারা যাওয়ার পর আমি বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার আলতাফনগরে চলে এসেছিলাম তাকে দাফনের জন্য। আমি দিনমজুর। মোবাইল বিক্রি করে ২ হাজার টাকা হাসপাতালে দিয়েছি। ঘটনার পরের দিন ইমরান আমাকে কল দিয়ে টাকার ১৩ হাজার টাকার জন্য চাপ দেয়। এই টাকা না দিলে পুলিশ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। টাকা দিতে না পারায় এখনো তারা আমার স্ত্রীকে আটকে রেখেছে। অথচ তাদের অবহেলার কারণে আমার বাচ্চা মারা গেছে।

অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রসূতির অপারেশনের দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম শাতিল বলেন, রোগীর অবস্থা খুব সিরিয়াস ছিল। হাসপাতালের পক্ষ থেকে মোবাইলে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে অপারেশন করি। আমি শুনেছি অপারেশনের একদিন পরে বাচ্চা মারা গেছে।

ভ্যানচালক নূর আলমের স্ত্রী জাকিয়া বলেন, সিজার অপারেশনের জন্য হাসপাতালে গেলে তাদের সাথে প্রথমে ৮ হাজার মৌখিক চুক্তি হয়। কিন্তু আমার বাচ্চা মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল আমাদের কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করছে। এতো টাকা আমাদের কাছে নেই। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গত চারদিন ধরে আমাদের হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছে।

জাকিয়াকে আটকে রাখার কথা স্বীকার করেন হাসপাতালের পরিচালক দাবি করা হুমায়ন কবির ইমরান বলেন, তাদের মোট বিল হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু তারা মাত্র ২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। এই কারণে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য এখানে রাখা হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে. সোনাতলা সৈয়দ আহমেদ কলেজ এলাকার সোনালী হাসি কমিউটিনিটি হসপিটাল এন্ড ফাতেমা ডায়াগনস্টিক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সোনালী হাসি কমিউটিনিটি হসপিটালের নিবন্ধন আছে আবদুল আলীমের নামে। আর ফাতেমা ডায়াগনস্টিকের নিবন্ধন রয়েছে ফাতেমা জিন্নাহ নামের একজনের নামে।

জাকিয়ার বাবা মিজানুর রহমান জানান, সোনালী হাসি কমিউটিনিটি হসপিটাল এন্ড ফাতেমা ডায়াগনস্টিকে রাত ৯টা পর্যন্ত আটকা ছিল তার মেয়ে। সবশেষ হাসপাতালের পক্ষ থেকে রাত ৮টার দিকে আমার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু এই টাকা দেওয়ারও সঙ্গতি ছিল না আমার। পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসার পর রাত ৯ টার দিকে জাকিয়াকে হাসপাতাল থেকে মুক্তি দেয়।

সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আসফার সায়মা জানান, এই বিষয়টি রাত ৮টার দিকে শুনেছি। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা।

(ঢাকা টাইমস/০২ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :