জড়িত ৭ ব্যাংক ও কিছু মানি এক্সচেঞ্জ

শাহজালাল থেকেই প্রতিদিন পাচার হচ্ছে শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:১৬ | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:২১

প্রবাসীদের আয় বাড়লেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। আবার প্রবাসীরাও দেশে বৈদেশিক মুদ্রা সরবারহ করছেন। তা হলে প্রবাসীদের আয়ের বৈদেশিক মুদ্রাগুলো যাচ্ছে কোথায়। কেনই বা বিদেশি মুদ্রার কেন্দ্রীয় রিজার্ভে এসব মুদ্রা যুক্ত হচ্ছে না, কেন দেশে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি বা সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে— এমন প্রশ্ন এখন বিভিন্ন মহলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকে বসেই অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় ও মানিলন্ডারিং করছে একটি চক্র। এ কাজের সঙ্গে সরাসরি সরকারি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারাও জড়িত। খোদ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মুদ্রা পাচারকারী শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই বিদেশ থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রা কালোবাজারি হচ্ছে। আর এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক মানি একক্সেঞ্জ কোম্পানি।

প্রতিদিন এই বিমান বন্দর হয়ে হাজার হাজার প্রবাসী কর্মজীবী বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণকারীগণ দেশে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা তাদের সঙ্গে আনা বিদেশি মুদ্রাগুলো বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ মানি এক্সচেঞ্জারে বাংলাদেশি টাকায় এনকেশমেন্ট করে থাকেন। আইন, বিধি নিয়ম অনুযায়ী ফরেন কারেন্সি এনকেশমেন্ট ভাউচার এনকেশমেন্টকারীকে দিতে হয়। কিন্তু অসাধু ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জারগণ কোনো কোনো সময় ভাউচার দেন না, আবার অনেক সময় জাল ভাউচার দিয়ে সরাসরি ফরেন কারেন্সি গ্রহণ করে তার বিনিময়ে টাকা দিয়ে থাকেন। এছাড়াও তারা স্বাক্ষরবিহীন, ভুয়া ভাউচার (এনকেশমেন্ট ¯স্লিপ) প্রদান করে থাকে বলে জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি মুদ্রা ক্রয়কারী বেশকিছু ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান তাদের মূল হিসাবে (প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত একাউন্টে) অন্তর্ভুক্ত করেন না। ফলে বিদেশি মুদ্রার কেন্দ্রীয় রিজার্ভে এসব বিদেশি মুদ্রা যুক্ত হয় না, যার ফলে বাংলাদেশে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি বা সংকটের সৃষ্টি হয়।

প্রবাসী ওয়েজ ওনার্স বিমানের যাত্রীগণ ঢাকাস্থ হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে মূল্যবান যে রেমিটেন্স নগদ বৈদেশিক মুদ্রায় আনয়ন করেন তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু অসাধু ব্যাংকারগণ ব্যাংকের টাকা ব্যবহার করে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে সংগৃহীত না দেখিয়ে নিজেরাই ক্রয়পূর্বক মার্কেটে বিক্রয় করে দেন এবং পরবর্তীতে মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আবার বিদেশে পাচার হয়ে যায়। এভাবেই দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। আর দেশে দেখা দিচ্ছে রিজার্ভ সংকট।

এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে এই অসাধু চক্রের সন্ধান পেয়েছে দুদক কর্মকর্তারা। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে বিমানবন্দরে। অভিযানে বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জারগণের একটি সংঘটিত চক্রের সন্ধান পায় তারা।

দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযানকালে ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জার কর্তৃক এনকেশমেন্ট ¯স্লিপ ব্যতীত ফরেন করেন্সি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ, একাধিক ভুয়া ভাউচার স্বাক্ষরবিহীন ভাউচার সংগ্রহ করেছে। এছাড়া অবৈধভাবে ফরেন কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয়, পাচার কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ অভিযান পরিচালনাকারী টীম সংগ্রহ করেছে।

সূত্রে জানা গেছে, দুদকের অভিযানে বিমান বন্দরে অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রায় ক্রয়-বিক্রয়ে মানিলন্ডারিংয়ে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক এবং কিছু মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার মিমি মানি এক্সচেঞ্জার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। সেই ক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্ত তথ্য মতে প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হচ্ছে।

অপরাধে জড়িতরা অবৈধভাবে ক্রয়কৃত ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার অন্যান্য ফরেন কারেন্সি সংগ্রহ করে বিদেশি মুদ্রাপাচারকারী, বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মানিলন্ডারিং এর মাধ্যমে অর্থপাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অবৈধভাবে সরবরাহ করে বলেও প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

বিমান বিন্দরের অভ্যন্তরের জনতা, সোনালী, অগ্রণী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পুবালি, প্রবাসী কল্যাণ, যমুনা ব্যাংক কয়েকটি মানি একক্সেঞ্জ প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন ১শ কোটি টাকার বেশি বিদেশি মূদ্রা অবৈধভাবে ক্রয় বিক্রয় মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, বিমান বিন্দরের অভ্যন্তরের জনতা, সোনালী, অগ্রণী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পুবালি, প্রবাসী কল্যাণ, যমুনা ব্যাংকসহ কয়েকটি মানি একক্সেঞ্জ প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন ১শ কোটি টাকার বেশি বিদেশি মূদ্রা অবৈধভাবে ক্রয় বিক্রয় মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের এক কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, মানি লন্ডালিংয়ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তারা কমিশনের কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রয়েছেন। তাদের মদদদাতা সহযোগীদের বিষয়েও কমিশনের নির্দেশে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিষয়ে কমিশন আইন বিধি অনুযায়ী পরবর্তী আইনি ব্যব্যস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকা টাইমস/৬ফেব্রুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

নারী সহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক, ফেঁসে গেলেন এসপি মোক্তার

জাবি ছাত্রী হেনস্তাকারী সেই বাস হেল্পার আটক

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ‘প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী’ গ্রেপ্তার

সাবেক এমপি পাপুলের শ্যালিকা জেসমিনের নামে দুদকের মামলা

পরিবহনে চাঁদাবাজি-ছিনতাই, গ্রেপ্তার ১১

নকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরি: ১১ প্রতিষ্ঠানকে ৪৮ লাখ টাকা জরিমানা

উখিয়ায় আরসার আস্তানা থেকে বিপুল অস্ত্র গ্রেনেড ও রকেট শেল উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২

৪ কোটি টাকা দুর্নীতি, এলজিইডির সাবেক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ২ সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

জঙ্গি সংগঠনে জনবল দিতেন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা, ডিবির হাতে ধরা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :