মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষে ঝুঁকি নিয়ে চলছে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ

কক্সবাজার প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:৪২ | প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৪৩
কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌ রুটে চলাচল করছে পর্যটকবাহী জাহাজ।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক জান্তার সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির সংঘর্ষের তীব্রতা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। এ সংঘর্ষের কারণে সে দেশের ছোঁড়া মর্টারশেল, বোমা ও গুলি এসে পড়ছে বাংলাদেশের বান্দরবানের ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত ও উখিয়ার থাইংখালী-পালংখালী সীমান্ত এলাকায়। এসব ঘটনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন। আহত ও নানা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন অনেকে। মঙ্গলবার একদিনেই আহত হয়েছেন ৪ জন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাপন। আতঙ্কের মধ্যেই দিন-রাত থাকতে হচ্ছে সীমান্ত এলাকার মানুষদের।

তবে এমন পরিস্থিতিতেও থেমে নেই কক্সবাজার-টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক নিয়ে দ্বীপটিতে যাচ্ছে ১০-১২টি জাহাজ। তাও মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষে।

স্থানীয়দের মতে, মিয়ানমারের উত্তেজনা পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত পর্যটকবাহী জাহাজগুলো বন্ধ রাখা প্রয়োজন। কারণ টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া জাহাজ ঘাট হতে সেন্টমার্টিন নৌ-রুটের দূরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার। ওই ৪২ কিলোমিটার নৌ-রুট একেবারে মিয়ানমারের সীমান্তঘেঁষা। মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ছোড়া বুলেট বা মর্টার শেল পর্যটকবাহী জাহাজের মধ্যে এসে পড়লে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, টেকনাফ সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে, বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণে সীমানা পেরিয়ে গুলি আর মর্টার সেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। তারপরও সেন্টমার্টিনে নিয়মিত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। অতিদ্রুত ঝুঁকি নিয়ে সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করা জাহাজ বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।

কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার লুৎফর লাহিল মাজেদ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া আমি কিছু বলতে পারবো না। তারা যে আদেশ দেন সেটা আমরা পালন করি। তবে আমাদের নিয়মিত টহল আরও জোরদার করা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তিনি সকলকে সচেতনতার সঙ্গে চলাচল করতে অনুরোধ করেছেন।

গত ২৭ জানুয়ারি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির একপর্যায়ে অনেক মর্টারশেল ও বুলেট কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পতিত হয় বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে। এতে স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তের পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখার জন্য কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) অধীন উখিয়ার পালংখালী বিওপি এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বিওপি ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা এবং টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধীন হোয়াইক্যং বিওপি ও তৎসংলগ্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে আসেন। এসময় বিজিবি সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেন তিনি।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদা তৎপর রয়েছে।’ আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।

বুধবার বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের আওতাধীন বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

মিয়ানমার সীমান্তে চলমান উত্তেজনার কারণে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার সুপারিশও করেছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুল জামান সিদ্দিকী। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ সুপারিশ করেন।

(ঢাকাটাইমস ডেস্ক/০৭ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :