ব্রিজ আছে রাস্তা নেই, ভোগান্তির শিকার মানুষ

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি ব্রিজের দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো কাজেই আসছে না ‘আটিয়া বাড়ি’ব্রিজটি। ফলে দুই বছর ধরে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন হাজীপুর ও একলাশপুর ইউনিয়ন এবং চৌমুহনী পৌরসভার কয়েক লাখ বাসিন্দা।
শুধু ব্রিজ নয় ব্রিজের দুই পাশে যে সংযোগ সড়ক হওয়ার কথা তারও কাজ আটকে আছে গত এক বছর ধরে। গত বছরের ডিসেম্বরে ১৮দশমিক ২০ কিলোমিটারের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম হাজী কামাল উদ্দীন সড়কটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে তা এখনও শেষ করতে পারেনি সড়ক বিভাগ।
কর্তৃপক্ষ বলছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়কটির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হলে ব্রিজটিও চালু হয়ে যাবে।
জানা গেছে, ২০২০ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ২৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করা হয় কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ফলাহারি থেকে বেগমগঞ্জের গ্লোব ফ্যাক্টরি পর্যন্ত ১৮ দশমিক ২০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ ও রেল লাইন ওভারপাসসহ নানা জটিলতায় ২০২৪ সালে এসেও কাজ শেষ করতে পারেনি সড়ক বিভাগ। অথচ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। গত তিন বছরে ১৪ কিলোমিটার কাজ শেষ হলেও আটকে আছে বাকি অংশের কাজ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়ন হয়ে একলাশপুর পার হয়ে চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুরের দিকে মানুষের যাতায়াত ও গাড়ি চলাচলের জন্য নোয়াখালী খালের ওপর ৪৮মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০.২৫মিটার প্রস্থের একটি ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭.৮৯ কোটি টাকা। মূল সড়ক থেকে ব্রিজটির উচ্চতা অনেক বেশি। খালের ওপর ব্রিজটি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকলেও এটির উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ায় এবং দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেখানে উঠতে পারেন না কেউ।
স্থানীয়রা বলছেন, যেটুকু কাজ হয়েছে তাতেও নানা অনিয়ম করা হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এলাকা হলো নরোত্তমপুর ইউনিয়নের সোন্দলপুর চৌরাস্তা থেকে করমবক্স বাজার, কালামিয়ার পোল, পাক মুন্সিরহাট ও হাজিরপুর এলাকা।
স্থানীয়রা জানান, পাশ দিয়ে যাওয়া রেললাইনের ওপর দিয়ে সড়কটি যাবে এমন পরিকল্পনা করে উঁচু করে ব্রিজটি তৈরি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সড়ক বিভাগ আবার ওই সড়কটি রেললাইনের নিচ দিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
এছাড়াও সড়ক উন্নতি করতে মানুষের যে ভূমি ব্যবহার হয়েছে তার টাকা এখনও পরিশোধ করা হয়নি। ভূমি অধিগ্রহণ, মানুষের ভূমির মূল্য পরিশোধসহ বিভিন্ন কারণে সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ায় নোয়াখালী খালের ওপর নির্মিত আটিয়া বাড়ি ব্রিজটিও জনসাধারণের কোনো উপকারে আসছে না। ব্রিজটির দুপাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।
স্থানীয়দের মতে, ব্রিজটির দুই পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হলে ব্রিজটি জনগণের চলাচলের উপযোগী হবে। এর ফলে চৌমুহনীর যানজট অনেকটা নিরসন হবে। বাইপাস সড়কে কমবে মানুষের দুর্ভোগ। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সড়কটির কাজ শেষ করে আটিয়া বাড়ির ব্রিজটির ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল চালু হলে চৌমুহনীর যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে বলে জানান তারা।
নরোত্তমপুর ইউনিয়নের করমবক্স বাজার এলাকার নূর নবী বলেন, সুন্দলপুর চৌরাস্তা থেকে এ সড়কটি বৃদ্ধিকরণের কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু যেখান থেকে শুরু সেখানেই নির্ধারিত ১৮ফুট চওড়া রাস্তা করা হয়নি। সুন্দলপুর চৌরাস্তা থেকে করমবক্স বাজার পর্যন্ত বেশির ভাগ অংশেই ১৫/১৬ ফুট চওড়া করা হয়েছে সড়কটি। এছাড়াও সড়কটি যেভাবে সোজা হয়ে যাওয়ার কথা তাও করা হয়নি বলে জানান তিনি।
কালামিয়ার পোল এলাকার জহির উদ্দিন বলেন, কালামিয়ার পোল থেকে পাক মুন্সিরহাট যাওয়ার পথে পোল সংলগ্ন যে কালভার্টটি করা হয়েছে সেটিও সড়ক মূল সড়ক থেকে অনেকটা বাহিরে। ফলে দিনের বেলা যানবাহন চলচল করতে পারলেও রাতে এখানে দুর্ঘটনা ঘটে।
চৌমুহনী আটিয়াবাড়ি পুল এলাকার বাসিন্দা মোমিন মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার অনেক মানুষ সড়কের জন্য নিজেদের জমি দিয়েছে। কিন্তু এখনও তারা যে টাকা পাওয়ার কথা তা পায়নি। যার জন্য অনেকেই সড়কের কাজ করতে বাধা দেওয়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে।
সড়ক বৃদ্ধি করণের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এ বি কনস্ট্রাকশনের প্রতিনিধি জাফর ইকবাল রুপক বলেন, সড়কের বেশির ভাগ কাজই ইতোমধ্যে আমরা শেষ করেছি। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে কিছু কিছু জায়গা নির্দিষ্ট ১৮ফুট সড়ক করা সম্ভব হয়নি। কর্তৃপক্ষ ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করলে আমরা আবার নতুন করে যে অংশগুলোতে কাজ কম হয়েছে সেটি পুনরায় করবো।
এক প্রশ্নে জবাবে রুপক বলেন, কাজের গুণগতমান ঠিক রেখেই অবশিষ্ট অংশের কাজ করা হবে। এছাড়া যে অংশের কাজ শেষ হয়েছে সেটির কোথাও সমস্যা হলে তাও ঠিক করে একসাথে কাজ শেষ করা হবে।
সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, এ সড়কটি ১২ ফুট থেকে ১৮ফুট বৃদ্ধি করণের কাজ শুরু করা হয়েছিলো। ১৮ দশমিক ২০ কিলোমিটার সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ২৫টি বক্স কালভার্ট ও ১টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে কিছু অংশে ১৮ ফুটের কম-বেশি হয়েছে। প্রায় ৪ কিলোমিটারের মতো কাজ এখনও বাকি আছে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে স্থাপনাগুলো সরিয়ে সড়কটি ১৮ফুট করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ১৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত বছর (২০২৩ সালের) ২৯ অক্টোবর ও ৬ ডিসেম্বর ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে ৭ ধারায় নোটিশ করা হয়েছে, যেখানে কিছু আপত্তি ছিল। সেই আপত্তিগুলোর শুনানি আগামী সপ্তাহে হওয়ার
সম্ভবনা রয়েছে। আপত্তির শুনানি শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে ৮ধারায় নোটিশ হওয়ার পর ভূমি মালিকদের তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসকের রাজস্ব বিভাগ থেকে এ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
নোয়াখালী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বলেন, সড়ক কাজের শুরু থেকে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সড়কটির কাজে বেগ পেতে হয়েছে। আর সড়কের কাজ শেষ না করতে পারায় আটিয়া বাড়ি ব্রিজটিও চালু করা যায়নি। তবে সব সমস্যা সমাধান করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কের কাজ ও ব্রিজটি চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
কর্মকর্তার।
(ঢাকাটাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

মন্তব্য করুন