মেধার জোরেই মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেন কৃষকের মেয়ে যূথী
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৩১৫৪তম হয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন শরীয়তপুর সখিপুরের কৃষক পরিবারের সন্তান উম্মে হানী যূথী।
এক ঘণ্টা সময়ের ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় যূথী পেয়েছেন ৭০ দশমিক ৫০। তার মেরিট স্কোর ২৭০ দশমিক ৫০। তার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল তেজগাঁও কলেজ।
উম্মে হানী যূথী সাধারণ এক কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষক বাবাসহ পরিবারের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে যূথি মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নিজের চেষ্টা, পরিবারের সদস্যদসহ শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থী নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বেড়ে উঠা উম্মে হানী যূথি শিক্ষাজীবনের পথ চলাকে। অদম্য সেই যূথী এবার ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
উম্মে হানী যূথী শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার চরকুমারীয়া ইউনিয়নের লালু বেপারী কান্দি গ্রামের এক অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান। বাবা মো. হাবিব মালত পেশায় একজন সাধারণ কৃষক ও মা হাফেজা বেগম গৃহিণী। ৩ বোন ২ ভাইয়ের মধ্যে উম্মে হানী যূথী দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অদম্য মেধাবী ছিলেন।
যূথি চরকুমারীয়া ইউনিয়নের ৩৭ নং খাস গাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৪.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর চরকুমারীয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৮৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।২০২১ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন।পরে লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ভর্তি হয়ে ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পান তিনি। এ ছাড়া উম্মে হানী যূথি শিক্ষাজীবনে বৃত্তিসহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন।
এদিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা থেকে ফরিদপুর মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী উম্মে হানী যূথী পরিবার, তার নিজ গ্রামসহ উপজেলার সখিপুর থানায় বইছে আনন্দের বন্যা। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপজেলার একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে উম্মে হানী যূথী চান্স পাওয়ায় পুরো উপজেলার মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাকে।
উম্মে হানী যূথী বলেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চান্স পাওয়ায় প্রথমেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যাতে একজন আদর্শবান ডাক্তার হয়ে নিজ গ্রামসহ আমাদের উপজেলার দরিদ্র-অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
উম্মে হানী যূথী আরও বলেন, আমি সাধারণ কৃষক পরিবারের একজন সন্তান হওয়ায় নিজে লেখাপড়ার পাশাপাশি মাঠে বাবার কৃষি কাজেও সহযোগিতা করতাম। আমার এই ভালো ফলাফলের পেছনে মা-বাবা ও শিক্ষকদের অবদান অপরিসীম।
মেয়ের এই সাফল্যে আনন্দে কেঁদেই ফেলেন যূথীর মা-বাবা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মেয়ের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন। আমাদের ছেলে যাতে ভালো ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।
উম্মে হানী যূথী বড় বোন উম্মে হাবিবা বলেন, ছোটবেলা থেকেই যূথী লেখাপড়ায় ছিল অদম্য মেধাবী। অবশেষে আমাদের পরিবারের সবার প্রচেষ্টা, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও সর্বোপরি যূথী নিজ প্রচেষ্টায় সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।
চরকুমারীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, উম্মে হানী যূথি খুবই মেধাবী ছাত্রী। সে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। আমাদের স্কুলের ছাত্রী এটা সত্যিই গর্বের। ছাত্র-ছাত্রীরা কর্ম জীবনে ভালো করলে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম হয় তেমনি শিক্ষকদেরও সুনাম হয়। উম্মে হানী যূথির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি। আশা করছি আমাদের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আরও উম্মে হানী যূথি তৈরি হোক।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চান্স পাওয়ায় উম্মে হানী যূথিকে অভিনন্দন জানিয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, যূথি তার লালিত স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে একজন গর্বিত ডাক্তার হয়ে যেন দেশের সাধারণ মানুষের সেবা করতে পারেন সেই প্রত্যাশা রাখছি।
(ঢাকাটাইমস/১৭ফেব্রুয়ারি/এআর)