জৌলুস হারাচ্ছে বইমেলার ‘লিটল ম্যাগ চত্বর’

তরুণ লেখক তৈরির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত লিটল ম্যাগ চত্বর ক্রমেই যেন তার জৌলুস হারাচ্ছে। এবারের বইমেলায় লিটল ম্যাগ চত্বরে ১৩৩টি স্টল বরাদ্দ পেলেও অধিকাংশ স্টল এখনো চালুই হয়নি৷
কঠোর আন্দোলনের পর ২০০৬ সাল থেকে বইমেলায় সংযোজিত হয় লিটল ম্যাগ কর্ণার। বাংলা একাডেমি থেকে বেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসার আগেই দাবি ওঠে লিটল ম্যাগ চত্বরের পরিসর বাড়ানোর। সেই দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে লিটল ম্যাগ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু জায়গা পরিবর্তন করেও যেন পুরোনো জৌলুস ফিরে পাচ্ছে না লেখক তৈরির আঁতুড়ঘর খ্যাত এই চত্বর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলা প্রাঙ্গণের মুক্তমঞ্চের পাশে এবারের লিটলম্যাগ চত্বরকে স্থান দেয়া হয়েছে। বাঁশের খুঁটি গেড়ে ছোট ছোট স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে। অধিকাংশ স্টলে নতুন কোনো লিটলম্যাগ আসেনি। অনেক স্টলে শুধু ব্যানার ঝুলছে, নেই পাঠকের উপস্থিতি। বরাদ্দকৃত স্টলের মধ্যে প্রায় অর্ধেক স্টল খোলাই হয়নি। যারা খুলেছেন তাদের অনেকেই স্টল খোলা রেখে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যারা বসে আছেন তারা নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন কিংবা মোবাইল টিপছেন। কেউ কেউ আবার ঘুমিয়েও পড়েছেন। কয়েক বছর ধরে বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বর নিয়ে আয়োজকদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এর জৌলুস ক্রমাগত হারাচ্ছে বলে মনে করেন লিটলম্যাগ সম্পাদকরা।
লিটলম্যাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন মানুষ আর আগের মত লিটলম্যাগ পড়ে না। আজ থেকে ৫-১০ বছর আগেও যেভাবে মানুষ আসতো এখন তা কমে গেছে। একসময় ম্যাগাজিনের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সময়ের আবর্তনে সে চিত্র বদলে গেছে অনেকখানি। লিটল ম্যাগ চত্বর যেমন এখন আর বহেড়াতলায় নেই, তেমন লিটল ম্যাগকে ঘিরে আগের মতো সেই উন্মাদনাও আর নেই।
লিটল ম্যাগাজিন সাফল্য’র এক বিক্রয়কর্মী ঢাকা টাইমসকে বলেন, গতবছরও আমি বিক্রয়কর্মী হিসেবে এই চত্বরে কাজ করেছি। গত বইমেলার মতো এবছরও বিক্রি তেমন নেই বললেই চলে। দিনে খুব বেশি হলে ১/২ টা ম্যাগাজিন বিক্রি হয়। এভাবেই চলতে থাকলে একসময়ের আলোড়ন সৃষ্টিকারী লিটল ম্যাগ হয়ত হারিয়ে যাবে।
সাভার থেকে বইমেলায় আসা তুষার জুয়েল নামের এক পাঠক ঢাকা টাইমসকে বলেন, লিটল ম্যাগ চত্বর আমার সবসময়ই পছন্দের ছিল। আগে মেলায় এলেই দেখতাম লিটল ম্যাগ বেশ জমজমাট। কিন্তু এখন শুধু পাঠকই নেই তা নয় বরং ম্যাগাজিনই নেই মেলাতে। দেখুন একটিও ভালো মানের ম্যাগাজিন খুঁজে পাবেন না। বেশিরভাগ স্টলই ফাঁকা পড়ে আছে। এমন থাকলে মানুষইবা কেন আসবে?
ইকবাল হাসান নামে আরেক পাঠক জানান, বর্তমানে এই চত্বর ঘিরে পাঠকের আগ্রহ কম; কারণ একসময় এখানে সমাজের প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে যেসব ম্যাগ প্রকাশ পেতো, রাজনৈতিক বা সামাজিক কারণে এমন ম্যাগাজিন নেই বললেই চলে। আমরাও চাই আগের মত লিটল ম্যাগ চত্ত্বর তার প্রাণ ফিরে পাক।
(ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/এসএইচ/এসআইএস)

মন্তব্য করুন