শিশু আয়ানের মৃত্যু: তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে লুকোচুরি ইউনাইটেড হাসপাতালের

রাজধানীর বাড্ডায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে এক মাস ১৪ দিন আগে মৃত্যু হওয়া শিশু আয়ানের চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা থাকলেও এখনো তা প্রকাশ করা হয়নি।
গত ৭ জানুয়ারি রাত ১১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর গুলশান-২-এ ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশু আয়ানকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খৎনার জন্য আয়ানকে রাজধানীর ভাটারায় মাদানী এভিনিউতে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা ফুল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করেন আয়ানকে। এরপর জ্ঞান না ফেরায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাড়িতে করেই গুলশান-২ এ ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
প্রথমদিনই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলেন আয়ানের পরিবার। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১ জানুয়ারি ইউনাইটেড হাসপাতাল শিশু আয়ানের চিকিৎসায় চিকিৎকদের গাফলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে লুকোচুরি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইউনাইটেড হাসপাতালের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন চেয়ে গত সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা টাইমস হাসপাতালের গণসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘একটু সময় দেন, আমি দিচ্ছি।’ পুনরায় বৃহস্পতিবার তাকে ফোন দিলে বলেন, ‘দুই মিনিট পরে আমি কল দিচ্ছি’। এরপর পার হয়ে যায় কয়েক ঘণ্টা। পরে তার নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা দিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
এরপর বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে পুনরায় কল দিলে আরিফুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ইন্টারনাল রিপোর্ট আমরা পাবলিকলি প্রকাশ করছি না, কারণ প্রশাসনিক তদন্ত হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হয়েছে, পুলিশ থেকে তদন্ত হচ্ছে এবং হাইকোর্ট থেকেও হচ্ছে। এ জন্য এখন আর আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন পাবলিকলি প্রকাশ করার সুযোগ নেই।’
আরিফুল হক বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।’ তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা বলতে অস্বীকৃতি জানান এই কর্মকর্তা।
শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় ৯ জানুয়ারি বাড্ডা থানায় মামলা করেন শিশুর বাবা মো. শামীম আহমেদ। এ মামলায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ও পরিচালককে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদ সাব্বির আহমেদ, হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. তাসনুবা মাহজাবিন ও হাসপাতালটির ‘পরিচালক’।
এ ঘটনায় ৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাদের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আইওয়াশ (লোক দেখানো) ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় সর্বশেষ হাইকোর্ট নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের এ আদেশ দেন।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. এ বি এম মাকসুদুল আলমকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন এবং ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুর রশীদসহ মোট পাঁচজন। আগামী ২০ মার্চের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
আদালত বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আমাদের মনঃপূত হয়নি। সুনির্দিষ্টভাবে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় কারা দায়ী, তাও ওই প্রতিবেদনে উঠে আসেনি ।’
(ঢাকাটাইমস/২২ফেব্রুয়ারি/টিআই/এআর/কেএম)

মন্তব্য করুন